এবার স্বল্পমূল্যের ভেন্টিলেটর তৈরী করলো ডিআইইউ

মোঃ কামরুজ্জামান, ডিআইইউ প্রতিনিধি
শনিবার, ২৩ মে ২০২০ | ৫:০৫ অপরাহ্ণ | 164 বার পঠিত

করোনার এই ক্রান্তিকালে দেশের মানুষকে সাহায্যের জন্য আরেকবার নিজেদের মেধা ও শ্রমের প্রমাণ দিল ডিআইইউ (ঢাকা ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি)। বাংলাদেশে করোনা সংকটের শুরুর দিকে ডিআইইউ এর ফার্মেসি ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষার্থীরা হ্যান্ড স্যনিটাইজার তৈরী করে বিনামূল্যে বিতরণ করেছিল। তারপর থেকেই ডিআইইউ এর সিএসই ডিপার্টমেন্ট, এএনটিটি রোবোটিকস লিমিটেড ও এআইএমএস ল্যাব এর সাথে ভেন্টিলেটর নিয়ে কাজ শুরু করে।

করোনার চিকিৎসায় সারাবিশ্বেই ভেন্টিলেটরের ব্যাপক চাহিদা দেখা দিয়েছে। কিন্তু উন্নত বিশ্বেই এ ভেন্টিলেটর সরবরাহের অপ্রতুলতা দৃশ্যমান। এমনই সংকটময় মুহূর্তে দেশকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্ট। উদ্যোক্তাদলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ভেন্টিলেটরটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে। ট্রায়াল শেষে তারা প্রতি সপ্তাহে ২০টি করে ভেন্টিলেটর সরবারহ করতে পারবে বলে জানিয়েছে।

এই ভেন্টিলেটরটি সম্পূর্ণ দেশীও প্রযুক্তিতে তৈরী করা হয়েছে যেন কম খরচে সরবারহ করা যায়। প্রতিটি ভেন্টিলেটর ৪০ হাজার টাকার মধ্যেই সরবরাহ করা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্ট এর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম রাহাত ভেন্টিলেটরটি নিয়ে কাজ করার আগে ও রিইউজেবল মাস্ক তৈরী করেছিলেন। এবং এএনটিটি রোবোটিকস লিমিটেড কোম্পানি টি একটি বাংলাদেশি রোবট ও আইওটি ডিভাইস নির্মাতা কোম্পানি। যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে সাহায্য করা ও ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখার জন্য ২০১৭ সাল থেকেই বিভিন্ন ধরনের এডুকেশনাল রোবট ও আইওটি ডিভাইস বানিয়ে আসছে।

সিএসই ডিপার্টমেন্টের সহকারী অধ্যাপক মোঃ তাহজীব উল ইসলাম জানান, দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে অন্য অনেকের মতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও নানানভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে আসছে।

তিনি বলেন, করোনাক্রান্তদের পাশাপাশি এই মুহুর্তে ডাক্তার, নার্স ও অন্যসকল স্বাস্থ্যকর্মীরা ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই আমরা শুরু থেকেই একটি ভিন্নভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই ডিপার্টমেন্টকিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আসলে কম্পিউটার টেকনোলজি নিয়ে মরণঘাতী জীবাণুর মোকাবেলা করার কথা ভাবাটাও অনেক বড় একটা ব্যাপার। এরই মাঝে মার্চের ১৮-১৯ তারিখের দিকে আমার এক ছাত্র কাবিদ হাসান আমাকে একটা ছবি দেখালো। যেখানে দেখা যায় যে এক্সরে ইমেজের উপর COVID-19 এর ডিটেকশন করে প্রেডিকশন পারসেন্টেজ দেখাচ্ছে। আমাকে বলল যে স্যার মেশিন লার্নিং এর ইমেজ ক্লাসিফিকেশন নিয়ে কাজ করছি, কিন্তু আমার ল্যাপটপ টা দিয়ে অনেক স্লো হচ্ছে, আপনার ল্যাপটপ টা দিয়ে একটু কাজ করবো। পরদিন এসে সে আমার ল্যাপটপে কাজ করে এবং সেখানে প্রথমবারের মতো এ কাজে সফলতা আসে। সঠিকভাবে COVID-19 এবং সাধারণ মানুষের বুকের এক্সরে এর ডিটেকশন করতে পারে।

অনলাইনে ওপেনসোর্স একটা ডাটাসেট নিয়ে এই কাজটা করা হয়েছে। সেখানে অধিকাংশই ইতালি, চায়না কিংবা কোরিয়ার COVID-19 রোগীদের বুকের এক্সরের ছবি রয়েছে। পরিমাণে যা অনেক কম। তাও আমরা চেষ্টা করেছি সীমিত ডাটা থেকে মডেল তৈরি করার জন্য। এতে করে একুরেসি স্বাভাবিকভাবেই কম থাকবে। এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর ছবি সম্বলিত ডাটাসেট। এখন পর্যন্ত একটা বুকের বা ফুসফুসের এক্সরে ছবি দিলে আমাদের মডেল বলে দেবে COVID-19 এ আক্রান্ত হবার আশংকা কতটুকু। আমি পরে আরো জানতে পারি, ঢাবির আইআইটি ও ড্যাফোডিল থেকেও একই ধরণের আরো কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়া, চায়না, কানাডা, জার্মানিতেও একই বিষয়ের উপর গবেষণা চলছে। তবে এটা শতভাগ সঠিক নয়। এবং এটা ব্যাবহার করার মতো সময় এখনো আসে নি। ডাক্তার এবং মেডিকেল সাইন্টিস্ট দের মতামত ছাড়া এটার বিচার করাটা সমীচীন হবে না। এখন ডাক্তারদের পরীক্ষিত উপায়েই এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পরীক্ষা করাই বেটার হবে। যদি আল্লাহ না করুক দেশে ভয়াবহ ভাবে ছড়িয়ে পরে তখন এই ক্লাসিফিকেশন মডেল ব্যবহার করে ডাক্তারদের কাজে সহায়তা করা যাবে হয়তো। পুরোপুরি এর উপর নির্ভরশীল হবার মতো সময় এখনো হয়নি।

তিনি আরও বলেন, তবে স্বল্প ডাটা নিয়ে কাজ করলেও এখনো যথেষ্টই ভালো একুরেসি পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন ডাটাসেটে নতুন ডাটা যুক্ত হচ্ছে এবং এতে করে আমাদের মডেলও আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। এখনো আমরা কাজ করছি এর ভুল ত্রুটিগুলো নিয়ে। GPU ব্যবহার করে আরো দ্রুত এবং আরও নিখুঁত কাজ করার চেষ্টা চলছে। সম্পূর্ণ কাজটা আমার নিজস্ব তত্বাবধানে হচ্ছে। কাজ করছে আমাদের ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্ট এর প্রাক্তন দুই শিক্ষার্থী কাবিদ হাসান এবং সাজিয়া রহমান। আমরা চাই ভবিষ্যতে ও এধরনের দূর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো এক হয়ে কাজ করবে। হাত পা গুটিয়ে বসে থাকার চেয়ে আমরা চেষ্টা করছি এই ভরসাটা দেয়ার চেষ্টা করছি। আর গবেষণা খাতেও বাংলাদেশের জন্য এটা একটা নতুনমাত্রা যোগ করবে বলে বিশ্বাস করি।

প্রিয় পাঠক, দেশ বিদেশের সর্বশেষ আপডেট পেতে আমাদের সাথে ফেসবুক গ্র‌ুপে যুক্ত থাকুন: মুক্ত ক্যাম্পাস গ্রুপ

মুক্ত ক্যাম্পাস/কামরুজ্জামান/এসএম

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকটি জীবন্ত লাশের গল্প
পরবর্তী নিবন্ধচাঁদ দেখা যায়নি, সোমবার ঈদ