বুয়েট শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্থার ঘটনায় তোলপাড়, তদন্ত কমিটি

এমসি রিপোর্ট
মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১ | ১০:০৯ অপরাহ্ণ
ছাত্রদলের গুলিতে নিহত সনির নামে বুয়েটে হল

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ১৯ ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে একই ব্যাচের জারিফ হোসাইন ও তার তিন বন্ধুর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অভিযুক্ত ওই চার বন্ধু হলেন জারিফ হোসাইন, সালমান সায়ীদ, জারিফ ইকরাম ও জায়ীদ মনোয়ার চৌধুরী। তারা সকলেই বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী।

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী ছাত্রী আমাকে সরাসরি অভিযোগ করেনি। তবে ওই ব্যাচের সিআর আমাকে মেইল করে অভিযোগ দিয়েছে। আমি সেটি প্রিন্ট করে উপাচার্য স্যারকে দিয়েছি। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া্র পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, অভিযুক্ত জারিফ হোসাইন ভুক্তভোগী নারী সহপাঠীকে পছন্দ করতেন। তবে ভুক্তভোগীর কাছে অনুরূপ সাড়া না পেয়ে পরবর্তীতে যৌন হয়রানি শুরু করেন। পরবর্তীতে জারিফ ও তার তিন বন্ধু মিলে একটি ম্যাসেন্জার গ্রুপে পরিকল্পনা করে মেয়েটিকে একের পর এক নিজের অর্ধনগ্ন ছবি পাঠাতে থাকে।

এই ঘটনা ওই নারী শিক্ষার্থীর এক সহপাঠী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানালে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এরপর মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা আসে।

প্রসঙ্গত, বিভাগের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ ঘটনাটি জানার পর অভিযুক্তদের কাছে এর ব্যাখ্যা দাবি করেন৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে রাত ১০টায় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মিটিংয়ে বসেন। মিটিংয়ে জারিফ হোসাইন ঘটনার দায় এবং এতে বাকি তিন বন্ধুর সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেন। সম্পৃক্ততার প্রমাণ হিসেবে জারিফ হোসাইন ওই নারী শিক্ষার্থীকে মেসেজ দেয়ার আগে এসব বন্ধু থেকে পরামর্শ নেয়ার স্ক্রিনশটও প্রকাশ করেন।

ওই স্ক্রিনশট থেকে দেখা যায়, ‘হেল্প মি’ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে জারিফ হোসাইনকে বাকি তিন বন্ধু পরামর্শ দিচ্ছেন ওই নারী শিক্ষার্থীকে কখন কী কী মেসেজ দিতে হবে। আর সে অনুযায়ী জারিফ হোসাইন তাকে মেসেজ দিচ্ছেন।

হাফিজুল ইসলামের ওই পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, মিটিংয়ে জারিফ হোসাইনের তিন বন্ধু সালমান সায়ীদ, জারিফ ইকরাম ও জায়ীদ মানোয়ার চৌধুরীও নিজেদের দায় স্বীকার করেন। তারা এটিও স্বীকার করেন যে, তারাই ওই নারী শিক্ষার্থীকে এসব মেসেজ দেয়ার জন্য জারিফ হোসাইনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং ২২ জুলাই সম্মিলিত প্রয়াসে ছবি তুলে দিয়েছেন।

ওই নারী শিক্ষার্থীকে পাঠানো জারিফ হোসাইনের অশ্লীল ভিডিওটি জারিফ ইকরামের বাসায় বসে তিনজনের উপস্থিতিতে রেকর্ড করা হয়েছে।

২৩ জুলাই সিএসই ডিপার্টমেন্টের ব্যাচ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হেনস্তার সব প্রমাণ সবার সামনে প্রকাশ করা হয়। মিটিংয়েই শিক্ষার্থীরা জারিফ হোসাইন, জারিফ ইকরাম, সালমান সায়ীদ ও জায়ীদ মনোয়ার চৌধুরীকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন। এর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা এই চার শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন এবং সব রকম এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের বর্জন করেন।

সভা থেকে ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর কাছে লজ্জা প্রকাশ করেন। তারা জানায়, এ ঘটনায় পরবর্তী যেকোনো পদক্ষেপে তারা সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগস্টের শুরুতে ৪১তম বিসিএস প্রিলির ফল
পরবর্তী নিবন্ধবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ষ্টোরেজ কালেকশন ও টান্সপোর্ট