ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা দরকার : এরদোয়ান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২০ | ৪:২৬ অপরাহ্ণ
erdogan

ইসলাম ধর্ম ও মুসলিমদের প্রতি ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আচরণের সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। এক বিবৃতিতে এরদোয়ান বলেছেন, ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা করা দরকার।

সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের সুরক্ষা নিশ্চিত এবং কট্টরপন্থী ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন ম্যাক্রোঁ।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরদোয়ানের এমন মন্তব্যের জেরে ফ্রান্সে অবস্থানরত তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে সে দেশের সরকার।

ইসলামের নবীকে নিয়ে ক্লাসে কার্টুন দেখানোয় এক ফরাসি শিক্ষককে হত্যা করার প্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহের শুরুতে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, ‘ফ্রান্স কার্টুন প্রত্যাহার করবে না।’

ইসলামের নবীর ছবি বা প্রতিকৃতি তৈরি করা মুসলিমদের ধর্মানুভূতিতে গুরুতর আঘাত করতে পারে, কারণ ইসলামের নবী বা আল্লাহকে চিত্রিত করা ইসলামের ধর্মীয় আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ।

কিন্তু ফরাসি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি। রাষ্ট্রের বক্তব্য, কোনো একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের অনুভূতির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাক স্বাধীনতা খর্ব করা জাতীয় ঐক্য ক্ষুণ্ণ করে।

ফরাসি জাতীয়তাবাদী চেতনা রক্ষার উদ্দেশ্যে শিক্ষক হত্যার আগে থেকেই শুরু হওয়া ম্যাক্রোঁর এ ধরনের প্রচারণার প্রতিক্রিয়া শনিবার এক ভাষণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘একজন রাষ্ট্রনায়ককে এর চেয়ে বেশি কী বলা যায়, যিনি বিশ্বাসের স্বাধীনতার বিষয়টি বোঝেন না এবং তার দেশে বসবাসরত ভিন্ন বিশ্বাসের লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে এই আচরণ করেন?’

এরদোয়ান প্রশ্ন তোলেন, ‘ম্যাক্রোঁ নামক ব্যক্তির ইসলাম এবং মুসলমানদের নিয়ে সমস্যাটা কোথায়?’

নেটোর দুই সদস্য দেশ ফ্রান্স ও তুরস্কের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে এই সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব ছাড়াও দুই দেশ নানা ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের এ ধরনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফরাসি প্রেসিডেন্ট অফিসের এক কর্মকর্তা জানান যে, ফ্রান্সে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। অতিরিক্ত মন্তব্য ও অভদ্রতা কোনো পন্থা নয়। এরদোয়ান যেন তার নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করেন, আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি। তার এই অবস্থান সবদিক থেকেই বিপদজনক।’

২০০২ সালে ইসলামি রাজনৈতিক আদর্শের দল একে পার্টি তুরস্কের ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসলামকে তুরস্কের মূলধারার রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছেন এরদোয়ান।

নেটোর দুই সদস্য দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে এই সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব ছাড়াও দুই দেশ নানা ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে বিপরীতমুখী অবস্থানে ছিল। নেটো জোটে এক দেশ আরেক দেশের মিত্র হলেও সিরিয়া ও লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ, নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলকে ঘিরে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের যুদ্ধ নিয়ে দুই দেশের অবস্থান আলাদা।

গত ১৬ অক্টোবর ফরাসি স্কুল শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যার অভিযোগে দুই জন শিক্ষার্থীসহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। ছুরি হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্যাটির হত্যাকারী ১৮ বছর বয়সী আবদুল্লাহ আনজরভকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।

এর আগে ২০১৫ সালে ফরাসি ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি হেবদোর অফিসে হামলায় কার্টুানিস্টসহ ১২ জন নিহত যায়। ইসলামের নবীকে নিয়ে কার্টুন প্রকাশ করার জেরে প্রতিষ্ঠানটির অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে।

চলতি মাসের শুরুতে ম্যাক্রোঁ ইসলামকে ‘সঙ্কটাপন্ন ধর্ম’ হিসেবে মন্তব্য করেন এবং ফ্রান্সে ‘ইসলামী বিচ্ছিন্নতাবাদ’ দমন করতে আরো কঠিন আইন প্রণয়নের ঘোষণা দেন।

ফ্রান্সের প্রায় ১০ শতাংশ নাগরিক মুসলিম, যা ইউরোপের অন্য যে কোনো দেশের মুসলিম জনসংখ্যার তুলনায় বেশি। ফ্রান্সের মুসলমানদের অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, ম্যাক্রোঁ ইসলাম ধর্মকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন এবং তার এই ধরনের মন্তব্য মানুষের মধ্যে ইসলাম ভীতিকে স্বাভাবিক করে তুলতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযবিপ্রবির শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল
পরবর্তী নিবন্ধমাস্ক ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিসে মিলবে না সেবা