বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারকে হেনস্তা করতেই জাল নোটিশ

শেখ নাসির উদ্দিন, বেনাপোল
বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ | 286 বার পঠিত

স্বাক্ষরহীন দুদকের জাল নোটিশ ছড়ানোর সত্যতা স্বীকার করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজী। বেনাপোলে ৬৭ মণ ভায়াগ্রার চালান আটকের পর কাস্টমস কমিশনার বেলাল চৌধুরীকে সামাজিক ও মানসিক হেনস্থা করতে দুদকের জাল নোটিশ তৈরী করে সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন দুদক কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ও মাদক ব্যবসায়ী আহসান আলী।

জানা যায়, দুদক’র সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজির টেবিল থেকে খসড়া নোটিশ চুরি করেছে দুদকের ভুয়া ডিজি পরিচয়দাতা আহসান আলী। নেয়ামুল গাজি তখনো নোটিশটি সংশোধন ও স্বাক্ষর করেননি। আগেই তিনি খসড়া নোটিশের ছবি তুলে নিয়ে বিতরণ করেন। নোটিশটি আসলে জাল। এরপর ২ সেপ্টেম্বর তা গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এ জাল নোটিশ ৮ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।
জাতীয় প্রতিষ্ঠান দুদকে এভাবে ঢুকে অফিসিয়াল গোপনীয় নোটিশ চুরি কিভাবে হয়, তা বিস্ময়কর। সাধারণ মানুষ দুদকের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

আসল নোটিস

জানা গেছে, বেনাপোলে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা ৬৭ মণ ভায়াগ্রার চালান আটকের পর কাস্টমস কমিশনার বেলাল চৌধুরীকে হেনস্থা করতে প্রতিহিংসাবশত দুদকের গোপনীয় নোটিশ চুরি করে সংবাদ মাধ্যম ছড়িয়ে দিয়েছেন আহসান আলী।

জাল নোটিশ ও বেনাপোল কাস্টম হাউজে গৃহীত মূল নোটিশে হাজিরার তারিখেও গরমিল দেখা যায়। মূল নোটিশে হাজিরার তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর হলেও জাল নোটিশে ৮ সেপ্টেম্বর লেখা রয়েছে, যেটা সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।

আহসান আলীর চুরি করা নোটিশে বেলাল চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের ভোটার আইডি, পাসপোর্ট, সম্পদের দলিল, ব্যাংকের কাগজ, সম্পত্তির কাগজপত্র ইত্যাদি তিন লাইনের ফর্দ রয়েছে। মূল নোটিশে এসব কিছু নেই, কেবল অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। দুদকে সূত্রে জানা গেছে আহসান আলী নিজেও দুদকের ভুয়া নোটিশ তৈরি করেন লোকজনকে ফাঁসানোর জন্য যার অসংখ্য অতীত রেকর্ড আছে।

৮ সেপ্টেম্বর হাজিরার তারিখ লেখা ভুয়া নোটিশটি তিনি গত ২ সেপ্টেম্বর সংবাদ মাধ্যমে ধরিয়ে দেন এবং সংশ্লিষ্টদের বোকা বানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেছেন, নোটিশ জারির দিন আহসান আলীকে তদন্তকারী কর্মকর্তার সামনে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।

নকল নোটিস

সূত্র জানায়, আহসান আলীর প্রবেশে দুদক চেয়ারম্যানের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তিনি অবাধে ঢুকছেন দুদক অফিসে। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে দিনে অন্তত এক ডজন বেনামী চিঠি জমা দিয়ে সেগুলো তদন্তে ফেলারও তদবির করেন তিনি। দুদকের কাগজপত্র চুরি করে, নাম ভাঙ্গিয়ে ব্ল্যাকমেইল, জালিয়াতি, প্রতারণা করে অর্থ আদায় করা তার ব্যবসা।

এছাড়াও নেয়ামুল আহসান গাজি স্বারিত মূল নোটিশ ও ভুয়া নোটিশে আরো পার্থক্য দেখা গেছে। ভুয়া নোটিশটি মোবাইলে ছবি তোলা, দুদকের লেটারহেড নেই, পত্র জারির নম্বর নেই, তারিখও নেই, সাত তারিখ ৮ তারিখ, সময় ৯.১৫মি, চাহিত কাগজপত্রে বিশাল ফর্দ!

কাস্টমস এর সহকারী কমিশনার উওম চাকমা জানান, আহসান আলীর নিজের শুল্ক ফাঁকির ৩১টি চালান ও ভায়াগ্রা খালাসে ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসাবশত কমিশনারকে বদনাম ও অপদস্থ করতে প্রতিহিংসাবশত তিনি একাজ করেছেন। তিনি নিজের কম্পিউটারে এ নোটিশ তৈরি করে তার সুবিধাভোগী বন্ধু সাংবাদিকদের হাতে দিয়ে ফলাও করে প্রচারের ব্যবস্থা করেন।

৯ সেপ্টম্বরের বেলাল চৌধুরীকে দুদকে হাজির হতে নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজির স্বাক্ষরে ২ সেপ্টেম্বর মূল নোটিশ জারিও হয়। কিন্তু মূল নোটিশ জারির আগেই স্বাক্ষরবিহীন নোটিশটি আহসান আলী হাতিয়ে নেন এবং সংবাদ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেন।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসনে চৌধুরী জানান, সারাদেশের মানুষের সম্পদের তদন্ত করে দুদক। দুদকের তদন্তভুক্ত সবাই দোষী নন। অপরাধ প্রমাণ হলে দোষী নির্ণয় হবে। কিন্তু এভাবে কেউ গোপনে তথ্য নিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্ল্যাকমেইল বা হয়রানি করবে, এটা যেমন গ্রহণীয় নয়, জাতীয় প্রতিষ্ঠান দুদকের নাম ব্যবহার করে হয়রানি করবে সেটাও নয়।”

সূত্র জানায়, দুদকের সুনাম নষ্টে দুদকের ভেতরের ও বাইরের চক্র কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনাসহ দুদকের সামগ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করা দরকার বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজী আরো জানান, ৮ সেপ্টেম্বর কাস্টমস কমিশনারকে হাজিরার তারিখ দিয়ে দুদুকের নোটিশের তথ্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, সেটি দুদুকের সাবেক ডিজি পারিচয়দানকারী আহসান আলী চিঠি জাল করে পাঠিয়েছে। আসলেও সেটি ছিল ভূয়া। তিনি ৯ তারিখে হাজিরার জন্য নোটিশ দিয়েছেন।

মুক্ত ক্যাম্পাস/শেখ নাছির/জেডআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আজ উদ্বোধন হবে আইয়ুব বাচ্চুর রুপালি গিটার
পরবর্তী নিবন্ধসোনালী আঁশে ফুঁটলো হাসি…