ভোলায় ত্রাণের চাল চুরির সংবাদ প্রকাশ, সাংবাদিককে মারধর

ভোলা প্রতিনিধি:
মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ ২০২০ | ১০:৩৫ অপরাহ্ণ | 201 বার পঠিত

ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিনে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জেলেদের জন্য বরাদ্দের ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিককে প্রকাশ্যে মারধর করার অভিযোগ ওঠেছে। সংবাদ সংগ্রহ করা ও রাতের আধারে পাচার হওয়া চুরির চালের ছবির ভিডিও ধারণ করায় ভোলার সাংবাদিক সাগর চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে মোবাইল ছিনতাইকারী অপবাদে মারধর করেছে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ছাত্রনেতা দাবীকারী নাবিল হায়দার।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকালে সাংবাদিক সাগরকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে জনসন্মুখে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। এবং নিজেই ধারনকৃত মোবাইল লাইভে তা সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেন।

এব্যাপারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক সাগর চৌধুরী বলেন, বড় মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিন হায়দার ইউনিয়নের জেলেদের ১ মণ করে চাল দেওয়ার কথা, কিন্তু চাল দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১৪-১৫ কেজি করে। বিষয়টা আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাই এবং চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাই কেন চাল কম দিচ্ছেন। এরই জের ধরে তার ছেলে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র নাবিল হায়দার আমাকে ডেকে নিয়ে নিজের মোবাইল ফোনের চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।

ভোলায় ত্রাণের চাল চুরির সংবাদ প্রকাশ, সাংবাদিককে মারধর

হামলার বর্ণনায় সাগর চৌধুরী আরো বলেন, এরপর নাবিল আমাকে বলে ভোলার বড় বড় সাংবাদিক নেতা ও মিডিয়া আমার পকেটে থাকে। তুই শালা আবার কোথাকার সাংবাদিক। আমার কাজে বাধা দিস। একথা বলতে বলতে আমাকে প্রচন্ড রকম মারধর করে টেনেহিঁচড়ে রক্তাক্ত করে এবং তার নিজের মোবাইল চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বোরহানউদ্দিন রাজমনি সিনেমা হলের বাজারের সামনে মারতে থাকে।

এদিকে বোরহানউদ্দিনের এক সাংবাদিক নেতা বলেন, মূলত চেয়ারম্যান জসিম হায়দারের বিরুদ্ধে নিউজ করার ছবি তুলতে গিয়ে এই নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি নির্যাতনের পর সাংবাদিক সাগর বোরহানউদ্দিন থানায় অভিযোগ দিতে যাওয়ার সময় জসিম হায়দারের লোক ও নাবিলের বাহিনী তাকে থানায় এবং বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেও বাধা প্রধান করে বলে জানায় সাগরের সহকর্মী ও ভোলা জয়যাত্রা টিভির সাংবাদিক তুহিন খন্দকার। পরবর্তীতে তিনি তার সহযোগিতায় বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে না পেরে বাধ্যহয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে এসে ভর্তি হন বলে জবানবন্দিত জানায় আহত সাংবাদিক সাগর।

এদিকে ভোলায় সাগর চৌধুরীর ওপর হামলার ভিডিও সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভোলাসহ সারাদেশে এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারন মানুষ। এই হামলায় ক্ষোভ জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ অনলাইন প্রেসক্লাব। ক্ষোভ জানায় ভোলা জেলা প্রেসক্লাব ও ভোলার সাংবাদিক সংগঠন জার্নালিস্ট ফোরাম ভোলা’সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সহ সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা। তারা এই ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যারা রাষ্ট্রের ও জনগণের বড় বড় সম্পদ চুরির ঘটনা প্রকাশ করে, দেশের সরকারকে বিভিন্ন অন্যায় অপরাধে তথ্যচিত্র দিয়ে সহোযোগিতা করে, আজ সেই সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে উল্টো মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হামলা করানো হয়। এমনকি দিনে দুপুরে জনসন্মুখে হামলা চালায়, যা লজ্জার ও ন্যাক্কারজনক। তারা অতিদ্রুত হামলার মূলহোতা নাবিল সহ জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান।

এদিকে উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত হামলাকারী নাবিল হায়দার কে একাধিকবার ফোন দিলেও তার মোবাইল ফোনে তাকে পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে ভোলার বোরহানউদ্দিনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সার্কেল) মোঃ রাসেলুর রহমান জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছি।হামলাকারীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলেই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

মুক্ত ক্যাম্পাস/আরিয়ান/জেডআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধযবিপ্রবির মার্কেটিং বিভাগে প্রথম অনলাইনে ক্লাস শুরু
পরবর্তী নিবন্ধদেশে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৩