মুজিববর্ষ উদযাপন নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১:৪৭ অপরাহ্ণ

মুজিববর্ষ উদযাপন নিয়ে সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বাড়াবাড়ি কিছু না করার নির্দেশ দিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি জানি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কী অবস্থায় আমাদের চলতে হয়েছে। ওই সময় অনেকের ভূমিকা আমি জানি। তাই মুজিববর্ষের কর্মসূচি পালনের নামে বেশি লম্ফঝম্ফ করা যাবে না।’ গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, মুজিববর্ষকে সামনে রেখে যত্রতত্র, যেভাবে-সেভাবে জাতির পিতার ম্যুরাল বানানো চলবে না। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী ম্যুরালগুলো নির্মাণ ও স্থাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে টিআরের টাকা এক্ষেত্রে ব্যবহার না করে বরং মুজিববর্ষে গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদানের জন্য তিনি সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। রাত সাড়ে ৮টা থেকে সোয়া ১০টা পর্যন্ত এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংসদ অধিবেশনে মন্ত্রী-এমপিদের অনুপস্থিতির বিষয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সূত্র জানায়, এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘সংসদ অধিবেশনে আমি নিয়মিত উপস্থিত থাকি। আমার পেছনের আসনগুলোতে যেসব মন্ত্রী-এমপিরা বসেন, তারা যদি অনুপস্থিত থাকেন—সেসব আসনগুলো ফাঁকা দেখালে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায় যে, মন্ত্রী-এমপিরা সংসদে আসেন না। এ কারণে যেসব মন্ত্রী-এমপিরা নিয়মিত সংসদে উপস্থিত থাকতে না পারেন, তাদের আসনগুলো দূরবর্তী স্থানে স্থানান্তরের সতর্কবার্তাও উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ সময় সংসদ অধিবেশন চলাকালে মন্ত্রী-এমপিদের বাইরের কর্মসূচি থেকে যতটা সম্ভব কম রেখে সংসদে নিয়মিত অংশগ্রহণের জন্যও নির্দেশ দেন।

মুজিববর্ষের প্রতিটি কর্মসূচিতে দলের সংসদ সদস্যদের কার্যকর উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৯ মার্চ সংসদে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে শিশুমেলা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সংসদ সদস্যরা যেন উপস্থিত থাকেন। এছাড়া আগামী ২২ ও ২৩ মার্চ জাতীয় সংসদে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বিশেষ অধিবেশন বসবে। ঐ অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজাসহ বিদেশি অতিথিরা বক্তব্য রাখবেন। সুস্থ থাকলে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিও আসবেন। বিশেষ অধিবেশনে যেসব মন্ত্রী-এমপিরা বক্তব্য রাখবেন তাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। স্পিকারের কাছে বক্তব্য রাখার জন্য আগে থেকেই চিঠি দিয়ে আবেদন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হবে। সেটি বিশ্বের সব দেশের স্পিকারদের কাছে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে পৌঁছে দেওয়া হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। এমন অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রতিবছর রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে রোজা আসছে। আমি জানি রোজায় সবসময়ই দ্রব্যমূল্য নিয়ে একটা খেলা শুরু হয়। হঠাৎ কোনো জিনিসের দাম বাড়ে আবার কমে। পেঁয়াজ নিয়ে যেমন একটা সমস্যা হয়েছিল। রোজার সময় আমাদের কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে আকর্ষণ তৈরি হয়। সেগুলো এখনই টিসিবির মাধ্যমে ক্রয় ও মজুদের পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সরবরাহ সঠিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি।’

ছোলা, চিনি, তেল, পেঁয়াজ ও রসুনের বাজারে সরবরাহ সঠিক রাখার পাশাপাশি এগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধিতে তার সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘কেউ কোনো ধরনের গুজবে আতঙ্কিত হবেন না। অতীতে এ ধরনের গুজবে আতঙ্কিত হয়ে অতি উৎসাহী জনগণ নানা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। ভয়ে একবারে বেশি কিনে নিজেরা যেন লোকসানে না পড়েন, সেটাও একটু সবাইকে দেখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় দলের বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, আ স ম ফিরোজ, হাফিজ আহমেদ মজুমদার, মযাহারুল হক প্রধান, গাজী শাহনেওয়াজ, শামীম ওসমান, ছোট মনির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মুক্ত ক্যাম্পাস/টিকে

পূর্ববর্তী নিবন্ধযবিপ্রবির দুই জনকে আজীবনসহ ছয় শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার
পরবর্তী নিবন্ধচবিতে ‘সেভ দ্যা স্টুডেন্ট’ এর নতুন কমিটি