দেশে দেশে লকডাউন শিথিল হচ্ছে যে কারণে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বুধবার, ১৫ এপ্রিল ২০২০ | ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ | 241 বার পঠিত

প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। অদৃশ্য এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে একজন আরেক জন থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ লকডাউন বা কারফিউ জারি করা হয়েছে। লকডাউনে মানুষের জীবন রক্ষায় কিছুটা উপকার হলেও তাতে মানুষের জীবিকা আটকে গেছে। তাই পরিস্থিতি বুঝে ধীরে ধীরে  লকডাউন শিথিল করছে নানা দেশ।

করোনার প্রথম সংক্রমন দেখা যায় চীনের উহান প্রদেশ থেকে। এই ভাইরাসে এখন ইউরোপ-আমেরিকা কাঁপলেও চীনের উহান শহর এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। শহরটি থেকে লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে। সেখানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরেছে।

করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত ইউরোপের কয়েকটি দেশ। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এরই মধ্যে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড ও চেক রিপাবলিক লকডাউন অনেকটাই শিথিল করেছে। মাস গড়ানোর পর ইতালি ও স্পেনও সেই পথে হাঁটছে।

করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জারি করা লকডাউন শিথিল করেছে অস্ট্রিয়া। মঙ্গলবার থেকে দেশটিতে দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে দেশটিতে পুরো লকডাউন শিথিল করা হবে বলেও জানিয়েছে অস্ট্রিয়া সরকার।

যদিও অস্ট্রিয়ায় মানুষজনকে এখনো কোন প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অস্ট্রিয়ায়র বাসিন্দাদের আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার।

এছাড়া ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে স্পেন এবং ডেনমার্ক ইতিমধ্যে লকডাউন শিথিল করে ফেলেছে। করোনা ভাইরাসের কারণে জারি করা লকডাউনের ফলে স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির চাকা পুনরায় সচল করতেই দেশগুলো এরকম ঝুঁকি নিচ্ছে। ইতালির প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রিয়ায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ৩৮৪ জন

মৃত্যুর হার কমে আসার পর এক মাসের বেশি সময় পর সোমবার লকডাউন শিথিল করে স্পেন। অবকাঠামো শিল্প ও কারখানাগুলো সচল করায় কাজে ফিরছেন এই দুই খাতের মানুষ।তবে ওষুধ ও নিত্যপণ্যের দোকান লকডাউনের সময়ও খোলা ছিল। দোকানপাট, বার ও রেস্তোরাঁসহ জরুরি নয়, এমন সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ থাকছে স্পেনে।

ইতালিতে পাঁচ সপ্তাহ পর মঙ্গলবার লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এই শিথিলতায় সবার আগে খুলছে বইয়ের দোকান,মনোহারী দোকান ও শিশুদের জামা-কাপড়ের দোকান। এছাড়া কম্পিউটার সরঞ্জাম ও কাগজের দোকানও খুলছে। তবে লকডাউনের এই শিথিলতা পুরো ইতালির জন্য নয়। যেসব শহরে পরিস্থিতির উন্নতি আশাব্যঞ্জক নয়, সেখানে লকডাউন থাকবে। ইতালিতে এই পর্যন্ত দেড় লক্ষাধিক আক্রান্তের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি মারা গেছে। তবে সোমবার নতুন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে কম।

বিপর্যস্ত ইউরোপে পরিস্থিতির উন্নতি দেখে বিভিন্ন দেশ লকডাউন শিথিলের দিকে এগোলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত সপ্তাহেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারে সামান্য অবনমন দেখে কোনো দেশ যদি আগেভাগে বিধিনিষেধ তুলে নেয়, তাহলে ভাইরাসটির আরও ভয়ংকর প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে।

ইউরোপে বিপর্যস্ত আরেক দেশ ফ্রান্স লকডাউন এখনই না তুলে এর মেয়াদ আরও চার প্তাহ বাড়িয়ে ১১ মে পর্যন্ত করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে লকডাউন ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তবে ২০ এপ্রিলের পর লকডাউনে শিথিলতা আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তবে এক্ষেত্রে যেসব এলাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে, সেখানে ধীরে ধীরে কিছু বিধিনিষেধ তোলা হবে।

বাংলাদেশে লকডাউনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে, যা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে ২৫ এপ্রিলের পর লকডাউন তুলে দেয়া হবে নাকি আরো বৃদ্ধি করা হবে তা নির্ভর করবে পরাবর্তী সার্বিক পরিস্থিতির উপর।

আমাদের সাথে ফেসবুক পেজে কানেক্ট থাকুন: মুক্তক্যাম্পাস

মুক্ত ক্যাম্পাস/জেডআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধকালিয়ায় চিকিৎসকদের পিপিই দিলেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
পরবর্তী নিবন্ধকরোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে হেরে গেলেন ডা. মঈন