ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল পাস, আসামজুড়ে বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৭:৫৩ অপরাহ্ণ | 117 বার পঠিত
বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল পাস ভারতে, প্রতিবাদে আসামজুড়ে বিক্ষোভ

ভারতের লোকসভায় ২৯৩-৮২ ভোটের ব্যবধানে বহুল বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলটি উত্থাপন করেন। ৯০ মিনিট উত্তপ্ত বিতর্কের পর এটি পাস হয়। এখন বিলটিকে আইনে পরিণত করতে হলে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অনুমোদন করাতে হবে। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজ্যসভায় ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় বিলটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অন্যদিকে বিতর্কিত বিলটির প্রতিবাদে দেশটির আসামজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

এদিকে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বিলটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। লোকসভায় হৈচৈয়ের সময় বিরোধীরা এটিকে বিজেপির ‘বিভাজনের রাজনীতির’ কৌশল বলে উল্লেখ করেছেন। লোকসভায় শুরু থেকেই কংগ্রেসসহ বিরোধীরা বিলের বিপক্ষে সোচ্চার ছিলেন। এ সময় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মুসলমানদের নিশানা করছে।’ উত্তপ্ত অবস্থার মধ্যেই বিরোধীদের উদ্দেশ্যে অমিত শাহ বলেন, ‘আমি সব প্রশ্নের উত্তর দেব। কিন্তু আপনারা ওয়াকআউট করবেন না।’ বিলের বিরোধিতা করে তৃণমূল সংসদ সদস্য সৌগত রায় বলেন, ‘৩৭০ ধারা বিলোপের সময় বলা হয়েছিল এক দেশ-এক সংবিধান। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ত্রিপুরার অনেক জায়গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই বিল বিভাজনের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে, যা সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী।’ অন্যদিকে অমিত শাহ বলেন, ‘আজ আমাদের কেন বিল প্রয়োজন হচ্ছে? কারণ স্বাধীনতার পর ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ না করলে আজ আমাদের এই বিল আনতে হতো না। কংগ্রেস আসলে দেশভাগ করেছিল ধর্মের ভিত্তিতে।’ উল্লেখ্য, গত ৪ ডিসেম্বর ভারতে অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে একটি খসড়া বিলে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে শরণার্থী হওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতে এ বিলটি আনা হয়। এর আগে ২০১৬ সালে একবার পার্লামেন্টে এ বিলটি লোকসভার অনুমোদন পেলেও রাজ্যসভার অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়। তখন আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে বিলটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। লোকসভায় বিলটি তোলার পর গতকালও ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের মাধ্যমে ভারতের ৬৪ বছরের পুরাতন নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৯৫৫ সালের ওই আইনে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব পেতে হলে ভারতে থাকতে হবে ১১ বছর। তবে সংশোধিত বিলে বলা হয়েছে, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা যদি প্রমাণ করতে পারে তারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে এসেছে, তাহলে তারা পাঁচ বছরেই আবেদন করতে পারবে। বিজেপি সরকার বলছে, এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়স্থল হবে ভারত। তবে সমালোচকদের মতে, বিজেপির মুসলমান জনগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার নীতির অংশ হিসেবেই পার্লামেন্টে বিল তোলা হয়েছে।

প্রতিবাদে আসামজুড়ে বিক্ষোভ : ভারতের লোকসভায় পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে আসামে। বিক্ষোভ উত্তরপূর্বের অন্যান্য রাজ্যের ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বনধের (ধর্মঘট) ডাক দিয়েছে নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অরগানাইজেশন-এনইএসও। আন্দোলনকারীরা বলছেন, রাজ্যসভায় বিলটি পাস হয়ে গেলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুরা পাঁচ বছর থাকলেই ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। মূলত এ কারণেই প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলো। আসামের ডিব্রুগড়, জোড়হাটে বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমেছে মানুষজন। সকাল থেকেই জোরহাট, বঙ্গাইগাঁওয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সংঘাতের কথা মাথায় রেখে আসামে বাতিল করা হয়েছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা। নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস ওরগানাইজেশনের ডাকা বনধে গুয়াহাটির বহু জায়গায় দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় মানুষজনের দেখা নেই। উত্তরপূর্বের রাজ্যের বনধকে সমর্থন করছে এসএফআই, ডিওয়াইএফআইসহ একাধিক বাম ছাত্র সংগঠন।

এর আগে আসামে বনধের ডাক দেয় অল কোচ রাজবংশী স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। আজ মঙ্গলবারও সেখান বনধ চলছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আসামের লখিমপুর ও সোনিতপুর জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। চালু করা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন। পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে বহু শরণার্থী এসে বছরের পর বছর ধরে বাস করছে বলে জানিয়ে আসছে ভারত। সেই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বলে দাবি অমিত শাহের। বিল পেশের পরই বিরোধীদের আক্রমণ ঠেকাতে অমিত শাহ বলেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কারও অধিকার ছিনিয়ে নেবে না। বিলে ভেদাভেদ হচ্ছে বলে যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে এখনই এই বিল নিয়ে সংসদ ছেড়ে চলে যাব, এক শতাংশ সংখ্যালঘুবিরোধী নয় এই বিল। এই বিল পাস হলে কারও স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না। ধর্মনিরপেক্ষতা স্বীকার করে কেন্দ্রীয় সরকার।’ বিল পাস হওয়ার পর সব সংসদ সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া এই বিলের সব ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

মুক্ত ক্যাম্পাস/টিআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী পেল ফিনল্যান্ড
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগপত্র