মাদরাসা ছাত্রী নুসরাতের কবরের ফুটন্ত গোলাপ, রায় আজ

মুক্ত ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৯ | ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ | 124 বার পঠিত

আলোচিত ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর)।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নুসরাতের কবরের ফুল ফোটার ছবিসহ ‘ফুল ফুটেছে রাফির কবরে ফেনীর আদালত থাকবে সারা দেশের মানুষের নজরে’ এমন স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে আছেন বিচারকের আদেশের দিকে। নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করবেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় প্রতীক্ষার প্রহর গুণছে নুসরাত জাহান রাফির পরিবার।

মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অধ্যক্ষের অনুসারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে জীবন দিতে হয়েছে নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী নুসরাতকে। দেশব্যাপী মানুষ নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল এই রায়ের দিনের জন্য।

সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে শুনানি ও পর্যবেক্ষণ শেষে আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রায়ের দিন নির্ধারণ করেন বিচারক মামুনুর রশিদ। বিচার কাজ শুরুর ৬১ কার্যদিবসে মামলাটি চূড়ান্ত রায়ের কার্যক্রম শেষ করা হয়।

মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির পরিবার ও বাদী পক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কাছে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস প্রত্যাশা করেছেন।

রায়ের দিনে নুসরাতের কবরে বাঁশের বেড়ায় ফুটন্ত সাদা ও লাল গোলাপের ছবি স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। রায়ের দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কবরের পাশে ফুটন্ত গোলাপের ছবি নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করে কবরে নুসরাতের জন্য জান্নাত কামনা করেছেন বহু লোকে।

নুসরাতে মা শিরীন আক্তার বলেন, তিনি হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। তবে গত কিছুদিন ধরে তারা আতঙ্কগ্রস্ত এছাড়া এ ঘটনায় দোষীদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক যাতে আর কোনো নুসরাত যেন এমন বর্বরতার শিকার না হয়।

এবং এ রায় কার্যকর পর্যন্ত বাড়িতে পুলিশি নিরাপত্তা আরো বাড়ানোর জন্যও দাবি জানান তিনি।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে নুসরাতের বাড়িতে আরও নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। এছাড়া যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার কার্যালয়ে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি যৌন হয়রানির শিকার হন। এ ঘটনায় তার মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ সিরাজকে গ্রেফতার করে জেল-হাজতে প্রেরণ করে। ঘটনায় সিরাজের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

সিরাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে নুসরাতের পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এক পর্যায়ে ৬ এপ্রিল পরীক্ষা কক্ষ থেকে ডেকে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে কেরোসিন দিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় নুসরাতের।

তার চিৎকারে মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারী ও সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে দগ্ধ নুসরাতকে নেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) প্রেরণ করেন।

ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য প্রথমে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন পরবর্তীতে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

মুক্ত ক্যাম্পাস/এইচআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবশেষে ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে সড়ক পরিবহন আইন
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ এশিয়া কাপের সময়সূচি প্রকাশ