লকডাউনে ঢাকা

মুক্ত ক্যাম্পাস প্রতিবেদন
রবিবার, ০৫ এপ্রিল ২০২০ | ৫:১৫ অপরাহ্ণ | 141 বার পঠিত

করোনাভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের সকল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা থেকে কাউকে বের হতে কিংবা আসতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিষয়টি শিথিলতা থাকছে।

আজ রবিবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া এন্ড পাবলিকেশন্স থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ১২ ও ১৩ এপ্রিল সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ১৪ এপ্রিল থাকবে নববর্ষের ছুটি।

পুলিশ সদরদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং জনগণের ঘরে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। জনগণের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য কোন জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে বাইরে ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘পরবর্তী সরকারি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জরুরি সার্ভিস ব্যতীত সাধারণ জনগণকে ঢাকায় প্রবেশ অথবা ঢাকা ত্যাগ করতে দেয়া হচ্ছে না।’

‘সেই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কাজে সহযোগিতা করার জন্য দেশের সকল সম্মানিত নাগরিক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছে।’

এদিকে রবিবার অনলাইনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানান, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট নয়জনের মৃত্যু হলো। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছে, যা একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮৮ জনে।

উল্লেখ, করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো কোনো দেশ কারফিউ, এমনকি জরুরি অবস্থা পর্যন্ত জারি করেছে। বাংলাদেশে সরকারের উপর অনেক দিন ধরে লকডাউনের চাপ থাকলেও সরকার সে পথে হাঁটেনি। সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে অবৈজ্ঞানিক দাবি করা হয়েছে।

সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করার মাধ্যমে করোনার বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের বিকল্প হিসেবে সাধারণ ছুটির পথ বেছে নেয় সরকার। গত ২৪ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে দুই দফায় এটি বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় গণপরিবহন।

কিন্তু গণপরিবহণ বন্ধ করার আগেই প্রথম দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর এক কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। এদিকে সরকার ১ এপ্রিল ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও তাতে গার্মেন্টস খাতকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। বিজিএমই ৫ তারিখ থেকে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খোলার সিদ্ধান্ত নিলে সারাদেশ থেকে কয়েক লাখ শ্রমিক পায়ে হেঁটে, ট্রাকে চড়ে ঢাকা ও গাজীপুরে ফিরে আসে। কিন্তু তীব্র সমালোচনার মুখে বিজিএমইএ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে ঢাকা-গাজীপুরে কয়েক লাখ শ্রমিক আটকে যায়।

এমন অবস্থায় মূলত গার্মেন্টস শ্রমিকরা যাতে ফের ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে যেতে না পারে সে জন্যেই নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

এতদিন গণ পরিবহণ বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, এসইউভিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত যানে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকায় এসেছেন এবং ঢাকা ছেড়ে গেছেন। নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে এগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।

জানা গেছে, ঢাকায় আসা এবং বাইরে যাওয়া বন্ধের পাশাপাশি শহরের ভেতর চলাচল সীমিত করার বিষয়েও কঠোর হবে পুলিশ। গত ক’দিন ধরে সাধারণ ছুটির মধ্যেও রাজধানীতে যানবাহন চলাচল ও সাধারণ মানুষের ঘোরাফেরা বেড়ে যাওয়ায় সেনা বাহিনী ও পুলিশ নানাভাবে তা রোধ করার চেষ্টা করছে। এতেও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নতুন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে

মুক্ত ক্যাম্পাস/এসপি

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনা ঝুঁকিতে যে ৫ এলাকা
পরবর্তী নিবন্ধসাধারণ ছুটি ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি