একটি জীবন্ত লাশের গল্প

মোঃ কামরুজ্জামান:
শনিবার, ২৩ মে ২০২০ | ৪:৫৪ অপরাহ্ণ | 179 বার পঠিত

 ক্লান্ত বিষন্ন ভগ্নহৃদয় শুধু ভেবে যায় ছাড়া পাবো কি? আমি কি আবারও আমার পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যেতে পারবো? হয়তো হ্যাঁ অথবা না। কিন্তু মন বলছে আমি আর বেঁচে নেই, যেভাবে আছি একে ঠিক বেঁচে থাকা বলেনা। করোনা পজিটিভ হয়ে আইসিইউতে পড়ে আছি কেউ একটি বারও দেখতে আসলো না।

এইতো সেদিন আমার পিচ্চি মামুনিটা বলছিলো, আব্বু আব্বু তুমি আমার সেরা আব্বু। তোমাকে একদিন না দেখলে আমি থাকতেই পারিনা, মনে হয় তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি। সেই ছোট্ট সোনামণিটা কি আমাকে ভুলে গেলো সামান্য এই ভাইরাসের জন্য। আমার স্ত্রী মেঘা তাকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি, সে আমাকে প্রচুর ভালোবাসে। সে একদিন বলছিলো, একমাত্র মৃত্যু আমাদের আলাদা করতে পারবে আর কিছুনা। আমি ত এখনও মরে যাইনি তবে কেন সে আমার পাশে নেই? কতইনা মধুর ছিল জীবন। আজ নিজেকে অপরাধী মনে হয়, কিন্তু আমি ত কোনো অপরাধ করিনি। নিয়তি আমাকে আজকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। বেঁচে আছি কিন্তু মনে হচ্ছে আমি বেঁচে নেই। আমাকে ছাড়া বন্ধুদের কোনো আড্ডা জমতো না। বাসার নিচে চায়ের দোকানী মামা বলেন, মামা আপনাকে চা না খাওয়ালে আমার দিন ভালো যায় না।

বাবার ব্লাড প্রেসারটা বোধ হয় বেড়ে গেছে। উনি হয়ত বিড়বিড় করে বলছেন বাবু এখনও হাত খরচার টাকা টা দিচ্ছেনা কেন? আমার মা জননী হয়ত পথ চেয়ে আছেন ঈদের ছুটিতে আমি আসবো। আমাকে উনি নিজের হাতে বানানো সেমাই খাইয়ে ঈদের নামাজ পড়তে মাঠে পাঠাবেন। ইদানিং বাসায় একটা বিড়াল ছানা আসতো মাঝে মাঝে। হয়ত কেউ রেখে চলে গেছে আমার বাসার সামনে। বাচ্চা টা কি এখনও আসে? এখন নিশ্চয়ই আমাদের বাসাতেই সবসময় থাকে। আমার স্ত্রী খুব পছন্দ করে বিড়াল। বাসার ছাদে একটা নতুন ফুলের টব এনেছি এতদিনে হয়ত ফুল ফুটেছে নিশ্চয়ই। বাসার কাজের মেয়ে আমেনা অনেকদিন থেকেই বলছে ভাইজান কিছু টাকা দিবেন আমার মা খুব অসুস্থ দেখতে যাবো।

বেতনটা পাইনি বলে দিতে পারলাম না।পরে ভাবলাম অসহায় মেয়ে মা কে দেখতে যাবে, তাই আনিছ সাহেবের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে দিলাম। সে অনেক খুশি হয়ে আমাকে সালাম করলো। না আর ভাবতে পারছিনা। অনেক ঘুম পাচ্ছে আমার, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবারও ঘুম ভেঙে যাবে। একটা দীর্ঘ ঘুম হচ্ছেনা কিছুতেই। জানালার ফাঁক দিয়ে একটু আকাশ দেখা যাচ্ছে। একটু পরেই অন্ধকার নেমে আসবে এ ধরায়, নিস্তব্ধ হয়ে যাবে পুরো পৃথিবী।

লিখেছেন – মোঃ কামরুজ্জামান, শিক্ষার্থী

সিভিল বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

প্রিয় পাঠক, দেশ বিদেশের সর্বশেষ আপডেট পেতে আমাদের সাথে ফেসবুক গ্র‌ুপে যুক্ত থাকুন: মুক্ত ক্যাম্পাস গ্রুপ

মুক্ত ক্যাম্পাস/এমআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধলিভার জটিলতায় জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধএবার স্বল্পমূল্যের ভেন্টিলেটর তৈরী করলো ডিআইইউ