মহামারীর পর কারিগরি শিক্ষায় জোর দুই মন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ
মহামারীর পর কারিগরি শিক্ষায় জোর দুই মন্ত্রীর

করোনাভাইরাস মহামারীর পর পাঠদান আধুনিকায়ন করে কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও প্রবাসী কল্যাণ-বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ।

শুক্রবার সকালে ইয়াং বাংলা আয়োজিত ওয়েবিনার ‘লেটস টক’ এর প্রথম পর্বে শিক্ষার মাধ্যমে কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় তরুণদের দক্ষতা কীভাবে কাজে লাগানো যায় এবং কীভাবে শিক্ষার মাধ্যমে এই দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব তা নিয়ে আলোচনা হয়।

দীপু মনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ও ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট অর্জনের জন্য নজর রাখতে হবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে। সামনে ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশনের জন্য, বিগ ডেটা, ব্লক চেইনৃ. ছু ট্রান্স জেনেটিক টেকনোলজিৃ. এগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রযুক্তির টোটাল ট্রান্সফরমেশন হবে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারাটা আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ। আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল কারিগরি শিক্ষা।

তিনি জানান, ২০১০ সালে প্রণয়ন করা ন্যাশনাল পারসপেকটিভ প্ল্যান আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি শিক্ষা আইনও চূড়ান্ত করা হবে।

দীপু মনি বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষাকে পুরোপুরি ট্রান্সফর্ম করার জন্য চেষ্টা করছি। সবাই রিয়েলাইজ করছি একটা কারিকুলাম আমাদের আছে সেটাকে আমার ক্রমাগত আপডেট করতে হবে। কারণ বিশ্ব খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। কারিকুলামে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করছি।

২০২১ সালে নতুন কারিকুলামে পাঠ্যপুস্তক বিদ্যালয়গুলোতে দেওয়ার কথা থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে তা পিছিয়ে ২০২২ সালে নিয়ে যেতে হচ্ছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

কারিগরি শিক্ষার নতুন ধরনটি কেমন হবে তার ধারণা দিয়ে তিনি বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নবম দশম শ্রেণিতে অন্তত পক্ষে দুটি ট্রেড বাধ্যতামূলক সবাই শিখবে। অঞ্চল ভেদে যে ট্রেড যেখানে বেশি যৌক্তিক, তাদের পছন্দমতো তারা দুটি ট্রেড বেছে নেবেন। এটি ২০২১ এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে আমরা ৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা চালু করেছি। কারিকুলামের একদিকে নজর দিচ্ছি। কারিকুলাম সফট স্কিলস ইনকরপোরেট করার চেষ্টা করছি।

নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের জন্য বাজার অর্থনীতির দিকে নজর রাখতে হবে বলে মনে করেন দীপু মনি। তিনি বলেন, আপডেটিংটা খুব দ্রুত হতে হবে। সেজন্য মার্কেট রিসার্চ মাস্ট, আমাকে করতেই হবে। মার্কেট ডিমান্ডের কথা বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, আজকে যে কারিকুলাম আছে সেটা তো কালকে রিডানডেন্ট হয়ে যাবে। সেজন্য আমাদের কন্টিনিউওয়াজ এডুকেশন ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেজন্য মডুলার এডুকেশনের কথা আমরা বারবার বলছি। আমরা বলছি, রি স্কিলিং, আপ স্কিলিংয়ের জন্য আমাদের এই যে অনলাইন এডুকেশন, পোস্ট কোভিডের পর তা চলে যাবে না। সেটাকে আপডেট করার সুযোগ তৈরি করতে হবে।

কারিকুলাম প্রণয়ণের পাশাপাশি দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এগিয়ে যাবে বলে জানান দীপু মনি।

প্রবাসী কল্যাণ-বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ১ লাখ ২ হাজার মানুষ ফেরত এসেছেন।

তার মন্ত্রণালয় বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে আবার প্রশিক্ষিত করে বিদেশে পাঠাতে নজর রাখছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, আমি যে ফিল করি, যেখান থেকে ট্রেনিং হোক না কেন, আমরা ওদের প্রশিক্ষিত করে ওদের আবার বিদেশে পাঠাই। কারণ দেশে অত শর্ট টার্মে অত কর্মসংস্থান করতে পারছি না। যারা যারা রেডি হবে, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আমি দ্রুত দেশের বাইরে পাঠাতে চাই। যত তাড়াতাড়ি পাঠাতে পারব, সরকার এটাতে সফল হয়েছে। তবে এখানে রিসার্চের দরকার আছে কোন দেশে কি হবে না হবে… ৩০টা দেশে লেবার কনস্যুলার আছে। আমি বলেছি ওখান থেকে খবর দিতে… ওই দেশে মানুষ, কি ধরণের দক্ষতা প্রয়োজন আছে।

দেশে এখন ৬৪টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার-টিটিসি আছে। আরও ৪০টি টিটিসি ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে চালু হবে বলে আশা করছেন ইমরান আহমদ। আগামী ২ -১ সপ্তাহের মধ্যে আরও ৭১টি টিটিসির জন্য আমরা ডিপিপি সাবমিট করবে প্রবাসী কল্যাণ-বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ইমরান বলেন, প্রত্যেক উপজেলাতে একটা করে টিটিসি আমরা করব। এটা কিন্তু আমাদের প্রয়োজন আছে বিদেশ মানুষ পাঠানোর জন্য। আমাদের লক্ষ্য, আমরা প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত ১ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষিত করে বিদেশে পাঠাব।

টিটিসির কারিকুলাম প্রণয়নে মার্কেট স্টাডি করায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের যে ট্রেডগুলো চালু আছে, সেগুলো রিভাইজ করতে হবে, যে তা বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে। আমাদের যে সার্টিফিকেট আছে, তার গ্রহণযোগ্যতা যেন বিদেশেও থাকে… সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। একটা মিউচুয়াল রিকগনিশন থাকতে হবে। ওদের সার্টিফিকেট আমরা অ্যাসসেপট করলে, ওরা কেন করবে না?

বিশ্ব ব্যাংকের পলিসি প্রকিউরমেন্টের পরামর্শক মো. ফারুক হোসেইনের সঞ্চালনায় আলোচনায় যুক্ত হয়েছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, এসবিকে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সোনিয়া বশির কবির, আইএলওর জাতীয় প্রোগ্রাম অফিসার তানজিলুত তাসনুবা, বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের এজাজ আহমেদ, ইয়াং বাংলার কো-অর্ডিনেটর হাবিবুর রহমান এবং জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ইমরান মৃধা।

মুক্ত ক্যাম্পাস/রানা

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনায় আটকে আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শতাধিক পরীক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধচলে গেলেন সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী