নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস : মাউশি কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

এমসি রিপোর্ট
সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২ | ১:৩৮ অপরাহ্ণ
নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস : মাউশি কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চন্দ্র শেখর হালদার ওরফে মিল্টন নামে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক কর্মকর্তা কে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মিল্টন ৩১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। গতকাল রবিবার রাতে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার (২৫ জুলাই) তাকে আদালতে সোপর্দ করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

আজ সোমবার দুপুরে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহাদাত হোসেন সোমা।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের ১৩ মে মাউশির ৫১৩টি পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষা চলাকালে ইডেন কলেজ কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্রের উত্তরসহ চাকরিপ্রার্থী সুমন জোয়ার্দার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার প্রবেশপত্রের উল্টো পিঠে ৭০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর লেখা ছিল।

পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুমন ও সাইফুলকে একদিনের রিমান্ডে নিলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৪ মে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রভাষক রাশেদুল, মাউশির উচ্চমান সহকারী আহসান হাবীব ও অফিস সহকারী নওশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনার এক সপ্তাহ পরে সেই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে মাউশি।

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস : মাউশি কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রটি ফাঁস করেছিলেন মাউশি কর্মকর্তা মিল্টন। তিনি ওই নিয়োগ পরীক্ষার ইডেন কলেজ কেন্দ্র সমন্বয় করার দায়িত্বে ছিলেন। মাউশি কার্যালয় থেকে প্রশ্ন নিয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তিনি ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সাইফুলের কাছে প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন।

শাহাদাত হোসেন সোমা বলেন, চলতি বছরের গত ১৩ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ৫১৩টি অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক (গ্রেড-১৬) শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষায় মোট ১ লাখ ৮৩ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। মোট পরীক্ষার্থী ও পদের সংখ্যার বিবেচনায় প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে ৩৫৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। লালবাগ থানার ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্রে এমসিকিউ পরীক্ষা চলার সময়ে একজন পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের পেছনে লেখা উত্তর দেখে তাঁর উত্তরপত্র পূরণ করছিল। পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষিকা পরীক্ষার্থীর কাছে থাকা দুটি প্রবেশপত্র যাচাইকালে দেখেন যে, প্রবেশপত্রের পেছনে নিয়োগ পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের উত্তর হুবহু ছোট ছোট আকারে লেখা। প্রাথমিকভাবে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারেন যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে।
সোমা বলেন, তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনাল টিম পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে। পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের উপস্থিতিতে পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তাঁর নাম মো. সুমন জমাদ্দার (৩১) বলেন। পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পূর্বে থেকে ঠিক করে রাখা একটি মোবাইল নম্বর থেকে পরীক্ষা শুরুর ৪২ মিনিট পূর্বে তাঁর Whatsapp-এ প্রশ্নের উত্তর আসে।

গ্রেপ্তার পরীক্ষার্থী জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সোমা আরও জানান, পাঁচ থেকে ছয়জনের একটি চক্র এই প্রশ্নফাঁস, উত্তর তৈরি ও পাঠানোর কাজে জড়িত। পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে দুটি প্রবেশপত্র, একটি উত্তরপত্র, একটি প্রশ্নপত্র (ক-সেট) এবং পরীক্ষার্থীর ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন জব্দ করে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আসামিরা তাদের অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় উক্ত নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে অসংখ্য পরীক্ষার্থীর কাছে পাঠিয়েছেন।

সোমা জানান, গ্রেপ্তার পরীক্ষার্থীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক-১) হিসেবে কর্মরত আসামি চন্দ্র শেখর হালদার মিলটনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওই পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর গ্রেপ্তার হওয়া আসামি সাইফুল ইসলামের কাছে পাঠায় মর্মে মৌখিকভাবে জানা গেছে।

এ ছাড়া প্রাথমিক তদন্তে গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. আহসানুল হাদি, উচ্চমান সহকারী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং অপর গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. নওশাদুল ইসলাম, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর দ্বয়ের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। পলাতক আসামি মো. মকবুল হোসেন, ক্যাশিয়ার বদরুননেসা কলেজ এবং পলাতক আসামি আব্দুল খালেক, সরকারি তিতুমীর কলেজের বুক সেন্টারের কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলমান রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিল্টন মাউশিতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। তারা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বদলি ও এমপিওভুক্তি, পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিবেদন দেওয়াসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবহু পদের নেতৃত্বে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি
পরবর্তী নিবন্ধচবিতে ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় আরও ৪ জন বহিষ্কার