বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে গত বছর ২০ হাজার আশ্রয়ের আবেদন পেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপের আশ্রয় বিষয়ক সংস্থা ইইউএএ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে আশ্রয় চাওয়াদের প্রধান গন্তব্য- ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেন।
প্রতিবেদনে ইইউএএ জানায়, ১ লাখ ১৭ হাজার সিরীয় ও ১ লাখ ২ হাজার আফগান নাগরিক এ বছর ইউরোপে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। এরপর যেসব দেশ থেকে বেশি আবেদন পড়েছে সে দেশগুলো হলো- ইরাক, পাকিস্তান, তুরস্ক ও বাংলাদেশ। আবেদনকারীদের প্রধান গন্তব্য- ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেন।
আবেদনকারীদের অর্ধেকের বয়স ১৮ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। এর ৭০ শতাংশ পুরুষ। প্রতি দশটি আবেদনের মধ্যে প্রায় তিনটি আবেদন অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে এসেছে এবং মোট আবেদনের চার শতাংশ আবেদন পড়েছে অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্কদের তরফ থেকে।
এসব আবেদনের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার মানুষকে এরই মধ্যে আশ্রয় বা সুরক্ষা দিয়েছে ইউরোপ। এছাড়া প্রায় ৭ লাখ ৭০ হাজার আবেদনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থী ২০ হাজার বাংলাদেশি
রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানের মূল বক্তা এবং ইইউএএর নির্বাহী পরিচালক নিনা গ্রেগোরি বলেন, ২০১৫–২০১৬ সালে সিরিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট শরণার্থী সংকটের পর গত বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছে। রিপোর্টে তিনটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে; অভিবাসীদের ওপর বেলারুশ সরকারের নিপীড়ন, আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ।
নিনার মতে, আন্তর্জাতিক কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ ২০২১ সালে ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। ফলে আবেদনকারীদের সংখ্যা করোনা সংক্রমণের আগের পর্যায়ে ফিরে গেছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আবেদনকারীর হার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের দিকে সংখ্যাটি বাড়তে থাকে।
বিশেষ করে আফগানিস্তান ও সিরিয়া থেকে দলে দলে ইউরোপে প্রবেশের কারণে সংখ্যাটি হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে।
রিপোর্ট বলছে, আশ্রয়প্রার্থীর আবদনের তালিকার শীর্ষ রয়েছে সিরিয়া। সে দেশের ১ লাখ ১৭ হাজার নাগরিক ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। সিরিয়ার পরের অবস্থানে আফগানিস্তান। দেশটির ১ লাখ ২ হাজার নাগরিক ইউরোপের দেশে দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন। সেই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক। দেশিটর ৩০ হাজার নাগরিক ইউরোপে আশ্রয় চেয়েছে। পাকিস্তান ও তুরস্ক যুগ্মভাবে চতুর্থ অবস্থান দখল করেছে। গড়ে দেশ দু’টির ২৫ হাজার নাগরিক ইউরোপে ঢুকে আশ্রয় চেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার ইকোনমিক রাইজিং স্টার বাংলাদেশের ২০ হাজার নাগরিক জীবনের মায়া ত্যাগ করে নানাভাবে (ঝঞ্ঝাট পেরিয়ে) ইউরোপে ঢুকেছে, যাদের উল্লেখযোগ্য অংশের আশ্রয়ের আবেদন ঝুলে গেছে!
ইইউর রিপোর্ট বলা হয়, ২০২১ সালে ৬ লাখ ৪৮ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর আবেদনের মধ্যে ৫ লাখ ৩৫ হাজার আবেদন প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজারকে শরণার্থীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সম্পূরক সুরক্ষা দেয়া হয়েছে ৬৪ হাজারকে। রিপোর্টের দাবি, সর্বোচ্চ ১ লাখ ৯১ হাজার আশ্রয় প্রার্থী ফ্রান্সে থিতু হতে চেয়েছেন। ৬৫ হাজার আশ্রয় চেয়েছেন স্পেনে আর ইতালিতে পড়েছে ৫৩ হাজার আবেদন।রিপোর্ট বলছে, আবেদনকারী ৭০ শতাংশই পুরুষ। ৬ লাখ ৪৮ হাজার আবেদনকারীর অর্ধেকের বয়স ১৮-৩৪ । মোট আবেদনকারীদের ২৯ শতাংশের বয়স ১৯ বছরের কম। সঙ্গীহীন কিশোরের মধ্যে দুই–তৃতীয়াংশের বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছর।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল—এই পাঁচ বছরে ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন প্রতিবছর (গড়ে) ১১ হাজারের বেশি। করোনা সংক্রমণের শুরুর বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সংখ্যাটি ছিল ১১ হাজার ৫৭০ জন। এ ছাড়া ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত চার বছরে আবেদনের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৫ হাজার, ১৮ হাজার ৮৬৫, ১৩ হাজার ৭৪০, ১৫ হাজার ৮৪৫ এবং ১১ হাজার ৫৭০ জন।
সঙ্গীহীন কিশোর–কিশোরীর আবেদনে শীর্ষ তিন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে। তবে তা তালিকার ৩ নম্বরে আছে। ইউরোপে আশ্রয়ে আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায়ও রয়েছে বাংলাদেশ। ওই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম!
বাংলাদেশের আগে আছে আরও ৪ টি দেশ। সিরিয়া, পাকিস্তান, কলম্বিয়া ও নাইজেরিয়া। বাংলাদেশের ১৫ হাজার ৯৩৫ নাগরিকের আবেদন ইইউতে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
প্রিয় পাঠক, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সর্বশেষ আপডেট পেতে মুক্ত ক্যাম্পাসের ফেসবুক পেজে লাইক দিন। লিঙ্ক : https://www.facebook.com/Muktocampus