সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে কাজ করব: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
শনিবার, ১৫ আগস্ট ২০২০ | ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ
এখন দেশে হত্যাকাণ্ড হলে বিচার চাওয়া যায়, বিচার হয়: প্রধানমন্ত্রী

১৫ আগস্টের শোক বুকে নিয়ে শুধু জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে কাজ করব। এ দেশে সব মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সব মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, ন্যায়পরায়ণতা যেন সৃষ্টি হয়। শুক্রবার সকালে ৫০ হাজার বার পবিত্র কোরআন খতম এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সমাজসেবা অধিদপ্তর এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। অধিদপ্তর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। আর আমরা কী সহ্য করে আছি। শুধু একটা চিন্তা করে যে এই দেশটা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তিনি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। আমার যতটুকু সাধ্য সেটুকু করে দিয়ে যাব যেন তার আত্মাটা শান্তি পায় এবং এই রক্ত যেন বৃথা না যায়। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৮১ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। স্বাভাবিকভাবে আমার চেষ্টাই ছিল যে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, জেল-জুলুম অত্যাচার সয়েছেন, এ দেশের সেই মানুষের জন্য কিছু করে যাব সেটাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য।


১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কারণে দীর্ঘদিন সেই খুনের বিচার চাইতে না পারার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এরকম ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। আমি সেই অবস্থা থেকে পরিবর্তন আনতে চাই। এ দেশে সব মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সব মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, ন্যায়পরায়ণতা যেন সৃষ্টি হয়। মানুষের অধিকার যেন সমুন্নত থাকে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে একটা হত্যাকাণ্ড হলে সবাই বিচার চাইতে পারে, মামলা করতে পারে। ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম, আমাদের কারও মামলা করার বা বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। সেই অধিকারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে। খুনিদের সমস্ত দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তাদের বিভিন্ন দেশে-বিদেশে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। তারা পুরস্কৃত হয়েছিল এই খুন করার জন্য। নারী হত্যাকারী, শিশু হত্যাকারী, রাষ্ট্রপতি হত্যাকারী তাদের পুরস্কৃত করা হয়। ’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ কষ্ট আরও বুঝলাম ৭৫-এর ১৫ আগস্ট। এক দিন সকালে উঠে যখন শুনলাম আমাদের কেউ নেই। এই ১৫ আগস্ট আমি হারিয়েছি আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সবসময় ছায়ার মতো আবার বাবার সঙ্গে ছিলেন। ‘আমি আর আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। আমার স্বামী তখন জার্মানিতে। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। অল্প কিছুদিনের জন্য। কিন্তু আর দেশে ফিরতে পারিনি। ছয় বছর আমাদের দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। আমার বাবার লাশও দেখতে পারিনি। কবরও জিয়ারত করতে পারিনি। আসতেও পারিনি। এভাবে আমাদের বাইরে পড়ে থাকতে হয়েছিল। এতিম হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হয়ে থাকার মতো কী কষ্ট এটা আমাদের মতো যারা ছিল তারা জানে। আমাদের পরিবারের আত্মীয়স্বজন যারা গুলিতে আহত, যারা বেঁচে ছিল তারাও ওভাবে রিফিউজি হয়ে ছিল দিনের পর দিন। ’

১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে শিশু রাসেল ‘ছোট ভাইটি আমি এখনো এই প্রশ্নের উত্তর পাই না। তার মাত্র ১০ বছর বয়স। তার জীবনের স্বপ্ন ছিল সে এক দিন সেনাবাহিনীতেই যোগদান করবে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, তাকে সেই সেনাবাহিনীর সদস্যরাই নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করল। তার অপরাধ কী? আমি জানি না। ’

দোয়া মাহফিলে সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু। গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মুক্ত ক্যাম্পাস/কেআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস কাল
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিশ্বকে নতুনভাবে সাজাতে সহায়তা করবে: ইউনেস্কো