তরুণরা এগিয়ে আসলে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ

মাহফুজুর রহমান
রবিবার, ২৩ আগস্ট ২০২০ | ১০:৫৫ অপরাহ্ণ | 210 বার পঠিত
তরুণরা এগিয়ে আসলে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ

ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার একটি দুর্গম গ্রাম বিসকা। সবুজ শ্যামল প্রকৃতিতে ঘেরা এই গ্রাম থেকে বেড়ে উঠা একজন সহকারী ব্যবস্থাপক শফিউল আলম। তার সাথে কথা হয় মুক্ত ক্যাম্পাসের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমানের। সেই আলোচনার সারাংশ পাঠকদের জন্য আজ তুলে ধরা হল:

মাহফুজ: আপনি যে গ্রাম থেকে বেড়ে উঠেছেন সেই গ্রামটি অনগ্রসর ও দুর্গম গ্রাম। সেখান থেকে সংগ্রাম করে আজকের এই পর্যায়ে আসা কতটুকু চ্যালেঞ্জিং ছিল?

শফিউল: আপনি ঠিক বলেছেন। আমাদের গ্রামটি অত্যন্ত দুর্গম। উন্নত রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নেই মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই আমি ছিলাম অদম্য, সফলতা অর্জনের তীব্র আকাঙ্কা ছিল আমার। তাই নানা প্রতিকূলতা জয় করে এগিয়ে যাওয়ার অভ্যাসটা আমি শৈশব থেকেই মনে প্রাণে লালন করেছিলাম।

মাহফুজ: সত্যিই অবাক লাগে আপনার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কথা শুনে। আপনার শিক্ষাগত জীবন সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন-

শফিউল: আমার শিক্ষা জীবনের কথা যদি বলি সেটা অনেক ইতিহাস। তবে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ছারছীনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদরাসা থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অত্যন্ত সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হই। এরপর আমার ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। এজন্য আমি দিনরাত পড়াশোনা চালিয়ে যেতাম। নানা প্রতিকূলতা ও ঘাত প্রতিঘাত জয় করে আমি চান্স পেয়ে গেলাম প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে। তারপর থেকেই আমার জীবনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প মূলত শুরু।

মাহফুজ: বর্তমানে আপনার কর্মস্থল কোথায় এবং কর্মজীবনে আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট?

শফিউল: বর্তমানে আমি দেশের অন্যতম রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। এখানে আমি অনেক ভাল পরিবেশ পেয়েছি এবং আমি মনে করি এখানে আমার মেধা বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে আমি আরো অনেক উচ্চ পর্যায়ে যেতে চাই।

মাহফুজ:আপনার এই সফলতার পেছনে কাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এবং তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কি বলবেন?

তরুণরা এগিয়ে আসলে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ

শফিউল: ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এখনো সফলতার চূড়ায় আমি উঠিনি। আমাকে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে জীবনে যতটুকু অর্জন করেছি সেটার জন্য মূল অনুপ্রেরণা ছিল আমার মা-বাবা। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আমি বলব, তোমরা বাবা মাকে শ্রদ্ধা করো। সকল প্রকার প্রতিকূলতা জয় করে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তোমাদের হৃদয়ে মনেপ্রাণে লালন করো। তরুণেরা এগিয়ে আসলে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ। তোমরা সুশিক্ষা অর্জন করো। সেই সাথে মাদকসহ সকল প্রকার অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকো। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হও। তোমাদের জন্য রইল নিরন্তর শুভ কামনা।

মাহফুজ: আপনার গ্রাম তথা ইউনিয়নের কেউ যদি সফলতা অর্জন করে তখন আপনার কাছে কেমন লাগে?

শফিউল:সত্যি বলতে কি এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আমি সবসময় গর্বের সাথে বলি আমার এলাকা থেকে অনেকেই স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সেই সাথে দেশে বিদেশে অনেকেই উচ্চ পর্যায়ে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। সত্যি কথা বলতে হলে বলব বিসকা গ্রাম শুধু একটি গ্রাম নয়; এটি আমার কাছে এক বিশেষ অনুভূতিও বটে।

মাহফুজ: আপনি যেই গ্রাম থেকে বেড়ে উঠেছেন সেটি অত্যন্ত দুর্গম ও অনগ্রসর একটি গ্রাম।একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এক্ষেত্রে আপনার ভৃমিকা কি?

শফিউল: আমার গ্রামের রাস্তাঘাটের বেহালদশা ও কিছু মানুষ এখনো অসহায় ও সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত। ছোটবেলা থেকেই এগুলো দেখে আমি অভ্যস্ত। আমি এলাকার অসহায় ও সুযোগসুবিধা বঞ্চিত এসকল মানুষের পাশে থাকতে চাই। আর রাস্তাঘাটের কথা যদি বলি সেটা মূলত সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের কাজ। তবে সরকার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে সমন্বয় করে ভবিষ্যতে এলাকার উন্নয়নে আমি অবদান রাখতে চাই। এক্ষত্রে এলাকার সকলের সার্বিক সহযোগিতা আমার কাম্য।

মাহফুজ: কর্মজীবনে আপনাকে অনেক জায়গায় যেতে হয়। তবে আপনার যেই গ্রামে জন্ম সেই গ্রামের প্রকৃতি আপনাকে কতটুকু টানে?

শফিউল: নিজের এলাকার প্রতি সবারই আলাদা একটা আকর্ষণ থাকে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। বিসকা গ্রামের সবুজ শ্যামল প্রকৃতি আমাকে সবসময় বিমুগ্ধ করে। এলাকার কথা মনে পড়লে আমি আসলে অনেক বেশি আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। কবির ভাষার সাথে মিল রেখে যদি বলি তাহলে বলব আবার আসিব ফিরে এই বিসকা গ্রামে হয়ত মানুষ নয়, শঙ্খচিল শালিকের বেশে, হয়তোবা ভোরের কাক হয়ে নয়তবা কোন এক কার্তিকের নবান্নের বেশে। এই গ্রামের প্রকৃতির কথা, মাটি ও মানুষের কথা সর্বদাই আমাকে খুব আকর্ষণ করে। আমাদের ইউনিয়নের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরন্তর শুভ কামনা রইল।

মাহফুজ: আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভাল লাগল। আপনার জন্য অশেষ শুভকামনা রইল।

শফিউল: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

মুক্ত ক্যাম্পাস/মাহফুজ/জেডআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবিলম্বে বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহার দাবি
পরবর্তী নিবন্ধঅবৈধ সম্পদ অর্জন: স্ত্রীসহ ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে মামলা