নিজস্ব ব্র্যান্ড কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

মোঃ হাসান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
বুধবার, ২২ জুন ২০২২ | ১১:১৫ অপরাহ্ণ

বিখ্যাত অ্যাপল ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র ব্যবহার করতে কার না ভালো লাগে! মানুষের চাহিদার উপর নির্ভর করে আমাদের সমাজ গড়ে উঠেছে। একজন মানুষের থাকে বিভিন্ন রকমের চাহিদা। মানুষের এই চাহিদার উপর গুরুত্বারোপ করে উন্নত রাষ্ট্রগুলো নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করছে। নিজস্ব ব্র্যান্ড কতটা গুরুত্বপূর্ণ-এ বিষয়ে আজকের লেখায় তুলে ধরবো।

দিনদিন শিল্প খাতের পরিধি বৃদ্ধির সাথে-সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে নিজস্ব পণ্যের ব্র্যান্ডিং। দেশীয় কোম্পানিগুলো এখন  ব্র্যান্ড তৈরির জন্য বিনিয়োগ করছে, জনবল নিয়োগ দিচ্ছে।

  • “একসময়, বাংলাদেশে বিদেশি পণ্যের আধিপত্য ছিল। এই একচেটিয়া আধিপত্যকে হটিয়ে স্থানীয় ব্র্যান্ড গুলো সে জায়গা দখল করে নিচ্ছে। শুরুতে বাংলাদেশে উদ্যোক্তার সংকট থাকলেও, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে নতুন নতুন উদ্যোক্তার উত্থান দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে।  কৃষি খাত থেকে বেরিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান ঘটেছে।”

আমাদের দেশে শুরুতে স্থানীয় ব্র্যান্ড না থাকার ফলে বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর দাপট দেখতে হয়েছে।  তখন বাজারে পোশাক থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যগুলো ছিল বিদেশি ব্র্যান্ডের।

বর্তমানে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর দাপটে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর আধিপত্য হ্রাস পাচ্ছে। প্রথমে দেশের কিছু ব্র্যান্ড নাবিকো বিস্কুট ও তিব্বত বল সাবান স্বপ্ন দেখিয়েছেন, অনুপ্রাণিত করে গেছেন উদ্যম উদ্যোক্তাদের।

নিজস্ব ব্র্যান্ড কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ওষুধ শিল্প বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটি মার্কেট। বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানিতে বিশ্বের ৪৫ স্থানে। বর্তমানে ১৬০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। ওষুধে বলা চলে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রয়োজনীয় ওষুধের ৯৭ শতাংশ এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। জাতিসংঘের শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো প্রতিবেদনে বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ।

ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পের মধ্যে স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো অন্যতম। এছাড়া ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইনসেপ্টা বড় একটি জায়গা দখল করে আছে। স্থানীয় বাজারে ওষুধের আরো ব্র্যান্ডিং বাড়াতে হবে।

পাদুকা শিল্পে একসময় বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য আমাদের চিন্তিত করে তুলে, বাটা ছিল ভোক্তাদের প্রথম পছন্দ।  বাটার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো দেশে তখনো ব্র্যান্ড তৈরি হয়নি, কিন্তু ১৯৯০ সালে জাপান ও ইতালির জুতা প্রস্তুতকারক হিসেবে যাত্রা শুরু করে অ্যাপেক্স। ২০১০ সালে স্থানীয় বাজারে জন্য পণ্য উৎপাদন করতে থাকে। বাংলাদেশের বাজারে শতাব্দীপ্রাচীন বৈশ্বিক ব্র্যান্ড বাটাকে ছাড়িয়ে যেতে এক দশকও সময় নেয়নি অ্যাপেক্স। পাদুকা শিল্পে আমাদের ব্র্যান্ডগুলোর নিজস্ব ব্র্যান্ডিং অর্থনীতিতে বড় একটি অবদান রাখবে।

ফ্রিজ, টেলিভিশন থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনে স্থানীয় বাজারে ওয়ালটন একটি আস্থার জায়গা হিসেবে গড়ে উঠেছে ভোক্তাদের কাছে।
জনপ্রিয় সিঙ্গার ব্র্যান্ডকে হটিয়ে  রেফ্রিজারেটরের বাজারের ৭২ শতাংশ এখন ওয়ালটনের দখলে। ওয়ালটনের টেলিভিশন আজ ঘরে ঘরে দেখা মেলে।

স্থানীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরো একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড অলিম্পিক। অলিম্পিক ১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে অলিম্পিক বাজারে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মিষ্টান্ন পণ্য থেকে শুরু করে নিত্যদিনের খাবারে অলিম্পিকের পণ্য সবার পছন্দ।

একসময় হিরো এবং ফিনিক্স সাইলেক আমাদের দেশে জনপ্রিয় ছিল কিন্তু দেশীয় ব্র্যান্ড মেঘনা এবং আরএফএল আর্বিভাবের পর ভারতীয় ও চীনের তৈরি সাইকেল জনপ্রিয়তা হারায়। এখন সে জনপ্রিয়তা স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর দখলে।

স্থানীয় ভোক্তাদের কাছে মষলার জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে বহুজাতিক প্রাণ এবং রাঁধুনি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানি। বিশ্ব বিখ্যাত লিপটন ও টেটলির মতো ব্র্যান্ডগুলোকে সরিয়ে,  বাংলাদেশের চা শিল্পে ইস্পাহানি  সবসময়ই শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে।

খাদ্যশ্রেণিতে সেরা ব্র্যান্ড সিটি গ্রুপের তীর। এ ব্র্যান্ডের অধীনে প্রতিষ্ঠানটির ভোজ্যতেল, আটা, ময়দা, সুজি, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। এইছাড়া, সমজাতীয় দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে নুডলসের ব্র্যান্ড কোকোলা, মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা ও নেসলের ম্যাগি।

প্রসাধনের ব্র্যান্ডগুলোর  মধ্যে আছে সানসিল্ক, লাক্স, প্যারাস্যুট, পেপসোডেন্ট ও ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সানসিল্ক । হোমকেয়ার পণ্যে সেরা ব্র্যান্ড রিন, হুইল, ভিম, তিব্বত বল সাবান ও ফাস্ট ওয়াশ। এর মধ্যে সেরা ডিটারজেন্ট ব্র্যান্ড রিন।

২০১৮ সালে স্পেনভিত্তিক ব্র্যান্ড পরিসংখ্যান সংস্থা কান্তার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বাজারে শীর্ষ নয় ব্র্যান্ড ছিল বহুজাতিক ব্র্যান্ড। দশম স্থানটি ছিল তিব্বত বল সাবানের দখলে। ব্র্যান্ডের শক্তি এবং মূল্যের দিক থেকে সব বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের নেতৃত্বে ছিল তিব্বত।

তবে, এখনও বাংলাদেশ কিছু খাতে বিদেশি ব্র্যান্ডের আধিপত্য বিদ্যমান।  এসি, মোবাইল, বাইক বিশাল একটি বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো বাজার দখলে রাখছে। বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে ব্র্যান্ডের উপর জোর দিচ্ছেন। বৈশ্বিক এবং স্থানীয় বাজারে ব্র্যান্ডের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি বিনিয়োগ করছে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে উদ্যোক্তার সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। তরুণদের হাতে ধরে নতুন নতুন চিন্তা, গবেষণা, ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে ব্র্যান্ড। ভবিষ্যতে স্থানীয় বাজারে  নিজস্ব ব্র্যান্ড বৃদ্ধি করতে পারলে স্থানীয় বাজারে একচেটিয়া ভাবে আধিপত্য বিস্তার করবে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। তাই নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরিতে গুরুত্বারোপ করতে হবে।

মোহাম্মদ হাসান
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

প্রিয় পাঠক, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সর্বশেষ আপডেট পেতে মুক্ত ক্যাম্পাসের ফেসবুক পেজে লাইক দিন। লিঙ্ক : https://www.facebook.com/Muktocampus

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ফলাফল ২০২২ প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধপদ্মা সেতুর উদ্বোধন দেখার ব্যবস্থা করলো কুবি প্রশাসন