ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক
সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২:৪৮ পূর্বাহ্ণ
ভিসা ছাড়াই যাওয়া যাবে যেসব দেশে

ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ ২০২২ সম্পর্কে আজকে আমরা জানার চেষ্টা করবো। বর্তমানে বিদেশ গমনের জন্য ভ্রমণকারীদের প্রথম ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হচ্ছে পাসপোর্ট। বাংলাদেশে পাসপোর্টে ডিজিটালাইজেশন আসায় এখন কম সময়ে খুব সহজেই ই-পাসপোর্ট করা যায়। অনেকেই ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ সম্পর্কে জানতে চান। সকল নিয়ম আপনার জানা থাকলে দালালের খপ্পরে না পড়ে খুব সহজেই নিজের পাসপোর্ট নিজেই করতে পারবেন। আজকের এই কন্টেন্টটি পাসপোর্ট তৈরি করতে আপনাদের উপকারে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

ই-পাসপোর্ট বর্তমানে বাংলাদেশের সব জায়গায় দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের ১১৯ তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। দেশে ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল নাগরিক নানান সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

**ই-পাসপোর্ট এর সরকারি ওয়েবসাইট 

ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম

সরকারি বিভিন্ন কাজ ডিজিটালাইজড করার ফলে এখন ই-পাসপোর্ট করার নিয়মও অনেক সহজ হয়ে গেছে। আপনি এখন ঘরে বসে নিজে নিজেই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রথমত E-Passport Online Registration Portal এ প্রবেশ করুন। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেই Apply online নামে একটি বাটন দেখতে পাবেন। এটিতে ক্লিক করলেই আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।

পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে?

সাধারণ পাসপোর্ট এবং ই-পাসপোর্ট উভয়েরই তিন ধরনের ডেলিভারি আছে। আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর থেকে নির্ধারিত কর্মদিবস পর ই-পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে:

১. নিয়মিত: ১৫ কর্মদিবস
২. এক্সপ্রেস: ৮ কর্মদিবসে
৩. সুপার এক্সপ্রেস: দুই কর্মদিবস

**দেশের ভেতরে অতি জরুরিভাবে পাসপোর্ট পাওয়ার লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে দুই কর্মদিবসের মধ্যে সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্ট প্রদান করা হয়।

ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ ২০২২

সকল পাসপোর্টের খরচ ভিন্ন। ডেলিভারির সময়, পাসপোর্টের পৃষ্ঠা এবং মেয়াদের সময়সীমার ওপর পাসপোর্টের খরচ নির্ভর করে। নিচে ই-পাসপোর্টের ডেলিভারি ফি উল্লেখ করা হলো:

৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদী ডেলিভারি ফি

নিয়মিত: ৪ হাজার ২৫ টাকা
এক্সপ্রেস: ৬ হাজার ৩২৫ টাকা
সুপার এক্সপ্রেস: ৮,৬২৫ টাকা

৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী ডেলিভারি ফি

নিয়মিত: ৫ হাজার ৭৫০ টাকা
এক্সপ্রেস: ৮ হাজার ৫০ টাকা
সুপার এক্সপ্রেস: ১০ হাজার ৩৫০ টাকা

৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদী ডেলিভারি ফি

নিয়মিত: ৬ হাজার ৩২৫ টাকা
এক্সপ্রেস: ৮ হাজার ৬২৫ টাকা
সুপার এক্সপ্রেস: ১২ হাজার ৭৫ টাকা

৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী ডেলিভারি ফি

নিয়মিত: ৮ হাজার ৫০ টাকা
এক্সপ্রেস: ১০ হাজার ৩৫০ টাকা
সুপার এক্সপ্রেস: ১৩ হাজার ৮০০ টাকা

পাসপোর্টের ফি কোথায় জমা দেবেন?

ই-পাসপোর্টের আবেদনের অনলাইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী ফি প্রদান করতে হয়। সরকারি ওয়েবসাইটে অনলাইন এবং ব্যাংক উভয় পেমেন্টের কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে অনলাইন পেমেন্ট বন্ধ রয়েছে।

তাই সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ব্যাংক এশিয়াতে স্বশরীরে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে। ব্যাংক ডিপোজিট ফর্মে আবেদনকারীর নাম এবং ই-পাসপোর্টে দেয়া আবেদনকারীর নাম অভিন্ন হতে হবে।

এ সময় আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপির প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি অনলাইনে আবেদনের প্রিন্ট কপিটিও সাথে নিয়ে যাবেন।

ই-পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে?

অনলাইনে ই-পাসপোর্টের প্রাথমিক আবেদনের জন্য কোন কাগজপত্র লাগবে না। তবে প্রাথমিক আবেদন সম্পন্ন হলে নিচে উল্লেখিত ডকুমেন্টগুলো নিয়ে স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসে স্ব-শরীরে উপস্থিত হতে হবে।

অনলাইন আবেদনের প্রিন্ট কপি
১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
ব্যাংকের ফি জমা দেওয়ার রশিদ

***জরুরি : সকল ক্ষেত্রেই মনে রাখতে হবে, জিজ্ঞাসিত সকল তথ্য সঠিক দিতে হবে। কেননা পুলিশ ভেরিফিকেশনে আপনার দেওয়া তথ্যের ব্যতিক্রম পাওয়া গেলে পাসপোর্ট পেতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ বিষয়টি সাবধানতার সাথে এগোতে হবে।

ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের নিয়মাবলী:

১। ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে পূরণ করা যাবে।

২। আবেদনের ক্ষেত্রে কোন কাগজপত্র সত্যায়ন করতে হবে না।

৩। ই-পাসপোর্ট ফরমে ছবি সংযোজন এবং সত্যায়ন করতে হয় না।

৪। জাতীয় ‍পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (ইংরেজি ভার্সন) অনুযায়ী আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে।

৫। অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে তার পিতা/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

৬। জাতীয় ‍পরিচয়পত্র/অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (ইংরেজি ভার্সন) নিচে উল্লেখ করা বয়স অনুসারে দাখিল করতে হবে।

* বয়স ১৮ বছরের নিচে হলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (ইংরেজি ভার্সন)।
*১৮-২০ বছর হলে জাতীয় ‍পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (ইংরেজি ভার্সন)
*২০ বছরের উর্ধে হলে জাতীয় ‍পরিচয়পত্র আবশ্যক। তবে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন থেকে আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (ইংরেজি ভার্সন) গ্রহণযোগ্য হবে।

৭। তারকা চিহ্নিত ক্রমিক নম্বরগুলো অবশ্যই পূরণীয়।

৮। দত্তক/অভিভাবকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের আবেদনের সাথে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের জারিকৃত আদেশ জমা দিতে হবে।

৯। পাসপোর্টের আবেদন বর্তমান ঠিকানা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস/আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস/বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে দাখিল করতে হবে।

১০। আঠারো বছরের নিচে এবং পঁয়ষট্টি বছরের ‍উর্ধ্বে সকল আবেদনে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ০৫ বছর এবং ৪৮ পৃষ্ঠার।

১১। প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল সনদসমূহ (ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি) আপলোড/সংযোজন করতে হবে।

১২। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক জিও/এনওসি/ প্রত্যয়নপত্র/ অবসরোত্তর ছুটির আদেশ (পিআরএল অর্ডার)/ পেনশন বই আপলোড/সংযোজন করতে হবে যা ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে আপলোড থাকতে হবে।

১৩। প্রযোজ্য হলে : বিবাহ সনদ/নিকাহনামা এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা দাখিল করতে হবে।

১৪। দেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফি’র উপর নির্ধারিত হারে ভ্যাটসহ অন্যান্য চার্জ (যদি থাকে) অতিরিক্ত হিসাবে প্রদেয় হবে। বিদেশে আবেদনের ক্ষেত্রেও সরকার নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।

কূটনৈতিক পাসপোর্ট আবেদন :

১৫। কূটনৈতিক পাসপোর্ট পেতে হলে ফরেন মিনিস্ট্রির কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার উইং কিংবা ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।

১৬। বৈদেশিক মিশন থেকে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হলে স্থায়ী ঠিকানার ঘরে বাংলাদেশে যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।

অতি জরুরি ই-পাসপোর্ট আবেদন :

১৭। অতি জরুরি পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে (নতুন ইস্যু) নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ পূর্বক আবশ্যিকভাবে আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে।

১৮। *দেশের অভ্যন্তরে অতি জরুরি পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ২ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।

*দেশের অভ্যন্তরে জরুরী পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।

*দেশের অভ্যন্তরে রেগুলার পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।

১৯। আবেদনের সময় মূল জাতীয় ‍পরিচয়পত্র, অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সনদ, সরকারি আদেশ/অনাপত্তি প্রদর্শন/দাখিল করতে হবে।

২০। রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে মূল পাসপোর্ট প্রদর্শন করতে হবে।

২১। হারানো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে মূল জিডির কপি প্রদর্শন/দাখিল করতে হবে।

২২। ছয় বছর বয়সের নিচের আবেদনের ক্ষেত্রে ৩ আর (3R Size) সাইজের ( ল্যাব প্রিন্ট গ্রে ব্যাকগ্রউন্ড ) ছবি দাখিল করতে হবে।

২৩। কোনো কারণে পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কিংবা চুরি হয়ে গেলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে হবে। ফের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময় পুরনো পাসপোর্টের ফটোকপি এবং জিডির কপিসহ আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।

তথ্য সূত্র : বহিরাগমন শাখা ১ , সুরক্ষা সেবা বিভাগ বাংলাদেশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্মারক নং ৫৮.০০.০০০০.০৪০.০১.০০৩.১৬-১২৩৪।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাবি ছাত্রদলের নতুন কমিটি, নেতৃত্বে সোহেল-আরিফ
পরবর্তী নিবন্ধএইচএসসি পরীক্ষার আসন বিন্যাস ২০২২ – HSC Exam Seat Plan 2022