মহানবী (সা.) কার্টুন প্রচারের নিন্দায় মুসলিম বিশ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০ | ১০:৫০ অপরাহ্ণ
মহানবী (সা.) কার্টুন প্রচারের নিন্দায় মুসলিম বিশ্ব

ফ্রান্সের একাধিক সরকারি ভবনে মহানবী (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করায় ক্ষোভে ফুঁসছে মুসলিম উম্মাহ। প্রিয় নবীকে অপমানের জেরে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল প্রতিবাদ। মুসলিম দেশ ও সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও ইসলাম ধর্মানুসারীদের প্রতি ফ্রান্সের সাম্প্রতিক আচরণের বিরুদ্ধে সবাই একসঙ্গে সরব হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ ইসলামকে সংকটাপন্ন ধর্ম বলে বর্ণনা করেন। দেশটির এমন আচরণে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে মুসলিমদের মধ্যে। কুয়েত, কাতার, মিসর, আলজেরিয়া, জর্ডান, সৌদি আরব, তুরস্ক ছাড়াও ম্যাক্রোঁর সমালোচনা করেছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যও। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে চলছে ফ্রান্স ও ম্যাক্রোঁবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা। ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক রীতিমতো ভাইরাল। অনেক দেশেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। মুখ খুলেছেন মুসলিম দেশের নেতারাও।

গত রবিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ফরাসি প্রেসিডেন্টকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন। সবধরনের ফরাসি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) নালিশ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। একইদিন ইইউ কমিশন থেকেও এরদোয়ানকে সতর্ক করা হয়েছে, তুরস্কের এ অবস্থানের জন্য দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার পথ আরও কঠিন হয়ে গেল। ইইউর একজন মুখপাত্র বলেছেন, কোনো সদস্য রাষ্ট্রের পণ্য বর্জনের আহ্বান কমিশনের চেতনার পরিপন্থি এবং এই ধরনের পদক্ষেপ তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আরও দূরে নিয়ে যাবে।

মহানবী (সা.) কার্টুন প্রচারের নিন্দায় মুসলিম বিশ্ব

কাতার এবং কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের কয়েকটি সুপারমার্কেট থেকে ফরাসী পণ্য সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এর জবাবে ফ্রান্স তুরস্কের বিরুদ্ধে পাল্টা বয়কটের ডাক দেবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফরাসী বাণিজ্যমন্ত্রী বলেস, এমন কোনো চিন্তা তাদের এখনও নেই।

এদিকে, মঙ্গলবার ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইসলামবিরোধী অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, মুসলিমদের অবমাননা করা সুবিধাবাদী বাক-স্বাধীনতার অপব্যবহারের শামিল।

নিন্দা জানাল সৌদি: এদিকে, ফ্রান্সের নিন্দা জানিয়েছে ইসলাম ধর্মের তীর্থস্থানখ্যাত সৌদি আরব। তবে বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানালেও সৌদি আরব সেবিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। দেশটি এক বিবৃতিতে বলেছে, বাক স্বাধীনতা এবং এর সংস্কৃতি শ্রদ্ধা, সহনশীলতা এবং শান্তির ভিত্তিতে হওয়া উচিত; যা ঘৃণা, সহিংসতা এবং চরমপন্থার উৎপত্তি ও সহাবস্থানবিরোধী চর্চা প্রত্যাখ্যান করে।
ম্যাক্রোঁকে মুসলিম বিশ্বের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান লিবিয়ার: বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদকে (সা.) অবমাননা করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে লিবিয়া। দেশটির জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে অবিলম্বে ম্যাক্রোঁকে বিশ্ব মুসলিমের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এর আগে লিবিয়া সরকারের সর্বোচ্চ পরিষদ ম্যাক্রোঁর ইসলাম অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে ফ্রান্সের বিভিন্ন কোম্পানিকে লিবিয়া থেকে বহিস্কারের আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে লিবিয়ায় আরও যেসব ফরাসি কোম্পানি কাজ করছে তাদের সঙ্গেও চুক্তি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে এই পরিষদ। গত ১৬ অক্টোবর প্যারিসের উপকণ্ঠে দেশটির এক স্কুল শিক্ষকের শিরশ্চেদ করে ১৮ বছর বয়সী এক কিশোর। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিতর্কিত কার্টুন শিক্ষার্থীদের প্রদর্শনের কারণে ক্ষুব্ধ ওই কিশোর স্কুল শিক্ষককে হত্যা করেন।

পরে ফ্রান্সের সরকার ওই স্কুল শিক্ষককে দেশটির সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদকে ভূষিত এবং বিভিন্ন ভবনের গায়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিতর্কিত সেই কার্টুনের প্রদর্শন শুরু করে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই কার্টুনের প্রদর্শনের ব্যবস্থার নির্দেশ দেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টের এমন ইসলাম অবমাননাকর বক্তব্যের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্ব ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। বিভিন্ন মুসলিম দেশ ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে এবং ম্যাক্রোঁকে তার ইসলাম-বিদ্বেষী বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিদেশে থাকা নাগরিকদের সতর্ক করে ফ্রান্সের বার্তা: ইসলাম ধর্ম নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের বিরূপ মন্তেব্যের পর থেকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ক্ষোভ বেড়েই চলছে। একারণে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ফরাসি নাগরিকদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে ফ্রান্স। মঙ্গলবার ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিশেষ নির্দেশনায় বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক ও মৌরিতানিয়ায় অবস্থানরত ফরাসি নাগরিকদের বাড়তি সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে। নির্দেশনায় ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফরাসি নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ভ্রমণের সময় এবং পর্যটক বা প্রবাসী সম্প্রদায়ের চলাচল বেশি এমন জায়গাগুলোতে বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে বলা হলো। তুরস্কের ফরাসি দূতাবাসও নিজ দেশের নাগরিকদের একই ধরনের সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। মঙ্গলবার ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেছেন, তুরস্ক এবং পাকিস্তানের উচিত ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল উদ্ধারের দাবিতে মাঠে নেমেছে জবি শিক্ষার্থীরা
পরবর্তী নিবন্ধক্ষমতার দম্ভে বেপরোয়া হাজী সেলিমপুত্র ইরফান