বাংলাদেশের বন্ধু সাংবাদিক সায়মন ড্রিং আর নেই

অনলাইন ডেস্ক
মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১ | ৩:৫২ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের বন্ধু সাংবাদিক সায়মন ড্রিং আর নেই
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং আর নেই। গত শুক্রবার (১৬ জুলাই) রোমানিয়ার একটি হাসপাতালে অন্ত্রে অস্ত্রোপচারের সময় তার মৃত্যু হয়। তিনি রোমানিয়ার একটি নিভৃত পল্লীতে বাস করতেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসূত্রে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানা গেছে। মৃত্যুকালে সায়মন ড্রিং স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।

সায়মনের বাংলাদেশি বন্ধু সাংবাদিক তুষার একুশে টিভিতে তার সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে তুষার আব্দুল্লাহ বলেন, কলম আর ক্যামেরা হাতে নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে নিরীহ বাঙালিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সাংবাদিক সায়মন ড্রিং।

সাংবাদিক জ.ই. মামুন ফেসবুক পোস্টে সাইমনের স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, ‘বিদায় সায়মন ড্রিং, বাংলাদেশের জন্মের বন্ধু, আমার পিতার অধিক পিতা!

শুক্রবার রোমানিয়ার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৫ বছর। স্ত্রী ফিয়োনা, দুই জমজ কন্যা ইন্ডিয়া রোজ এবং আভা রোজকে রেখে চির বিদায় নিলেন সায়মন। তাঁর মাধ্যমেই বিশ্ব প্রথম জানতে পারে ৭১ এর ২৫ মার্চে ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার কথা।

২০০০ সালে তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় একুশে টেলিভিশন। তিনিই গড়ে তোলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের পেশাদার টিভি সাংবাদিকদের।

আমি জীবনে যে ক’জন মানুষের কাছে চিরঋণী, সায়মন ড্রিং তাদের অন্যতম। তাঁর মৃত্যুশোক আমার কাছে পিতৃশোকের সমান। তাঁর স্নেহ, ভালোবাসা এবং শিক্ষা আমি আজীবন মনে রাখবো।’

সায়মন ড্রিং একমাত্র সাংবাদিক, যিনি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের ভয়াবহতা ও নৃশংসতার শুরু থেকেই প্রতিবেদন করছিলেন। বাংলাদেশ থেকে তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। ভারতে মার্ক টালি যেমন, সায়মন ড্রিং বাংলাদেশের মানুষের কাছে সেরকমই একজন।

সায়মন ড্রিং ছিলেন অকুতোভয় ও মেধাবী সাংবাদিক। তিনি বিবিসি, রয়টার্স, টেলিগ্রাফ, ওয়াশিংটন পোস্টের মতো শীর্ষ সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন। পেয়েছেন বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টার অব দ্য ইয়ার-১৯৭১।

২০০০ সালে সায়মন ড্রিং বাংলাদেশে এসেছিলেন এ দেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভি গড়ে তোলার প্রধান কারিগর হিসেবে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর একুশে টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। পরে ২০০২ সালের অক্টোবরে সরকার সায়মন ড্রিংয়ের ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাকে অবিলম্বে বাংলাদেশ ত্যাগের আদেশ দেয়। এরপর তিনি বাংলাদেশ থেকে চলে যান।

১৯৪৫ সালে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন সায়মন ড্রিং। ১৮ বছর বয়সে ব্যাংকক ওয়ার্ল্ড নিউজপেপার থেকে তিনি কাজ শুরু করেন। স্বচোখে দেখেছেন ২২টি যুদ্ধ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে : ঈদ শুভেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকরোনায় আরও ২০০ জনের মৃত্যু