হেমন্তের স্নিগ্ধ প্রকৃতি

শাহীন আলম:
শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০১৯ | ৮:২৫ অপরাহ্ণ | 441 বার পঠিত

হালকা কুয়াশার চাদরে ডাকা স্নিগ্ধ ভোর, কচি সবুজ ঘাসের ডগায় জমা বিন্দু বিন্দু শিশির কণা। শিউলি আর বকুলের মিষ্টি গন্ধের মোহনীয়তায় মত্ত ভোরের প্রথম প্রহর। আর এমন দৃশ্যই মনে করিয়ে দেয় হেমন্ত এসে কড়া নাড়ছে বাঙালির দরজায়।

নদীর ধারে নুইয়ে পড়া শরতের কাশফুলের পরপরই আগমন ঘটে হেমন্তের। স্নিগ্ধ হেমন্তের এমন অপরূপ সৌন্দর্য্য স্বভাবতই আকৃষ্ট করে প্রতিটি প্রকৃতি প্রেমিকে। স্বচ্ছ মেঘমুক্ত আকাশ আর সেই সাথে গাছের পাতার ফাঁকে গলে পড়া ভোরের সোনালী আলো এ যেন প্রকৃতিকে মোহনীয় করতে অতিরিক্ত এক উপকরণ। মনে হয় যেন প্রকৃতি হাসছে তার আপন খেয়ালে। সেই সাথে পাতায় জমে থাকা প্রতিটি শিশির কণা সোনালী আলোয় মুক্তোর দানা হয়ে জ্বলে ওঠে জানান দেয় হেমন্তের আরেক ঝলক সৌন্দর্যের।

তাই তো কবি সুফিয়া কামাল হেন্তের রূপ বর্ণনায় বলেছেন-
“সবুজ পাতার খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন পাথারের ওপার থেকে
আনল ডেকে হেমন্তকে?”

ফুল মানেই সৌন্দর্য এবং পবিত্রতার প্রতীক। তাই তো হেমন্তে ফুলের বাহার সেও কম নয়। আর প্রকৃতি সাজাতে তাই দায়িত্বটাও যেন শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, ছাতিম, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি কিংবা রাজ অশোকের উপরেই বর্তানো হয়েছে। আর হেমন্তের সকালে শিউলির সৌরভ সে তো বাঙালির প্রাণে স্নিগ্ধতার আমেজ। সেই সাথে হেমন্তেকে পূর্ণতা দিতে বাহারি স্বাদ নিয়ে আসে কামরাঙা, চালতা, আমলকি ও ডালিমের মত দেশীয় ফলগুলো।

বাংলা বর্ষের ষড় চক্রের চতুর্থ ঋতু হেমন্তর আগমন কার্তিকের সঙ্গে হলেও ব্যাপ্তিটা অগ্রহায়ণের শেষ অবধি। “কৃত্তিকা” ও “আর্দ্রা” এ দুটি তারার নামেই হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণের নাম। শুভ্র শরতের পর শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে হেমন্ত। তাই হেমন্তকে শীতের পূর্বাভাসও বলা চলে।

বাঙালি সংস্কৃতি ও ইতিহাসেও রয়েছে হেমন্তের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অগ্র ও হায়ণ শব্দ দ্বারা মূলত ‘ধান’ ও ‘কাটার মওসুম’ বুঝায়। তাই তো সম্রাট আকবর খাজনা আদায়ের জন্য অগ্রহায়ণকেই বাংলা সনের প্রথম মাস হিসেবে ঘোষণা করে ছিলেন।

মরা কার্তিকের পর লৌকিক নবান্ন নিয়ে আসে অগ্রহায়ণ। এ যেন কৃষি প্রধান বাঙালির কাছে লক্ষী দেবীর এক অনন্য আশীর্বাদ। নবান্ন যার অর্থ নতুন অন্ন। এটি মূলত পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কৃষিজীবী গ্রামীণ ঐতিহ্যের শস্যোৎসব।

নবান্ন মানে কৃষাণীর অসম্ভব ব্যস্ত এক সময়। নবান্ন মানেই বাপের বাড়িতে নাইওর আসবে মেয়ে সাথে আসবে জামাই। তার জন্যেও যেন কমতি নেই ব্যস্ততার। তাই তো নতুন ধানের চালে তৈরি করতে হবে পিঠা, পুলি, ফিরনি, পায়েশ কিংবা ক্ষীরের মত নানা মুখরোচক খাবার।

আর দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনা লাঠিখেলা, বাউলগান ও গ্রাম্য মেলার আয়োজন ছাড়া যেন নবান্ন অপরিপূর্ণ। তাই তো হেমন্তকে উৎসবের ঋতু বললেও হয়তো ভুল হবে না।

লেখক: শাহীন আলম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

মুক্ত ক্যাম্পাস/জেডআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধইবি’র বায়োটেকনোলজি বিভাগের নতুন সভাপতি ড. মিন্নাত
পরবর্তী নিবন্ধজবি কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ, নতুন মুখ চায় শিক্ষার্থীরা