নতুন শিক্ষাক্রমের চূড়ান্ত অনুমোদন, বাস্তবায়ন ২০২৩ থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০২২ | ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ
প্রাথমিকে প্যানেল নিয়োগের দাবি

প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। প্রাথমিকের, মাধ্যমিকের, কারিগরির ও মাদরাসা শিক্ষার নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা করে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং চলছে। আর ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগস্ট মাস থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হচ্ছে।

সোমবার (৩০ মে) বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম অনুমোদনের জন্য সভায় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি) ও জাতীয় শিক্ষা বিষয়ক উপেদষ্টা কমিটির যৌথ অংশগ্রহণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সভা শেষে শিক্ষা প্রশাসনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের কমিটির সবার সামনে প্রাথমিকের, মাধ্যমিকের, কারিগরির ও মাদরাসা শিক্ষার নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা করে সেগুলো বাস্তবায়নে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে পাইলটিং চলছে। প্রাথমিকের পাইলটিংও শুরু হবে। পাইলটিং নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এসব বিষয় নিয়ে সার্বিক আলোচনার পর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের চূড়ান্ত অনুমোদন, বাস্তবায়ন ২০২৩ থেকে

তিনি আরও বলেন, অনুমোদন পাওয়ায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ), মাদরাসা ও কারিগরির নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা যাবে। আর শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরেজমিনে পাইলটিং চলা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে মতামত জানার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন হবে। শিশুদের বিকাশে এ শিক্ষাক্রম সহায়ক হবে। বাচ্চারা নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে খুব খুশি।

‘তবে, শিক্ষকতার ধরণ কিছুটা বদলে যাবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের নতুন করে শিক্ষকতা শিখতে হবে’, যোগ করেন এ কর্মকর্তা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, নতুন কারিকুলামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়নে আর কোন বাঁধা নেই। আগামী বছর থেকে ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

জানা গেছে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দঘন শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ম ও ২য় শ্রেণি এবং ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি এবং ৮ম ও ৯ম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। এ শিক্ষক্রমের আওতায় ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসা হবে। নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিক পর্যায়ে অর্থাৎ নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের বিভাজন থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এ শিক্ষাক্রমে অনুমোদন দিয়েছেন।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন কারিকুলামে শিক্ষা হবে আনন্দঘন। এ কারিকুলামে মুখস্ত জ্ঞাননির্ভর শিক্ষা থেকে সরে এসে অভিজ্ঞতানির্ভর শিক্ষায় প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক শিখন নিশ্চিত করা হচ্ছে। পরীক্ষার বিষয় ও পাঠ্যপুস্তকের চাপ কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের মত কিছুটা সময় কাটাতে পারে তা নিশ্চিত করতেই নতুন কারিকুলাম। এতে শিক্ষাকে সহজ করা হচ্ছে।

নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের কারিকুলামে একটি কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থাকছে। নতুন কারিকুলামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া নতুন সিলেবাসে করোনা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। অন্যদিকে নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি, শিখন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা থেকে সরে এসে বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এ কারিকুলাম করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নতুন শিক্ষাক্রমে যেভাবে মূল্যায়ন :

প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, তৃতীয় শ্রেণির আগে স্কুলে কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। পুরোটাই হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান- এই বিষয়গুলোয় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ, আর সামষ্টিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) হবে ৪০ শতাংশ।

একইভাবে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। বাকি বিষয়গুলোয় সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ।

এ ছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতির মতো বাকি বিষয়গুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ১০০ শতাংশ।

নবম ও দশম শ্রেণিতে গিয়ে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ দশম শ্রেণির মোট ১০টি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটির পরীক্ষা হবে এসএসসিতে। বাকি বিষয়গুলোয় ১০০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন।

বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হয়। এখন গড়ে ৩২ কর্মদিবস লাগে এসএসসি পরীক্ষা নিতে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে পাঁচ কর্মদিবসেই পরীক্ষা নেয়া শেষ হবে।

শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, একাদশ ও দ্বাদশে আবশ্যিক বিষয়গুলোয় শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন ৭০ শতাংশ। প্রায়োগিক বা ঐচ্ছিক বিষয়গুলোয় শিখনকালীন মূল্যায়ন ১০০ শতাংশ। এই দুই শ্রেণিতে সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্প ও ব্যবহারিক ভিত্তিতেও শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে।

উচ্চ মাধ্যমিকে (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) ছয়টি বিষয়ে ১২টি পত্র থাকবে। একাদশ শ্রেণিতে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে বাংলা, ইংরেজি ও ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী যে শাখায় পড়বে, সেই শাখার প্রতিটি বিষয়ের প্রথম পত্রের (মোট তিনটি) পরীক্ষা হবে। অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে মোট ছয়টি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা হবে।

আর দ্বাদশ শ্রেণিতে নিজ নিজ শাখার তিনটি বিষয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পত্রের মোট ছয়টি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সম্মিলিত ফলের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানসহ আরও অনেকে।

প্রিয় পাঠক, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সর্বশেষ আপডেট পেতে মুক্ত ক্যাম্পাসের ফেসবুক পেজে লাইক দিন। লিঙ্ক : https://www.facebook.com/Muktocampus

পূর্ববর্তী নিবন্ধএইচএসসি ফর্ম ফিলাপ ২০২২ নোটিশ, আবেদন ফি, পদ্ধতি
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ই-রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ বাড়ল