লঞ্চে করোনার ঝুঁকি বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
রবিবার, ০৭ জুন ২০২০ | ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

করোনা পরিস্থিতিতে দেশের রেল ও সড়কপথের তুলনায় নৌপথ এখন সবচেয়ে ঝুঁকিতে। এই পরিস্থিতি তৈরির বড় কারণ লঞ্চ মালিকদের রোটেশন পদ্ধতি। যাত্রী চাহিদা সত্ত্বেও গাদাগাদি করে লঞ্চে যাত্রী বহন করতে কম লঞ্চ ছাড়া হয়। মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে চলছে এই রোটেশন পদ্ধতি। এটি ভাঙতে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন অধিদপ্তর চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত সফল হতে পারছে না।

ঢাকা নদীবন্দর থেকে নৌপথ রয়েছে ৫১টি। ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৪৩টি রুটে ৮৪টি লঞ্চ চলাচল করে। এর বাইরে ঢাকার সঙ্গে চাঁদপুর, মানিকগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে নৌপথ চালু রয়েছে। নরসিংদী থেকে নবীনগর, ভৈরব পথ যেমন রয়েছে তেমনি বাঞ্ছারামপুরসহ বিভিন্ন গন্তব্যে এখনো নৌপথে মানুষ যাতায়াত করে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস রোগ ছড়িয়ে পড়লে দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকে নৌপথে যাত্রী পরিবহন। এরপর ৩১ মে থেকে নৌপথ সচল হলে সামাজিক দূরত্ব উপেক্ষা করে চলছে যাত্রী পরিবহন। গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহনের কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এ থেকে নিস্তার পেতে শুরু হয়েছে অভিযান পরিচালনা। গতকালও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

জানা গেছে, লঞ্চে যাত্রী পরিবহনের একটি ধারণক্ষমতা নির্ধারণ করা থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সার্ভে সনদে উল্লেখ করা থাকে যাত্রীর সংখ্যা দিয়ে নির্ধারণ করে থাকে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। তিন ক্যাটাগরিতে লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করা যায়। এর একটি হচ্ছে সব শ্রেণিতে প্রতিটি চেয়ার ও বাক্সের জন্য একজন যাত্রী। দ্বিতীয়ত বেঞ্চের ক্ষেত্রে প্রত্যেক তৃতীয় শ্রেণির বা ইন্টার ক্লাস যাত্রীর জন্য ০.৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি আসন। প্রত্যেক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীর জন্য ০.৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে আসন।  প্রত্যেক তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীর জন্য ১.২৫ বর্গমিটার পরিমিত আসন, প্রত্যেক দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীর জন্য ১.৭৫ বর্গমিটার পরিমিত আসন, প্রত্যেক প্রথম শ্রেণির যাত্রীর জন্য ২.৭৫ বর্গমিটার পরিমিত আসন। ১২ বছরের কম বয়সী দুই শিশুকে একজন যাত্রী হিসাবে গণনা করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিটি নৌরুটে চলাচলের জন্য অনুমতি নেওয়া নির্ধারিত সংখ্যক লঞ্চের ট্রিপ কমিয়ে রোটেশন পদ্ধতিতে যাত্রীদের গাদাগাদি করে যাতায়াতে বাধ্য করছেন মালিকরা।

করোনার সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা থাকলেও যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড়ের কারণে তা মানা সম্ভব হচ্ছে না। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুয়ায়ী একজন যাত্রীর জন্য সাড়ে ১৩ স্কয়ার ফিট জায়গা বরাদ্দ আছে। এ হিসেবে যাত্রী পরিবহন করা হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক যাত্রী থেকে আর-এক যাত্রীর শারীরিক দূরত্ব তিন ফিটের বেশি থাকার কথা। কিন্তু রোটেশন পদ্ধতির মাধ্যমে মালিক সমিতি নিজেরা লঞ্চের ট্রিপ কমিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী লঞ্চে উঠতে বাধ্য করছেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রীপরিবহন (যাপ) সংস্থার সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, যাত্রী কম তাই মালিকরা লঞ্চ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। অতিরিক্ত যাত্রী নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই লঞ্চ যাত্রী নেওয়া হচ্ছে ।

বিআইডব্লি­উটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, এভাবে যাত্রীদের জিম্মি করে কম লঞ্চ চালালে আমারাও আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।

মুক্ত ক্যাম্পাস/এসআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধডা. জাফরুল্লাহ’র শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি
পরবর্তী নিবন্ধদেশের ৫০ জেলা পুরোপুরি লকডাউন