ফার্মাসিস্ট: পর্দার আড়ালে একদল যোদ্ধাদের গল্প

বনলতা
শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০ | ৫:৫০ অপরাহ্ণ | 320 বার পঠিত

বর্তমানে করোনা ভাইরাসের নাম শোনেনি এমন কেউ নেই বললেই চলে। সবাই জানি এছাড়াও ভাইরাসটির তৎপরতা দেখে রীতিমতো সকলেই আতঙ্কিত। আমরা ভয়ে ঘর থেকে বের হই না। কারণ সকলেই ভাইরাসটির ভয়াবহতার কথা জানি, তাই পরিবারকে বাঁচাতে, নিজেকে বাঁচাতে আজ আমরা ঘর থেকে এক পা বের হতে ভয় পাই।

কিন্তু তাই বলে কি সবাই ঘরে? না সবাই চাইলেও পারছে না বসে থাকতে, পরিবারের সুরক্ষার চিন্তা করে নিজেকে ঘরের কোণায় গুটিয়ে রাখতে। সমাজের কয়েক শ্রেণীর লোক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেরিয়ে এসেছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।

আমাদের জীবন বাঁচাতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে আমাদের সমাজের রিয়েল হিরো ডাক্তার, নার্স। আমাদেরকে সুরক্ষা দিতে খাওয়া নেই, ঘুম নেই কাজ করে যাচ্ছে আরেক দল মানবিক পুলিশ, আর্মি, স্বেচ্ছাসেবক। তাদেরকে সুরক্ষা দিতে দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে কিছু গার্মেন্টস কর্মী। তারা তৈরি করছে মাস্ক, পিপিই। সকলেই তারা তাদের অবস্থান থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, এক রকম জীবন মরণ যুদ্ধে সকলে টিকিয়ে রাখতে।

এই যুদ্ধে একান্ত হাতিয়ার হলো মেডিসিন, কারণ এখানে শত্রুপক্ষ কোনো প্রাণী নয় বরং ভাইরাস। ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক, গার্মেন্টসকর্মী আর সাধারণ মানুষ সকলের জন্য অপরিহার্য হলো মেডিসিন, মেডিসিন্যাল ম্যাটেরিয়াল।

আচ্ছা আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি কোথায় পাচ্ছি এত ওষুধ পত্র? কোথায় পাচ্ছি আমরা ট্রিটমেন্টের যাবতীয় সামগ্রী? ডাক্তার, নার্স, পুলিশ বানাচ্ছে ওষুধ? নাকি সমাজের আর দশজন স্বেচ্ছাসেবক মেডিসিনের চাহিদা মেটাচ্ছে?

ফার্মাসিস্ট: পর্দার আড়ালে একদল যোদ্ধাদের গল্প

উত্তর অবশ্যই না ই হবে। হবার কথাই তো, এরা কেউই তো করছে না। তাহলে কারা করছে? শুধু আজ এই মহামারী বলে নয়, এতগুলো মাস, বছর, যুগ যুগ ধরে কারা মেডিসিনের যোগান দিচ্ছে এই কথাটি কি আমরা কখনও ভেবে দেখেছি? না ভাবিনি কারণ, তারা সব সময় পর্দার আড়ালেই কাজ করে যাচ্ছে। কাজ করে যাচ্ছে আমাদের সকলের স্বার্থে, একটি সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন নিয়ে।

তারা ফার্মাসিস্ট যারা পর্দার আড়ালে থেকে ওষুধ তুলে দিচ্ছে আমাদের হাতে কিন্তু আমরা কখনও তাদের কথা জানতে চাইনি। চিনতে চাইনি তাদেরকে। বড়ই হতভাগা তারা শুরু থেকেই।

আমার এক বন্ধু ফার্মেসিতে ভর্তি হয়েছে, আত্মীয় স্বজনেরা এসে জিজ্ঞেস করে তুমি কি নিয়ে পড়ছো? সে যখন বলে ফার্মেসি, কেউ কেউ তো হেসেই উড়িয়ে দেবে আর বলবে এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে লাভ কি? আর কেউ কেউ বলেই বসবে ওষুধের দোকান দেবে নাকি?

আমি জানি এটা শুধু আমার বন্ধু নয়; প্রত্যেকটা ফার্মেসি পড়ুয়া স্টুডেন্টদের সাথে হয়েছে। কোন না কোনো ভাবে তারা ফার্মেসি দোকানদার অথবা দোকানের মালিক হয়েছে, কিন্তু কখনও অন্যদের কাছে ফার্মাসিস্ট হয়ে উঠতে পারেনি। এই হলো আমাদের অবস্থা। আমরা ঠিকমতো জানিও না একজন ফার্মাসিস্ট আসলে আমাদের জন্য কি কি ভূমিকা পালন করছে। তাদের আসল কাজ কি।

প্রতি পদেই লেখকের কলম ফসকে, রিপোর্টারদের চোখ ফসকে, ডাক্তারদের ভীড়ে কিভাবে কিভাবে যেন সর্বদাই বাদ পড়ে গেছে তারা। বঞ্চিত হয়েছে সবখান থেকে। নিজেদের সঠিক অবস্থানও আজ পর্যন্ত তারা পায়নি। নিজেদের দ্বায়িত্ব থেকেও ফার্মাসিস্টরা আজও বঞ্চিত।

এসব কিছু বাদই দিলাম, আচ্ছা তারা কি শুধুই ওষুধের উৎপাদনের কাজেই নিয়োজিত থাকে? নাকি তাদের আরও কাজ আছে? হ্যাঁ অবশ্যই আছে, সরকারি ভাবে বিসিএস এ এত রকম পোস্ট তাহলে এখানে ফার্মাসিস্টদের জায়গা কোথায়? অন্যান্য দেশের মত আমাদের হসপিটাল ফার্মাসিস্ট কোথায়? কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট? কিছুই নেই। আর পাঁচটা উন্নত, উন্নয়নশীল দেশের ফার্মাসিস্টদের মত আমাদের ফার্মাসিস্ট ভাই বোনেরা সঠিক জায়গা আর সম্মান পাচ্ছে না। তাদের দ্বায়িত্ব থেকে তারা বঞ্চিত, এগিয়ে যেতে পারছে না তারা। সত্যি কথা বলতে কত দিন আগে আমি নিজেও তাদের ব্যাপারে জানতাম না। কিন্তু একজন সচেতন মানুষ হয়ে আমার সব কিছু জানা উচিৎ, একটা সচেতন গোষ্ঠী হিসেবে আমাদের সকলেই বোঝা উচিৎ ফার্মাসিস্টরাও আমাদের জন্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।

ধন্যবাদ যদি জানাতেই হয় তবে শুধু ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক আর গার্মেন্টসকর্মী নয়; ফার্মাসিস্টদেরকেও ধন্যবাদ জানাতে হবে। ধন্যবাদ জানাই আমার দেশের সকল ফার্মাসিস্ট ভাই বোনদের কে।
ধন্যবাদ জানাই তাদের অবিরাম, অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য। পর্দার আড়ালে থাকা এই নৈপথ্য কারিগররা সবসময় ভালো থাকুক৷

ধন্যবাদ জানাই আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করার জন্য। ধন্যবাদ জানাই সকল পরিস্থিতি, সকল অবস্থান থেকে সব রকম অবস্থার মোকাবেলা করার জন্য। ধন্যবাদ জানাই এত অবহেলা, বঞ্চনার মাঝেও আমাদের পাশে থাকার জন্য।
Great salute for Pharmasits…

লিখেছেন – বনলতা

শিক্ষার্থী – ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

আমাদের সাথে ফেসবুক পেজে কানেক্ট থাকুন: মুক্তক্যাম্পাস

মুক্ত ক্যাম্পাস/কামরুজ্জামান/এমআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা যেভাবে রোজা রাখতে পারেন
পরবর্তী নিবন্ধলকডাউনে শিক্ষার্থীদের সময়কে কাজে লাগানোর কৌশল