করোনা এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ

অনলাইন ডেস্ক
মঙ্গলবার, ০৭ এপ্রিল ২০২০ | ৫:৩৬ অপরাহ্ণ | 176 বার পঠিত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ

মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের কার্যকর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তাই মরণঘাতী এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিনই বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ সবার মেনে চলা উচিত।

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছেন প্রায় ৭৬ হাজার মানুষ। তবে দুই লাখ ৯৩ হাজারের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার আইইডিসিআরের সবশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সব মিলেয়ে এখন পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৪ জন। আর মারা গেছেন মোট ১৭ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৩ জন।

ফলে সবার মধ্যেই একটি আতঙ্ক বিরাজ করছে। সংক্রমণ ঠেকাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত সব কিছুই বন্ধ রয়েছে। বাড়িতেই যেহেতু থাকতে হচ্ছে, কাজেই এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তৈরি করে নিতে পারেন কাজের নতুন রুটিন।

দৈনন্দিন রুটিন

পরিবারের সবার জন্য একটি সহজ ও স্থিতিশীল রুটিন তৈরি করুন। প্রতিদিন শরীর চর্চা করুন, এটা সবাইকে চাপমুক্ত ও প্রাণবন্ত থাকতে সাহায্য করবে। রুটিনটি এমন হবে যেখানে গঠনমূলক কাজের পাশাপাশি অবসরও থাকবে। শিশু কিশোরদের জন্যও স্কুলের সময়, খেলার সময়-এমন রুটিন করে দিতে পারেন।

আপনার সন্তানের কাছে আপনি আদর্শ

সন্তানের কাছে প্রতিটি বাবা-মা আদর্শ। অথ্যাৎ বাবা-মা যা করবে সন্তানরা তাই শিখবে। করোনার জন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে সন্তানকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করানো অবশ্যই বাবা-মায়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং। এর জন্য বাবা-মাকে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে একটু বেশি। আপনি যদি পারস্পারিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুশীলন করেন, তাহলে আপনার সন্তানেরাও তাই করবে।

সন্তানকে পারস্পারিক দূরত্বের বিষয়ে শেখান

করোনা ছড়ানোর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে দূরুত্ব না মেনে চলা। পারস্পারিক দূরত্ব রাখার জন্য সবাইকে হোম কোরেনটাইনে থাকতে বলা হচ্ছে। কারণ এই করোনার একমাত্র ওষধ হচ্ছে পারস্পারিক দূরত্ব বজায় রাখা। এক্ষেত্রে সন্তানকে অন্যদের থেকে দূরত্বে রাখতে সন্তানকে নিয়ে চিঠি লিখতে পারেন, ছবি আঁকতে পারেন। এছাড়াও সন্তানদের কিভাবে নিরাপদ রাখছেন তা তাদের বুঝিয়ে বলতে পারেন।

হাত ধোয়া ও পরিচ্ছন্ন থাকা আনন্দদায়ক করুন

এই রোগের আরেকটি মহাষৌধ হচ্ছে বেশি বেশি হাত ধোয়া। এক্ষেত্রে পরিবারে থাকাবস্থায় হাত ধোয়ার জন্য ২০ সেকেন্ডের একটি গান তৈরি করে ফেলতে পারেন। মুখে হাত না দেয়াকে একটি খেলা বানিয়ে ফেলকতে পারেন। একে অন্যেরটা খেয়াল করুন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কম যে হাত দেবে তাকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করুন। দিনের শেষে অন্তত একমিনিট দিনটি নিয়ে ভাবুন। বাচ্চারা করছে এমন অন্তত একটি ভালো বা মজার কাজের কথা তাদের বলুন। নিজের ভালো কাজের জন্য নিজেকে প্রশংসা করুন।

করোনা এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ

তুলনা করুন

অনেক মা বাবাই আছেন যারা নিজের সন্তানের সাথে অন্যর সন্তানের তুলনা করেন। কোনো শিশু কোনো বিষয়ে সেরা হতে নাই পারে। এই বিষয়টি বেশি দেখা যায় পড়াশুনার ক্ষেত্রে। সর্বদা ওই না পারা শিশুটিকে নানাভাবে অবহেলা আর হেয় চোখে দেখা হয়। তার মনের মধ্যে এই ব্যাপারটি সৃষ্টি করে দেওয়া হয় যে সে কিছুই পারে না। আর তাকে দিয়ে কিছু সম্ভব না। এমনটি কখনোই করা উচিত নয়। করোনার সংক্রমণ থেকে সন্তানকে দূরে রাখতে এভাবে তুলনা করতে পারেন।

খেলাধূলা ও বিনোদনমূলক কাজ করুন

আপনার সন্তানকে সময় দিন। তাদের সাথে খেলা করুন। এই ছোট বিষয়টি আপনার এবং আপনার সন্তানের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করবে। একসাথে খেলা আপনাদের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ডিং তৈরি করবে। ফলে সব ধরনের খারাপ চিন্তা ও করোনা থেকে আপনার সন্তানকে দূরে রাখবে।

ভালোবাসা দিন

সর্বোপরি সন্তানকে বেশি বেশি ভালোবাসুন। সন্তানকে কতখানি ভালোবাসেন তা মুখে ফুটে না বলাই ভালো। তাকে আপনার কাজ দিয়ে বোঝান। কৈশোরে মা-বাবার কাছে বকা খেয়ে অনেক সন্তানই খারাপ পথে চলে যায়। তাই এসময় একমাত্র কাজ হচ্ছে ভালোবাসা। তাকে ভালোবেসে, বুঝিয়ে বলুন। এতে তার মধ্যে সচেতনতা ও পরিবারের সঙ্গে ভালোবাসা তৈরি হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া সচেতনতামূলক পরামর্শ গুলো হলো-

০১. ডব্লিউএইচওর নির্দেশনায় এই সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে বলা হয়েছে।

০২. মাংস ও ডিম অবশ্যই ভালোমত রান্না করে খেতে হবে।

০৩. হাঁচি ও কাশি হলে অবশ্যই হাত বা টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। এরপর টিস্যু ফেলে দিতে হবে এবং অবশ্যই হাত ধুতে হবে।

০৪. যে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার পর হাত ধুতে হবে। কোনো প্রাণির যতœ নিলে বা স্পর্শ করলে ও প্রাণিবর্জ্য ধরার পরও হাতে ধুতে হবে।

০৫. রান্না ও খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এতে শরীরে যে কোনো সংক্রমণ এড়াতে সহজ হয়।

০৬. ব্যবহার করা টিস্যু খোলা ঝুড়ি বা ডাস্টবিনে না ফেলে ঢাকনা রয়েছে এমন ঝুড়িতে ফেলতে হবে।

০৭. নিজে সুরক্ষিত না থেকে বা হাতে গ্লাভস না পরে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির মুখ ও দেহ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তেমনি গবাদিপশু ও বন্যপশুকে ধরার আগেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।

০৮. কাঁচা মাংস, সবজি ও রান্না করা খাবার হাতে ধরার আগে অবশ্যই প্রত্যেকবার হাত ধুয়ে নিতে হবে। কাঁচা মাংস, সবজি, রান্না করা খাবার কাটার জন্য ভিন্ন চপিং বোর্ড ও ছুরি ব্যবহার করতে হবে। অসুস্থ প্রাণীর মাংস একেবারেই খাওয়া যাবেনা। তবে রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন এলাকাতেও উপযুক্ত তাপে ও ভালোভাবে সিদ্ধ করা মাংস খেলে ঝুঁকি নেই। কাঁচা বাজারে গিয়ে কোনো প্রাণী ও প্রাণীর মাংস হাতে ধরলে দ্রুত হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। কাঁচা বাজারে অবস্থানের সময় অযথা মুখে-চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

০৯. কাজের জায়গাটি দিনে অন্তত একবার হলেও পরিষ্কার বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পরিধেয়টি অবশ্যই প্রতিদিন বদল করতে হবে এবং ধুতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে হাতে গ্লাভস ব্যবহার করা ভালো।

১০. ভ্রমণের সময় যদি জ্বর-সর্দি অনুভূত হয়, তাহলে যে কোনো ভ্রমণ বাতিল করাই ভালো। পাশাপাশি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও ওষুধ খেতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কারো সঙ্গে ঘনিষ্ট হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

১১. যদি মাস্ক ব্যবহার করা হয়, তবে নাক ও মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে। একবার মাস্ক পরলে তা বার বার স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একবার মাস্ক ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হবে। মাস্ক ধরার পর হাতে ধুয়ে নিতে হবে।

১৩. ভ্রমণের সময় অসুস্থ বোধ হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।

মুক্ত ক্যাম্পাস/এমআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদের ছুটি পর্যন্ত বন্ধ হচ্ছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
পরবর্তী নিবন্ধকরোনায় মৃতের সংখ্যা ৭৫ হাজার ছাড়িয়েছে