লকডাউন শিথিলের পর জার্মানিতে ফের বাড়ছে সংক্রমণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সোমবার, ১১ মে ২০২০ | ৭:৩৫ অপরাহ্ণ

 

জার্মানিতে হঠাৎ লাফিয়ে বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করার কয়েকদিনের মধ্যেই দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট (আরকেআই) দৈনিক বুলেটিনে জানিয়েছে, সংক্রমণের হার ১ দশমিক ১ এ পৌঁছেছে। অর্থাৎ, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংক্রমণ ঘটানোর হার (রিপ্রোডাকশন রেট) বেড়েছে। রোগীরা এখন গড়ে একজনের বেশি মানুষকে সংক্রমিত করছেন৷ এতেই বোঝা যাচ্ছে, জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা আবার বাড়ছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সংক্রমণের হার ১ এর নিচে রাখতে হবে। খবর বিবিসির।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় জার্মানিতে গত ২০ এপ্রিল প্রাথমিকভাবে লকডাউন কিছুটা শিথিলের ঘোষণা দিয়ে ছোট ছোট দোকানপাট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর গত বুধবার ১৬ রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল আরেক ধাপে নিয়ম কানুন শিথিলের ঘোষণা দেন। দোকান, বাজার খোলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক বাধানিষেধ তুলে নিয়ে আরো বেশি দোকনপাট খুলে দেওয়া হয়। স্কুলও ধীরে ধীরে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফেডারেল স্তরেও কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করে নিজ পরিবারের বাইরে অন্য একটি পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে মানুষের মেলামেশার অনুমতি দেওয়া হয়৷ শনিবার লকডাউন পুরোপুরি তুলে নেওয়ার দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। তাদের অনেকেই আরো দ্রুত লকডাউন তোলার দাবিও জানায়। এরপরই সংক্রমণ বাড়ার খবর পাওয়া গেল।

জার্মানির এক স্যোশাল ডেমোক্র্যাট এমপি এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বাইরে এত মানুষের এই সমাবেশের ফলে করোনাভাইরাস আবার দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করতে পারে। বিশ্বে আক্রান্তের দিক দিয়ে জার্মানি সপ্তম স্থানে আছে। রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট রবিবার জানিয়েছে, দৈনিক নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬৭ জন বেড়ে মোট আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ১৬৯,২৮১ জনে। আর দৈনিক মৃত্যু ২৬ জন বেড়ে মোট মৃতের সংখ্যা হয়েছে ৭ হাজার ৩৯৫ জন।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে জার্মানি প্রশংসা কুড়িয়েছিল। বৃহৎ পরিসরে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা এবং কার্যকর লকডাউনের কারণে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর চাইতে জার্মানিতে ভাইরাসে মৃত্যু কম হয়েছে। সংক্রমণের হার বেড়ে গেলে স্থানীয় সরকারগুলো ফের লকডাউন প্রয়োগের কথা বলেছে। যদি কোনো এলাকায় এক সপ্তাহে প্রতি এক লাখ মানুষে সংক্রমণের হার ৫০ জনের ওপর চলে যায় তাহলে ফের কড়াকড়ি আরোপ হতে পারে। আরকেআই জানিয়েছে, গত তিন দিনে অন্তত তিনটি জেলায় এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত বুধবার সামাজিক বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন মেরকেল। তবে এই সমালোচনার পাশাপাশি লকডাউন পুরোপুরি তুলে নেওয়ার দাবিও জোরালো হচ্ছে দিনদিন।

গত শনিবার রাজধানী বার্লিনে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। মিউনিখে তিন হাজারের বেশি মানুষ লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন। জার্মানির অন্যত্রও হয়েছে এ বিক্ষোভ। জার্মানিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৭১ হাজার ৮৭৯ জন। তাদের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ মানুষ সুস্থ হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ৫৬৯ জনের।

মুক্ত ক্যাম্পাস/জেডআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅস্ট্রেলিয়ায় লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ, গ্রেফতার ১০
পরবর্তী নিবন্ধমনমোহন সিংয়ের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল