যশোরের শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার দূর্গম সীমান্তে স্থাপিত নীলকুঠি ফ্যামিলি পার্ক উচ্ছেদ করে দিয়েছে জমির মালিক দাবিদার এলাকাবাসী। তাতে প্রতিহত করতে গিয়ে পার্ক মালিকের কর্মীরা ৫টি বোমা বিষ্ফোরণ ঘটালে ৩ জন আহত হয়। এ সময় প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যায় স্থানীয় মেম্বার আইনাল হক ও নিরীহ গ্রামবাসী। এই ঘটনার পর দুই থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী মির্জাপুর গ্রামের ফিরোজ হোসেন, মহিউদ্দিন মাষ্টার , মোস্তফা খাঁ, বিধবা বৃদ্ধা নবিছন বিবি, আবু ছাদ, সেকেন্দার আলী, সাফিয়া খাতুন সহ একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করে তাদের ফসলি জমি দখল করে উলাশীর ইউপি সদস্য যুবলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম মিলন নীল কুঠি ফ্যামিলি পার্ক নামে একটি পিকনিক স্পট তৈরি করে।
অভিযোগে জানা যায়, মিলন মেম্বার তার পার্কে মাদক ব্যবসা, পতিতা ব্যবসা করে আসছে। তার বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল, সরকারী বেতনা নদী দখল, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, বোমাবাজি সহ একাধিক অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মিলন মেম্বার পার্কে গত ১০ বছর ধরে তাদের জমি দখল করলেও ওই দখলকৃত জমির কোন লাভ বা টাকা প্রদান করেন না। যে কারণে গত ১০ বছর ধরে এই নিয়ে অনেকবার সালিশ হলেও মিলন তার দখলি জমি আসল মালিকদের ফেরত দেননি। কোন চুক্তিও করেননি। জমির মালিকদের অভিযোগ, তাদের জমিতে তারা গেলে মিলন মেম্বর তার বড়ভাই ও তার ক্যাডাররা বেদম ভাবে মারপিট করে হত্যার হুমকি দেয়, মামলা দিয়ে হয়রানি করে। প্রতিরাতে বোমা মেরে ভয় প্রদর্শন করে। যে কারণে একাধিকবার বিচার করে ব্যর্থ হয় উলাশীর চেয়ারম্যান আয়নাল হক সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের দখলি জমি ফেরত পেতে স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান, ওসি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেও কোন কাজ হয়নি। তারা জানান, সর্বশেষ এ ব্যাপারে ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ওসির নির্দেশে শান্তিপূর্ণ ভাবে মঙ্গলবার সকালে তারা গ্রামের মেম্বার ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে তাদের জমিতে যান ও বেড়া নির্মাণ করেন।
এ সময় মিলন মেম্বারের বড় ভাই শরিফুল ইসলাম পিপুল (৫০) এর নেতৃত্বে ভাইপো আশিক (৩৫), ক্যাডার সোহেল (৩৫), নাককাটি আসাদুল (৩৩), ম্যানেজার শরীফ (৪০), বাবলুর রহমান (৪৫), শামিম সহ একাধিক সন্ত্রাসী জমির মালিকদের উপর অতর্কিত বোমা হামলা করে। পার্কে সন্ত্রাসীরা পরপর ৫টি বোমার বিষ্ফোরণ ঘটায়। এ সময় জমির মালিক জসিম (৩৫), হবিবর (৫৫) ও চৌকিদার ইসরাফ আলী(৪০) আহত হয়।
আহত জসিম ও হবিবর জানায়, মিলন মেম্বারের বড় ভাই পিপুল, আশিক, নাককাটি আসাদুল ও সোহেল তাদের ধরে বেদম ভাবে মারপিট করেছে। এর আগেও সন্ত্রাসীরা মির্জাপুর গ্রামের প্রফেসার কামরুজ্জামান স্বপন, কালু, ফিরোজ, কেয়ামউদ্দিন সহ একাধিক ব্যাক্তিকে মামপিট করেছে। এখন মির্জাপুর গ্রামের কোন সাধারন মানুষ উলাশী বাজারে আসতে পারছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পার্কের মালিক তরিকুল ইসলাম মিলন এ প্রতিনিধিকে জানান, জমির মালিকেরা তাদের জমিদখলে নিতে তার পার্ক ভাংচুর করেছে। তিনি জানান, তার কোন লোকজন পার্কে ছিল না। তার কোন লোকজন বোমা বিষ্ফোরণ করেনি।
এ ব্যাপারে ঝিকরগাছা থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিলন মেম্বার অনেকের জমিদখল করে রেখেছে। জমির মালিকেরা তাদের জমিতে আসলে উভয় পক্ষে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। ঘটনা শুনে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। এখন পরিবেশ শান্ত। তিনি আরও জানান দখলি জমি নিয়ে আদালতে মামলা আছে। বিষয়টি তদন্ত করে সমাধান করা হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
মুক্ত ক্যাম্পাস/নাসির/এমআর
