‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের পুরস্কৃত করছে বাংলাদেশ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২ | ৫:০৯ অপরাহ্ণ
মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের পুরস্কৃত করছে বাংলাদেশ : এইচআরডব্লিউ

মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত থাকার পরেও নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডারদের পদোন্নতিসহ নানাভাবে পুরস্কৃত করছে বাংলাদেশ সরকার। বুধবার মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এটি বলা হয়। এতে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি লিখেছেন, জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনসহ নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত এসব কর্মকর্তারা। কিন্তু তাদের অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করে উল্টো মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, গত ৩০শে সেপ্টেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর আগে তিনি র‍্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। সেসময় র‍্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে ঘটনার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের পুরস্কৃত করছে বাংলাদেশ : এইচআরডব্লিউ

এদিকে, এতদিন এ দায়িত্বে থাকা ড. বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, তিনি র‍্যাবের মহাপরিচালক থাকা অবস্থায় তার অধীনে থাকা কর্মকর্তারা মোট ১৩৬ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ১০টি গুমের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সফরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে বাংলাদেশ সরকার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের একটি সম্মেলনে পাঠানো প্রতিনিধি দলের সদস্য করে তাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের তরফ থেকে র‍্যাবকে সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে আবদুল্লাহ আল-মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা এমন কিছু করছি না যে জন্য আমাদের র‍্যাবকে সংস্কার করতে হবে। তাই সংস্কারের কোনো প্রশ্নই নেই। এ বছরের প্রথমে আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা র‍্যাবের আরেক কর্মকর্তা এডিজি কর্নেল খান মোহাম্মদ আজাদকে তাদের সাহসিকতা ও সেবার জন্য পুরস্কৃত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, এমন পদক্ষেপ বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কাছে এই বার্তা দেয় যে, সরকার শুধু তাদের বিরুদ্ধে থাকা অপব্যবহারের অভিযোগগুলো উপেক্ষাই করবে না, বরং তাদেরকে আরও পুরস্কৃত করবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিস প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ নিয়ে ৭৪ পৃষ্ঠা লেখা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনী দুর্নীতিতে জড়িত বলে দাবি করা হয়েছে। আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর দুর্নীতি, নিপীড়ন ও হত্যার তদন্ত এবং অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে। রিপোর্টে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, বাক্সভর্তি জাল ভোট, বিরোধী পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ নানা অনিয়মের কথা রয়েছে। ২০২১ সনের ঘটনাবলির ওপর ভিত্তি করে প্রণীত এই রিপোর্টে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ আরও যেসব বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, তা হলো- বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম, কারাগারে জীবননাশের বিরাজমান হুমকি, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর নজরদারি, একজনের অপরাধে পরিবারের অন্য সদস্যকে হয়রানি করা ইত্যাদি। বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানি, শিশু নির্যাতন, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে সহিংসতার হুমকি, সমকামীদের অধিকার সুরক্ষার পথে প্রতিবন্ধক আইনের অস্তিত্ব বা ব্যবহার, শরণার্থীদের চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার কথাও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুবি ছাত্রলীগের কমিটি বলবৎ আছে: জয়
পরবর্তী নিবন্ধরিজভীর বক্তব্যের প্রতিবাদ ২২ বিশিষ্টজনের