যক্ষ্মা নির্ণয়ে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর সাফল্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৯ | ৫:২২ অপরাহ্ণ | 101 বার পঠিত

স্বল্পব্যয়ে সহজ একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই নির্ণয় করা যাবে যক্ষ্মা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ড. কাজী রুশদী আহমদের নেতৃত্বে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-এর একদল বিজ্ঞানী এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছেন। গত ২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’ জার্নালে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর সারাবিশ্বে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ যক্ষ্মায় মারা যায়। এছাড়া বিভিন্ন দেশে এই মুহূর্তে যক্ষ্মায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটিরও বেশি। এদের বেশির ভাগই নিম্নআয়ের দেশে বাস করে যেখানে বিদ্যমান যক্ষ্মা নির্ণয় পদ্ধতিগুলো বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। নতুন আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে মাত্র এক ঘণ্টায় শুধু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই কার্যকরভাবে যক্ষ্মা নির্ণয় করা যাবে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ যক্ষ্মা রোগীর জীবন বাঁচাতে এই আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ড. কাজী রুশদী আহমদের নেতৃত্বে আবিষ্কৃত যক্ষ্মা নির্ণয়ের এই পদ্ধতির ভূয়সী প্রশংসা করে ইতোমধ্যেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বের নামীদামী বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা। ড. কাজী রুশদী আহমদ বাংলাদেশে সমাজসেবামূলক সংস্থা ‘কিউ কে আহমদ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক কোম্পানি ‘ট্রু নর্থ বায়ো’-(টিএনবি) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. জাহেদা আহমদ দম্পত্তির সন্তান ড. কাজী রুশদী আহমদ। রুশদী ঢাকার সেন্ট জোসেফ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে রুশদী বড়ো। ড. রুশদী যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে থাকেন। দেশের প্রতি ভালোবাসার টান অনুভব করেন তিনি। সেই ভালোবাসার জায়গা থেকে দেশের মানুষের জন্য তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কিউ কে ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংস্থা। সেখানে তিনি শিশু-কিশোরদের নৈতিক শিক্ষার বিকাশে ইতোমধ্যেই একটি পাঠাগার, প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি বিশেষায়িত স্কুল ও তরুণ অর্থনীতিকদের সম্মাননাসহ নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন।

বৈশ্বিক যক্ষ্মা আক্রান্তের ৪ শতাংশ বাংলাদেশের:

বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে মারাত্মক ১০ প্রাণঘাতী রোগের একটি হচ্ছে যক্ষ্মা। ২০১৮ সাল শেষে বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় এক কোটিতে। এর মধ্যে ৩ লাখ ৫৭ হাজারই বাংলাদেশের বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। অর্থাৎ বৈশ্বিক যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৪ শতাংশই বাংলাদেশের নাগরিক।

ডব্লিউএইচওর সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গ্লোবাল টিউবারকিউলোসিস রিপোর্ট-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ২০২টি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যক্ষ্মা রোগের বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ১৯৯৭ সাল থেকেই বার্ষিক ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৫৭ হাজার। সে হিসাবে প্রতি লাখে ২২১ জন এ রোগে আক্রান্ত। গত বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ হাজারের। এর মধ্যে ১৯০ জনই ছিলেন এইডসে আক্রান্ত। এছাড়া ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় (যা ওষুধে ভালো হয় না) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৯০০।

তবে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, যক্ষ্মা চিকিৎসার আওতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আগের তুলনায় এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে দেশে যক্ষ্মা চিকিৎসার আওতাভুক্ত রোগীর হার ছিল ৭৫ শতাংশ। ২০২২ সাল নাগাদ এটিকে ৯০ শতাংশে উত্তীর্ণ করার লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া দেশে ৯৪ শতাংশ ক্ষেত্রেই যক্ষ্মার চিকিৎসায় সাফল্য মিলেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

এদিকে, ভৌগোলিক হিসাবে গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি যক্ষ্মা রোগী পাওয়া গেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে। বৈশ্বিক যক্ষ্মা রোগীর ৪৪ শতাংশই এ অঞ্চলের। এছাড়া আফ্রিকায় ২৪ শতাংশ ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১৮ এবং আমেরিকা ও ইউরোপে রয়েছে ৩ শতাংশ করে।

উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-২০১৫ সালে যক্ষ্মাকে মহামারি হিসেবে উল্লেখ করে এ রোগ নির্মূলের লক্ষ্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য কর্মকৌশল অনুমোদন করেছে। উচ্চাভিলাষী সেই কর্মকৌশল অনুযায়ী ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে যক্ষ্মা রোগের মৃত্যুহার ৯৫ শতাংশ কমাতে হবে। পাশপাশি শনাক্তকরা যক্ষ্মা রোগীর হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে।

মুক্ত ক্যাম্পাস/টিআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিরাজগঞ্জে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন, আহত ৬
পরবর্তী নিবন্ধজবি দর্শন বিভাগের প্রশ্নে ব্যাপক ভুল, শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ