বরেণ্য অভিনেতা ড. ইনামুল হক আর নেই

বিনোদন ডেস্ক
সোমবার, ১১ অক্টোবর ২০২১ | ৫:১১ অপরাহ্ণ
বরেণ্য অভিনেতা ড. ইনামুল হক আর নেই

দেশ বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব ড. ইনামুল হক আর নেই। আজ দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে বেইলি রোডের নিজ বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মেয়ে হৃদি হকের স্বামী অভিনেতা লিটু আনাম মৃত্যুর সংবাদটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ড. ইনামুল হক বাসাতেই ছিলেন, হঠাৎ পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর দ্রুত তাকে রাজধানীর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তার অপর মেয়ে প্রৈতি হকের স্বামী অভিনেতা সাজু খাদেম বলেন, ‘বাবা সকালে বেশ সুস্থ ছিলেন। দুপুরে বাসাতেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুপুরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বেলা ৩টার দিকে চিকিৎসকরা জানান, তিনি মারা গেছেন।’

অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম জানান, ড. ইনামুল হকের মৃতদেহ কোয়ান্টামে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষ করে নিয়ে যাওয়া হবে বেইলি রোডের বাসায়। এরপর শিল্পকলা একাডেমিতে নেওয়া হবে। তবে কোথায়, কখন দাফন করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

ড. ইনামুল হকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী সদরের মটবী এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। ফেনী পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি শেষ করে ১৯৬৫ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রসায়ন বিভাগে। ১৯৮৭ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন তিনি।

১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন আন্দোলনমুখী নাটকে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে আইয়ুব খানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তৎকালীন অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন নাট্যচর্চাকে হাতিয়ার করে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সৃজনীর ব্যানারে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পথনাটক করেন।

ড. ইনামুল হকের অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। তার প্রথম অভিনীত টেলিভিশন নাটক ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’। এটি প্রযোজনা করেন মুস্তাফা মনোয়ার। নাট্যকার হিসেবে তার পথচলা শুরু ওই বছরই। ১৯৬৮ সালে তার প্রথম লেখা নাটক ‘অনেকদিনের একদিন’ বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রচারিত হয়। নাটকটির প্রযোজনায় ছিলেন আরেক বর্ষীয়ান কিংবদন্তি আবদুল্লাহ আল মামুন।

এ পর্যন্ত টেলিভিশনের জন্য ৬০টি নাটক লিখেছেন তিনি। তার লেখা আলোচিত টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সেইসব দিনগুলি’ (মুক্তিযুদ্ধের নাটক), ‘নির্জন সৈকতে’ ও ‘কে বা আপন কে বা পর’। মঞ্চের জন্য প্রথম লেখা নাটকের নাম ‘বিবাহ উৎসব’। এটি লিখেছিলেন উদীচীর জন্যে। তার নিজ দল নাগরিক নাট্যাঙ্গনের জন্য প্রথম লেখা নাটকের নাম ‘গৃহবাসী’। ১৯৮৩ সালে লেখা হয় নাটকটি। ঢাকার মঞ্চে বেশ আলোচিত নাটক এটি।

গুণী এই অভিনেতার পুরো পরিবারই নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার স্ত্রী লাকী ইনামও কিংবদন্তি অভিনেত্রী। মেয়ে হৃদি হকও নির্দেশক এবং অভিনেত্রী। তার জামাই অভিনেতা লিটু আনাম। ড. ইনামুলের অপর মেয়ে প্রৈতি হকের স্বামী সাজু খাদেম।

নাটক-আত্মজীবনী লেখা, বই পড়া ছাড়াও বাসায় নাতি-নাতনিদের সঙ্গে গল্প করেও সময় পার করতেন ড. ইনামুল হক। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘পড়ার জন্য কতো বই রয়েছে! লেখার কতো কী বাকি! অনেক কিছুই বাকি রয়ে গেল!’

২০১২ সালে ড. ইনামুল হক একুশে পদক লাভ করেন। ২০১৭ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে সরকার।

প্রিয় পাঠক, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সর্বশেষ আপডেট পেতে মুক্ত ক্যাম্পাসের ফেসবুক পেজে লাইক দিন। লিঙ্ক : https://www.facebook.com/Muktocampus

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে করোনায় মৃত্যু আরও কমেছে, বেড়েছে শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধকুবিতে সম্মিলিত আঞ্চলিক জোটের নতুন কমিটি গঠন