বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দায়সারা ভাবে উদযাপন করা হয়েছে মহান বিজয় দিবস। দিনটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে কোন আলোকসজ্জা ছিল না। বলা যায় অন্ধাকারেই থেকেছে পুরো ক্যাম্পাস। এই বিশেষ দিনেও ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেদিনেও ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন উপাচার্য। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে চলছে নিন্দার ঝড়।
জানা যায়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কোন আলোকসজ্জা কিংবা সাজসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়নি ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক, একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবনে নেই আলোকসজ্জা। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন স্বাধীনতা স্মারকে দায়সারাভাবে সামান্য লাল সবুজ কাপড়ে মোড়ানো হয়েছে। জাতীয় এমন দিবসগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন উদাসীনতায় ফুসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুলেছে নিন্দার ঝড়। জাতির এমন গর্বের দিনেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসকের অনুপস্থিতি এবং প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ড মূলত মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের অবমাননার সামিল বলেও মনে করছেন অনেকে।
আরও জানা যায়, দিবসটি উপলক্ষে সিন্ডিকেট রুমে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় অন্যান্য শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাদের ভার্চুয়াল মিটিং-এর লিংক প্রদান করেনি প্রশাসন। পরে তারা আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের জন্য সভা শুরুর দশ মিনিট পরে সিন্ডিকেট রুমে প্রবেশ করলে তাদের সভায় অংশগ্রহণে বাধা প্রদান করা হয় এবং উপাচার্য আলোচনা সভা শেষ না করেই সমাপ্তি ঘোষণা করে।
এদিকে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবজ্ঞা করেছেন উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বৃহৎ সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ
বিকেলে সংগঠনটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবাদে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রথা অনুযায়ী উপাচার্যের উপস্থিতি অনিবার্য। অথচ তিনি ক্যাম্পাসে না এসে ঢাকা থেকে ভার্চুয়াাল আলোচনায় অংশগ্রহণ না করে দায়সারাভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করেছেন। বিজয় দিবসের ভার্চুয়াল আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিক্ষকগণ অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাদেরকে আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়নি। প্রতি বছর বিজয় দিবসে ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জা করা হয়।
কিন্তু এ বছরই প্রথম স্বাধীনতা স্মারকসহ ক্যাম্পাসকে অন্ধকারাছন্ন করে রাখা হয়েছিল। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসেও উপাচার্য উপস্থিত ছিলেন না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’র নেতৃত্বে গড়ে ওঠা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ কর্তৃক অবজ্ঞা করায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মর্মাহত হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও গণিত বিভাগের সহাকারি অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন- জাতীয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করে। কিন্তু আজ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করতে চাইলে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ অংশ গ্রহণ করতে না দিয়ে দ্রুত আলোচনা শেষ করে। বিজয় দিবসে ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জা নাই, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে উপাচার্য উপস্থিত নাই, মহান বিজয় দিবসে উপাচার্য উপস্থিত নাই। থাকেন দিনের পর দিন ঢাকায়। তালবাহানা আর কত দিন। ধিক্কার জানাই উপাচার্যের এমন কর্মকাণ্ডকে।
অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বিবর্ণ বিজয় দিবস উদযাপন আগে কখনো দেখিনি। আমরা আশা করেছিলাম জাতির এমন গর্বের দিনে অন্তত তিনি (উপাচার্য) ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। কিন্তু উপাচার্য বরাবরের মতোই ক্যাম্পাসে আসেনি। উপাচার্যের এমন অনুপস্থিতি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সকল শহীদদের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনের সামিল।