ডিগ্রির ৮৪১ তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হচ্ছেন

এমসি রিপোর্ট
বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট ২০২১ | ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ | 6703 বার পঠিত
আরও ৪৩ শিক্ষক এমপিওভুক্ত হচ্ছেন

এক দশকের বেশি সময় বিনা বেতনে চাকরি করা শিক্ষকদের মানবেতর জীবন যাপনের অবসান হতে চলেছে। দীর্ঘদিন লড়াই সংগ্রামের পর অবশেষে এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় শিক্ষক রা। তাদের এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের সর্বশেষ সংশোধিত জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় তৃতীয় শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা না হলেও এমপিওভুক্তির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেলেই অন্তত ৮৪১ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হবে। এদের এমপিওভুক্ত করা হলে বছরে ২৫ কোটির বেশি টাকা খরচ হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বিনা বেতনে চাকরি করা শিক্ষকদের মানবেতর জীবন যাপনের অবসান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর বাইরে পরবর্তীতে যারা এ স্তরে নতুন করে নিয়োগ পাবেন তারাও এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, দেশের বেসরকারি কলেজগুলোয় ডিগ্রির তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে আর্থিক বিষয় জড়িত। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছিল না। এজন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির জন্য একটি চিঠি দিয়েছি। অর্থ বিভাগের অনুমোদন পেলে তাদের (তৃতীয় শিক্ষক) এমপিওভুক্ত করা হবে।

গত ২ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি স্তরের প্রতিটি ঐচ্ছিক বিষয়ে দুই জন শিক্ষকের নিয়োগসহ এমপিওভুক্তির বিধান রয়েছে। অপরদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অধিভুক্তি সংক্রান্ত রেগুলেশন অনুযায়ী ডিগ্রি স্তরে প্রতি ঐচ্ছিক বিষয়ে তিনজন শিক্ষক নিয়োগের বিধান আছে। এই বিধান থাকলেও তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা যাচ্ছে না।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের আদেশ অনুযায়ী- ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ডিগ্রি স্তরের ১৫৩ জন তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়। এছাড়া ২০১৮ সারের ২৮ আগস্ট ২০১০ সাল পর্যন্ত বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। অপরদিকে ২০১০ সালের পর বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত আনুমানিক ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষক রয়েছেন। এ সংখ্যক শিক্ষক এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। এরা অর্থ বিভাগ কর্তৃক জনবল কাঠামোভুক্ত নয়। যে কারণে তৃতীয় শিক্ষকদের কাম্য যোগ্যতা, বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও কর্মরত থাকা সাপেক্ষে এমপিওভুক্তিকরণে অর্থ বিভাগের সম্মতির অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী, ডিগ্রি পর্যায়ে প্রতিটি ঐচ্ছিক বিষয়ে অনুমোদন পেতে হলে তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। বিষয় প্রতি তিন জন শিক্ষক নিয়োগ না দিলে প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি নবায়ন করা হয় না। ফলে নিরুপায় হয়ে ডিগ্রি কলেজগুলো বিষয় প্রতি তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় দুই জন শিক্ষককে এমপিওভুক্তি করে। ফলে অপর শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করেও বছরের পর বছর যাবত সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না। অনেক কলেজে নামমাত্র বেতন দিলেও তারা মানবেতর জীবন যাপন করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরেই এসব শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। এর আগেও নানাভাবে তাদের এমপিওভুক্তির আশ্বাস দেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি জারি করা জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় তৃতীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টির আশ্বাস দিলেও তা উপেক্ষিত থাকে। তারা নিরুপায় হয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করলে এমপিওভুক্তি দিতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সাল থেকে ডিগ্রি পর্যায়ের তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া শুরু হয়। ২০১১ সাল পর্যন্ত এসব শিক্ষককে নিয়মিত এমপিওভুক্তি দেয়া হতো। কিন্তু ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় নন-এমপিও শিক্ষকদের নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই আদেশে বলা হয়েছিল, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক) শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবলকাঠামো সম্পর্কিত নির্দেশিকা ২০১০-এ যা-ই থাকুক না কেন, পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত শ্রেণি, শাখা/বিভাগ খোলার ক্ষেত্রে নিযুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। এই প্রজ্ঞাপনের পর থেকে ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক রুমানা পারভীন ২০১৯ সালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে তাদের এমপিওভুক্ত করার আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) চিঠি দিয়ে তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে মতামত জানতে চান। মাউশির মতামতে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজের জনবলকাঠামো-২০১০ প্রকাশের পর বিধি মোতাবেক সারা দেশে ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের এমপিওভুক্ত করা হলে সরকারের বার্ষিক ২৫ কোটি এক লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয় হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, শিক্ষার মান রক্ষায় ডিগ্রিতে প্রতি বিষয়ে তিন জন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সে হিসেব বিবেচনায় ডিগ্রি খোলার শর্ত হিসেবে বিষয়ভিত্তিক তিন জন শিক্ষকের কথা বলা হয়েছে এবং তারা সবাই এমপিওভুক্তির দাবি রাখে।

প্রিয় পাঠক, মুক্ত ক্যাম্পাসের সর্বশেষ আপডেট পেতে এখানে ক্লিক করুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন উপ-উপাচার্য পেল প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় শোক দিবসে ঢাবির কর্মসূচি ঘোষণা