আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর

মো. আরিয়ান আরিফ, ভোলা:
মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০১৯ | ১২:১০ অপরাহ্ণ | 171 বার পঠিত

‘ভয়াল ১২ নভেম্বর’ আঁতকে ওঠা একটি দিনের নাম, মহাপ্রলয়ের নাম। ১৯৭০ সালের এই প্রলয় আজো বিশ্ব ইতিহাস। বছর ঘুরে আবার এসেছে সেই শোকের দিন।

সেদিন উপকূল পরিণত হয়েছিল এক মহামৃত্যুপুরীতে। এক রাতের প্রলয়ে প্রাণ হারিয়েছিল দশ লক্ষাধিক মানুষ। পুকুর-ডোবা, খাল-বিল এমনকি গাছের ডালে লাশ ঝুলে থাকার দৃশ্য দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বহু মানুষ সবকিছু হারিয়ে পথে বসেছিলেন।

‘ভোলা সাইক্লোন’ নামের এই ঘূর্ণিঝড়টি প্রচন্ড শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করে। যথাযথভাবে সঠিক আবহাওয়া বার্তা পাওয়া যায়নি, ছিল না আজকের মতো কোনো আশ্রয়কেন্দ্র, বা বেড়িবাঁধ।

রাস্তাঘাটের ছিল খুবই নাজুক অবস্থা। এর ফলে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। জাতিসংঘ এই ঘূর্ণিঝড়কে পৃথিবীর ইতিহাসে এ যাবৎকালে সবচেয়ে বিধ্বংসী বলে আখ্যায়িত করেছে।

দাবি উঠেছে, ১২ নভেম্বরই হোক উপকূলবাসীর দিন, উপকূল দিবস। একটি দিবস উপকূলকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারে। উপকূল সুরক্ষার কথা যেমন হতে পারে, তেমনি জনগোষ্ঠীর অধিকার ও ন্যায্যতার কথাও আলোচনা হতে পারে এই দিবসে। আবার সেদিনের প্রয়াত মানুষদের স্মরণও হতে পারে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন জনপদের বয়সী ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে সেদিনের ভয়াবহতা ধারণা করা যায়। তারা বলেছেন, হঠাৎ করে কীভাবে পানি বেড়ে গেছে তা কেউ বলতে পারেন না।

দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আসা প্রবল বাতাসের সঙ্গে ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, সেইসঙ্গে অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে পানি। মানুষগুলো প্রথমে ঘরের ভিটিতে, পরে ঘরের মাচায়, এরপর গাছের চালায় আশ্রয় নেয়। পানির প্রবল তোড়ে ঘরের চালা ভাসিয়ে নিয়ে বহু মানুষ ভেসে যায়।

অনেকে ঘরের চালার ওপর ভেসে বাঁচার চেষ্টা করেছে, অনেকে আবার গাছের ডাল ধরে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। প্রায় ১৭-১৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় গোটা উপকূল এলাকা । এ অবস্থা দীর্ঘক্ষণ চলার পর বৃষ্টি ও বাতাস থেমে যায়। সকলে ভেবেছেন ঝড় থেমে গেছে।

কিন্তু খানিক বিরতির পর উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আরও তীব্র বেগে আসা ঝড়ো হাওয়ায় সব ভাসিয়ে নেয়। ভাটার টানে পানি নেমে যায় সমুদ্রে। সেইসঙ্গে পানির স্রোতে টানে ভেসে যায় মানুষজন, গবাদি পশু, ঘরবাড়ি।

পরেরদিন ভোরে পুব আকাশে ঝকঝকে সূর্য উঁকি দিলে ভয়াল চিত্র স্পষ্ট হতে থাকে। চারিদিকে চোখে পড়ে শুধু লাশ আর লাশ। বেঁচে থাকা মানুষেরাও অনেকটা মৃতের মতোই বেঁচেছিলেন।

’৭০-এর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে চরম সংকট নেমে আসে উপকূলীয় জন-জীবনে। বহু মানুষ সারাজীবনের গচ্ছিত সহায়-সম্পদ হারিয়ে পথে বসে। পরিবারের সকলকে হারিয়ে অনেকে নির্বাক হয়ে যায়। অধিকাংশ মানুষ আবার শূন্য থেকে জীবন শুরু করে।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার থেকে যথাযথভাবে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা আসেনি। ঘূর্ণিঝড়ের এক সপ্তাহেও উপকূলের বিপন্ন এলাকার অনেক স্থানে পৌঁছেনি ত্রাণ সহায়তা। রোগবালাই দেখা দিলেও চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। শিশুদের অনেকেই ঝড়ে বেঁচে থাকলেও চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।

বহু বাড়িতে পুরুষেরা বেঁচে থাকলেও অসংখ্য পরিবারে নারীরা বেঁচেছিলেন না। ফলে ঘরের কাজ করতে গিয়ে চরম সংকটে পড়েন বেঁচে থাকা পুরুষেরা। বেঁচে থাকা মানুষেরা অতিকষ্টে আবার নতুন করে জীবন শুরু করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

মুক্ত ক্যাম্পাস/আরিয়ান/জেডআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১৬, আট জনের পরিচয় মিলেছে
পরবর্তী নিবন্ধ‘উপকূল দিবসে’র দাবিতে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে আলোচনা সভা