সিলেটে নামছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

অনলাইন ডেস্ক
সোমবার, ২০ জুন ২০২২ | ৬:১৯ অপরাহ্ণ
সিলেটে নামছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

সিলেটে নামছে বন্যার পানি বাড়ছে দুর্ভোগ

বন্যা আক্রান্ত সিলেটে সুরমা নদীর পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করলেও বাড়ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। তবে সুরমা নদীর পানি সামান্য কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সিলেটে নামছে বন্যার পানি, তবে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।

প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ এখনও পানির নিচে। নগরীর উচু এলাকায় পানি কমলেও নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। উপশহরের প্রধান সড়কে এখনও কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে। ফলে বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট (নগরী) পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। অবশ্য সারি ও লোভাছড়া নদীর পানি কমেছে।

সোমবার (২০ জুন) বেলা ১১টার দিকে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাটে ১ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে ১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেটে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, ‘আজ সুরমা নদীর পানি আরও কমবে।’ কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ার কারণে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হতে পারে। তবে তা মারাত্মক কিছু হবে না।’

এছাড়া গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, সদর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জে প্লাবিত এলাকার পানি ধীরে ধীরে কমছে বলে জানান তিনি।

এদিকে নদীর পানি কমতে থাকায় নগরীতে প্লাবিত এলাকাগুলোর পানিও কমতে শুরু করেছে। তবে নগরীর উপশহর, তালতলা, তেররতন, ঘাসিটুলাসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও পানি রয়েছে। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও প্লাবিত এলাকার মানুষ এখনও অন্ধকারে রয়েছেন। অনেক এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম সংকটে রয়েছেন নগরবাসী।

সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নেমেছে পানি : ভয়াবহ বন্যার পানিতে গত শনিবার কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং শাহজালাল উপশহর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়ায় গত দুদিন মহানগরীসহ সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যাহত হয়। তবে দুদিনের মাথায় কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নেমেছে পানি। ফলে সোমবার (২০ জুন) বিকাল পর্যন্ত সিলেটের বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে।

এছাড়া রোববার (১৯ জুন) শাহজালাল উপশহরের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে সঞ্চালন উপযোগী করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যম এসব তথ্য জানিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার বিকেলে কুমারগাঁওয়ে ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে সিলেট সেনানিবাসের মেজর খন্দকার মো. মুক্তাদির সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, বিদ্যুৎবিভাগসহ অন্যান্য সকল সরকারি দপ্তর ও সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ব্রিফিংয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বন্যার এই বিপদে যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতো তবে আমরা নগরবাসী আরেকটি মহাসংকটের মধ্যে পড়ে যেতাম। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তো। কেউ কারো কোনো খোঁজ নিতে পারতাম না। পানিবন্দী মানুষসহ নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়ে যেতো অনেকাংশে। তাই অতি জরুরি বিবেচনায় সিলেট সিটি কর্পোরেশন কুমারগাঁও কেন্দ্রটি সচল রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। এই চেষ্টায় সিলেটের সকল প্রশাসন, দপ্তর-সংস্থাসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্লাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সঞ্চালন অব্যাহত রাখার উপযোগী অবস্থায় রাখতে সক্ষম হয়। এজন্য আমি সিলেট জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিদ্যুৎ বিভাগ, ফায়ার সাভির্স, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সিসিকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারির প্রতি ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই নগরবাসীকে, এই বিপদের সময় তারা ধৈর্য্যের সাথে নানাভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

সিসিকের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সোমবার সকালে বরইকান্দির বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র পরিদর্শন করেন সিসিক মেয়র এবং সেনাবাহিনীর একটি দল। তারা বন্যায় তলিয়ে থাকা বরইকান্দি কেন্দ্রটিও বাঁধ দিয়ে সেচের মাধ্যমে সঞ্চালন উপযোগী করতে কাজ শুরু করেছেন। সিসিক মেয়র আশা প্রকাশ করেন মঙ্গলবার এটিও চালু করা সম্ভব হবে।

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনার্স ভর্তি ফলাফল ও মেধা তালিকা ২০২২ প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধএইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বাড়ল