যশোরে ভেজালমুক্ত পাটালি গুড় তৈরিতে গাছিদের শপথ

মো. আল জুবায়ের রনি, যশোর:
শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৯ | ৮:২৫ অপরাহ্ণ | 347 বার পঠিত

খেজুরের নলেন গুড়-পাটালির অনলাইন বিপনন প্রতিষ্ঠান কেনারহাট ডট কমের আয়োজিত খেজুর গাছি সমাবেশে ভেজালমুক্ত খেজুরের গুড়-পাটালি তৈরির শপথ নিলেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের খেজুর গাছিরা ।

আজ শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মিলনায়তনে খেজুর গাছিদের নিয়ে আয়োজিত এক গাছি সমাবেশে ৬০ জন খেজুর গাছি এ শপথ নেন। খেজুর গাছিদের ভেজালমুক্ত নলেন গুড়-পাটালি তৈরির শপথ বাক্য পাঠ করান যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, ‘যশোরের বিখ্যাত খেজুরের গুড়-পাটালির সারাদেশে সুনাম রয়েছে। সেই সুযোগে আপনাদের মধ্যে অনেকে অধিক মুনাফা লাভের আশায় পাটালিতে চিনিসহ বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে ভেজাল করেন। খেজুর গুড় তৈরির মৌসুম শুরু হয়েছে। ভেজালের অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হবে। ভেজালের সত্যতা পেলে যে টাকা জরিমানা করা হবে, তাতে লাভ-আসল দুটোই যাবে। সুতরাং আপনারা যশোরের ঐতিহ্যবাহী এই গুড়-পাটালিতে কোন ধরণের ভেজাল করবেন না। ভেজাল না করার জন্যে আপনারা আজই হাত তুলে শপথ গ্রহণ করুন’।

জেলা প্রশাসকের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপস্থিত গাছিরা দুই হাত তুলে খেজুরের খাঁটি গুড়-পাটালি উৎপাদনের শপথ নেন।

অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া গাছি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খেজুরের গুড়-পাটালি উৎপাদন খুব পরিশ্রমের কাজ। সেই তুলনায় আমরা ন্যায্য দাম পাই না। তবে গত বছর থেকে ‘কেনারহাট ডট কম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছ থেকে বেশি দামে গুড়-পাটালি কেনা শুরু করেছে। যে কারণে আমরা গত বছর থেকে একটু বেশি দাম পাচ্ছি। ন্যায্য দাম না পেয়ে আগে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ভেজাল করতো। কিন্তু বেশি দাম পাওয়ার কারণে এখন আর ভেজাল মেশানো হয় না। আমরা খাঁটি গুড়-পাটালি তৈরি করি’।

উল্লেখ্য যে, যশোরের পাঁচ তরুণের উদ্যোগে গত বছরের ১৭ই নভেম্বর কেনারহাট ডট কম নামে একটি অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম বছরেই কেনারহাট অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশের অন্তত তিন হাজার মানুষের কাছে সাড়ে সাত হাজার কেজি যশোরের খেজুরের খাঁটি গুড়-পাটালি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসার লাভের একটি অংশ গাছির সন্তানদের লেখাপড়ায় ব্যয় করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গাছিদের তিন সন্তানের আজীবন লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, যশোরে খেজুরের গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। যে কারণে গুড়-পাটালি উৎপাদনও প্রতি বছর কমছে। ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ বাঁচিয়ে রাখার জন্যে বাঘারপাড়া উপজেলায় এক হাজার খেজুর গাছ সম্বলিত একটি পরিকল্পিত আদর্শ খেজুর গাছের বাগান সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই বাগানকে কেন্দ্র ‘খেজুর গুড়-পাটালির শিল্পাঞ্চল’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য উদ্যোক্তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেনারহাটের উদ্যোক্তাদের একজন তরিকুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আফরোজ, সহকারি কমিশনার (ভূমি) আবু সুফিয়ান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের একসপ বিভাগের হেড অব টেকনোলজি মো. সোহেল রানা, দরাজহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আয়ুব হোসেন, দৈনিক গ্রামের কাগজের বার্তা সম্পাদক সারোয়ার হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উদ্যোক্তা নাহিদুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা জানান, যশোরের বিখ্যাত খেজুরের খাঁটি নলেন গুড়-পাটালি পাওয়ার জন্যে কেনারহাট ডট কম অনলাইনে ঢুকে এখনই অর্ডার করতে পারেন। আগামী সপ্তাহ থেকে সারাদেশে নলেন গুড়-পাটালি সরবরাহ শুরু হচ্ছে। খেজুর গুড়ের পাশাপাশি ঘি, মধু, চুইঝাল, সরিষা ও নারকেল তেল, ঝালের ও হলুদের গুড়া, লাল আটা, বিষমুক্ত সবজিসহ ৪০ ধরণের নির্ভেজাল পণ্য যশোর শহরে ‘হোম ডেলিভেরি’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্ডার করার পর সর্বোচ্চ এক ঘন্টার মধ্যে পণ্যটি কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে।

মুক্ত ক্যাম্পাস/জুবায়ের/জেডআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধইবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ডুয়েট ছাত্রলীগের শ্রদ্ধা