পবিত্র শবে বরাত ২০২৩-Shab e Barat 2023

এমসি রিপোর্ট
রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৩:৪৩ অপরাহ্ণ
আজ পবিত্র আশুরা

পবিত্র শবে বরাত ২০২৩ (Shab e Barat 2023) পালিত হবে ৭ মার্চ তারিখে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৪ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এর পরদিন বুধবার থেকে শাবান মাস গণনা শুরু হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। এরদিন অর্থাৎ ৮ মার্চ সরকারি ছুটি থাকবে।

২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। পরে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মহা. বশিরুল আলম।

পবিত্র শবে বরাত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রাত হিসেবে পরিচিত। এই রাতে বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন মহান আল্লাহ তাআলা।

শাবান মাস শেষে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আনন্দ বার্তা নিয়ে শুরু হয় সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান।

পবিত্র শবে বরাত ২০২৩ ৭ মার্চ-Shab e Barat 2023

ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে বলে ‘লাইলাতুল বরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রাত। মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ পড়েন, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন এবং জিকিরে মগ্ন থাকেন। অতীতের পাপ-অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন মুসলমানরা।

শব অর্থ রাত, ‘বরাআত’ অর্থ মুক্তি, ভাগ্য। সুতরাং শবে বরাত অর্থ মুক্তি ও ভাগ্যের রাত। আরবীতে বরাআত এর আরেক অর্থ হলো বিচ্ছিন্নতা। যার সাথে অবস্থান অপছন্দনীয়, তার সঙ্গ হতে দূরে থাকা। [সূত্র: মুফরাদাতে ইমাম রাগেব, পৃষ্ঠা ৪৫]

এই রাতের মর্যাদা উল্লেখ করে তাফসিরকারক আল্লামা ইসমাইল হাক্কী (রাহ.) তাফসীরে রুহুল বয়ানে বলেছেন, শবে কদরের মতই এই রাতে সৃষ্টি তথা বান্দাহর (অন্যান্য) প্রতি আল্লাহর সৌন্দর্যের বরকত আরশের প্রতিটি কণা হতে ভূতলের গভীরে পৌঁছে। [রহুল বয়ান: ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০১] তিনি বলেন, এই রাতকে লাইলাতুর রহমতও বলা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে- এ রাতে আল্লাহর বিশেষ রহমত নাযিল হয়।

তিনি আরো বলেন, লাইলাতুল বরাত এ জন্য বলা হয় যে, খাজনা আদায়কারী খাজনা পাওয়ার পর যেভাবে ছাড়পত্র দিলে খাজনা দানকারী সব ধরনের শাস্তি হতে মুক্তি পায়, অনুরূপভাবে এ রাতে বান্দা গুনাহ মুক্ত হয়ে সকল পাপের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে নিজেকে মুক্ত করে। [তাফসীরে রহুল বয়ান: ৪ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৪]

শবে বরাত সম্পর্কে সুনানে ইবনে মাযা শরীফে হযরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বর্ণনা করেছেন- রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মধ্য শাবানের রাতে তার দৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতিত সকলকে ক্ষমা করে দেন।

হযরত ওসামা ইবনে যায়দ (রা.) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম হে আল্লাহর রসূল আপনি শাবান মাসে যত বেশি রোযা রাখেন, জন্য কোন মাসে আপনাকে এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনা এর কারণ কি? তখন রাসূল (সা.) এরশাদ করলেন এ মাস রজব ও রমজানের মাঝামাঝি। এ মাস সম্পর্কে মানুষ গাফেল বা উদাসীন রয়েছে। এ মাসে আল্লাহর কাছে বান্দার আমল উঠানো হয়। আমি পছন্দ করি আমার আমলসমূহ তখন এমন অবস্থায় উঠানো হোক যে, আমি রোযাদার। [কানযুল উম্মাল দুররে মানসূর: ৭ম খণ্ড, ৪০১পৃষ্ঠা]

পবিত্র শবে বরাত ২০২৩ ৭ মার্চ-Shab e Barat 2023

শবে বরাতের রোযা রাখা অধিকতর সাওয়াবের কাজ। হাদিসে আছে, যখন শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিনগত রজনী আসবে। তোমরা রাতে নামাযের জন্য দাঁড়াবে (রাত জেগে ইবাদত করবে) আর দিনে রোযা রাখবে। [ইবনু মাজাহ্: খণ্ড ১ম, পৃষ্ঠা ৪৪৪]

শবে বরাতে নফল ইবাদত-বন্দেগী করা অতি উত্তম। যত বেশী ইবাদত, যিকির-আযকার, তেলাওয়াতে কোরান হবে তত বেশি ভাল ও সাওয়াব পাওয়া যাবে।

শবে বরাতের ফজিলত :

হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)।

পবিত্র শবে বরাত ২০২৩ ৭ মার্চ-Shab e Barat 2023

হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৭৩৯)।

শবে বরাতের নফল নামাজ ও ইবাদত :

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ; সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। বিশেষ ইবাদতের জন্য গোসল করাও মোস্তাহাব। ইবাদতের জন্য দিন অপেক্ষা রাত শ্রেয়তর। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো; কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৪)।

শবে বরাতের আমল : এ রাতের বেশ কিছু আমলের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো :

নফল নামাজ: মনোযোগ দিয়ে বিশুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াত, অশ্রুবিজড়িত অবস্থায় আল্লাহর কাছে তওবা, ইস্তিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদির মাধ্যমে নামাজ আদায় করা। শবে বরাতে নামাজ-বন্দেগি, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-ইস্তিগফার, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি সবই নফল আমল। যাবতীয় নফল আমল নিজ নিজ ঘরে একাগ্রচিত্তে আদায় করাই উত্তম।

নফল রোজা: আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন অর্ধ শাবানের রাত অর্থাৎ শাবানের পনেরোতম রাত তোমাদের সামনে আসে, তখন তোমরা তাতে কিয়াম তথা নামাজ পড়ো এবং পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৮)

আরও পড়ুন : ওমরাহ হজের ফজিলত ও সওয়াব

মৃত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কাছে না পেয়ে খোঁজ করতে বের হলাম। হঠাৎ দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে আছেন। তিনি বললেন, ‘(হে আয়েশা) তোমার কি এ আশঙ্কা হয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার ওপর জুলুম করতে পারেন?’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমার ধারণা হলো আপনি অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে আসেন এবং কালব গোত্রের ছাগল-ভেড়ার পশমের চেয়েও অধিকসংখ্যক লোককে ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৭৩৯)

শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয় :

যা যা করা উচিত: (ক) নফল নামাজ ১. তাহিয়্যাতুল অজু, ২. দুখুলিল মাসজিদ, ৩. আউওয়াবিন, ৪. তাহাজ্জুদ, ৫. ছলাতুত তাসবিহ ৬. তাওবার নামাজ, ৭. ছলাতুল হাজাত, ৮. ছলাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া।

(খ) নামাজে কিরাআত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা। (গ) পরের দিন নফল রোজা রাখা; (ঘ) কোরআন শরিফ- যেমন: সুরা দুখান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা; (ঙ) দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; (চ) তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা; (ছ) দোয়া-কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আসকার ইত্যাদি করা; (জ) কবর জিয়ারত করা; (ঝ) নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা।

যা যা করা উচিত নয়: (১) আতশবাজি ও পটকা না ফোটানো, (২) ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে বেহুদা ঘোরাফেরা না করা, (৩) অনাকাঙ্ক্ষিত আনন্দ-উল্লাস না করা, (৪) অযথা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ না করা, (৫) অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন না ঘটানো, (৭) হালুয়া-রুটি বা খাওয়া-দাওয়ার পেছনে বেশি সময় নষ্ট না করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএসএসসি পরীক্ষার রুটিন ২০২৩ pdf প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধউপবৃত্তি আবেদন ফরম ২০২৩ pdf download [৬ষ্ঠ ও একাদশ]