বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ষ্টোরেজ কালেকশন ও টান্সপোর্ট

জান্নাতুল ফেরদৌস
মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১ | ১১:০৬ অপরাহ্ণ | 166 বার পঠিত
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ষ্টোরেজ কালেকশন ও টান্সপোর্ট

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। দেশটিতে বর্ধিত জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা। বর্তমানে দেশে বর্জ্য সৃষ্টির পরিমাণ বছরে প্রায় ২২.৪ মিলিয়ন টন অর্থাৎ মাথাপিছু প্রায় ১৫০ কিলোগ্রাম। এ হার ক্রমাগত বাড়তে থাকলে ২০২৫ সালে দৈনিক প্রায় ৪৭ হাজার ৬৪ শত টন বর্জ্য উৎপন্ন হবে। যা মোট মাথাপিছু প্রায় ২২০ কিলোগ্রামে দাঁড়াবে। ফলে এখনই সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে আবর্জনা সংগ্রহ, পরিবহণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পুন:ব্যবহার এবং নিষ্কাশনের সমন্বিত প্রক্রিয়াকেই বোঝানো হয়ে থাকে।

বর্জ্য পদার্থের আধুনিক ও নিরাপদ অপসারণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা বাংলাদেশের অন্যতম পরিবেশগত সমস্যা। অপরিকল্পিত নগরায়ন প্রক্রিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা। এসব অবকাঠামোর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্জ্য নিষ্কাশনের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ফলে অসংখ্য মানুষের বাসগৃহ থেকে প্রচুর পরিমাণ গৃহস্থালি বর্জ্য প্রতিদিন এখানে-সেখানে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক এবং সেকেলে। ডাষ্টবিন উপচে কঠিন বর্জ্য রাস্তার পাশের ড্রেনে পড়ে পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অচল করে দেয়। তাছাড়া উন্মুক্ত স্থান থেকেও বিপুল পরিমান কঠিন ও তরল বর্জ্য প্রতিনিয়ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলছে। রান্নাঘরের পরিত্যক্ত আবর্জনা, হাটবাজারের পচনশীল শাকসবজি, মিল কারখানার তৈলাক্ত পদার্থ, কসাইখানার রক্ত, হাসপাতালের বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থের নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত না হওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হয়ে উঠেছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ।

বর্তমানে উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন ধরণের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ, শহর বা গ্রাম কিংবা আবাসিক শিল্প এলাকাভেদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ধরণ আলাদা হয়ে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বর্জ্য সংগ্রহের সুবিধার্থে বর্জ্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন-

* পচনশীল
* অপচনশীল

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ষ্টোরেজ কালেকশন ও টান্সপোর্ট
ছবি: সংগৃহীত

তাছাড়াও রয়েছে দহনযোগ্য অদহনযোগ্য পুন:ব্যবহারযোগ্য, প্লাষ্টিক, পুরাতন কাপড় এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্যাদি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মূলত একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় এবং ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশের মোট বর্জ্যের শতকরা ৩৭ শতাংশই উৎপাদিত হয় ঢাকায়। তাই এ শহরের ক্ষেত্রে বর্জ্য সংগ্রহ করে তার সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। বাংলাদেশের পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আইনি কাঠামো গড়ে উঠেছে সংবিধানের উপর ভিত্তি করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(১) নং ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে জনস্বাস্থের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গন্য করিবেন।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১৮(১) ধারায় বলা আছে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রানীর সংরক্ষণ নিরাপত্তা বিধান করিবেন। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জাপানের যৌথ উদ্যোগে ঢাকার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ঢাকা ক্লিন মাস্টার প্লান নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

উন্নত দেশগুলোতে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারযোগ্য লাভজনক বিভিন্ন বস্তুতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত যাতে বর্জ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, নিষ্ক্রীয়করণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বর্জ্যের ক্ষতিকারক প্রভাব হ্রাস করে এটিকে সম্পদে পরিণত করা যায়। এ লক্ষ্যে ঢাকাসহ দেশের সকল বিভাগীয় শহরে কমিউনিটিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবসস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাসাবাড়ি থেকে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য পৃথকভাবে সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ বর্জ্য নিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কম্পোষ্ট সার তৈরির লক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। গ্রামীণ পরিবেশে জ্বালানি শক্তির সহজতম উৎস হচ্ছে বায়োগ্যাস প্লান্ট। এর মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস পায় এবং উৎপাদিত জৈব সার জমির উর্বরতা বাড়ায়। সর্বোপরি বর্জ্যের সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। বর্জ্যের আধুনিক ও নিরাপদ অপসারণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে ও দেশের প্রতিটি শহর ও গ্রামকে পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য পরিবেশবান্ধব নগরীতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করবে।

লেখক : জান্নাতুল ফেরদৌস
শিক্ষার্থী,
পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী বিভাগ,
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
বিশ্ববিদ্যালয়; ত্রিশাল; ময়মনসিংহ।
[email protected]

পূর্ববর্তী নিবন্ধবুয়েট শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্থার ঘটনায় তোলপাড়, তদন্ত কমিটি
পরবর্তী নিবন্ধগুচ্ছের প্রাথমিক সিলেকশনের ফল ১৫ আগস্টের মধ্যে