অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ শাবিপ্রবি, হল ত্যাগের নির্দেশ

এমসি রিপোর্ট
সোমবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২২ | ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ
করোনাকালেও পিছিয়ে নেই শাবি’র উন্নয়ন কাজ

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

রবিবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এর আগে দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করতে হলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য, ১০ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১৫ জন শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।

বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল প্রভোস্ট বডির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি ও অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। রবিবার (১৬ জানুয়ারি) চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে বিকেলের পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস।

শেখ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রীহল বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ। রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

জানা গেছে, জাফরিন আহমেদ অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। সেই সঙ্গে হলটির নতুন প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শনিবার বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনের সামনে জড়ো হয়। এ সময় কোষাধ্যক্ষের সাথে শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে ৫টা ১০ মিনিটের দিকে কোষাধ্যক্ষ আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে উপাচার্যের সাথে দেখা করতে যান। কোষাধ্যক্ষ ভেতরে ঢোকার জন্য আন্দোলনকারীরা তালা খুলতে যাওয়ার মুহূর্তে পেছনের দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশের সদস্যরা। পরে পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র-ছাত্রীরা। এতে পুলিশ আন্দোলকারীদের ধাওয়া করলে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে পাল্টা ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ২৭ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে বলে জানা যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ছোড়েন পুলিশ সদস্যদের ওপর।

এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তাকিয়া গুলিবিদ্ধ হন, সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সুমাইয়া আক্তার, স্থাপত্য বিভাগের আল ইমরান, ইংরেজি বিভাগের তানহা তাহসীন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মিত্রা সংঘ, সজল কুন্ডু, বিভাগের নাম পাওয়া যায়নি এমন শিক্ষার্থী হলেন, মেহজাবিন পর্ণা, সজল কুণ্ডু, সাজেদুল ইসলাম সিজন, তাকিয়া ইসলাম, জুনায়েদ ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন, মসিউর ইসলাম, ইরফান, রায়হান আহমেদ, মুনির হোসেন তালুকদার, সেলিম এবং তমাল, সিফাত আকাশ, জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব, হুমায়ূন কবির অপূর্ব সহ আরো অনেকে আহত হন।

বর্তমানে আহত শিক্ষার্থীরা সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ, মাউন্ড এডোরা হসপিটাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক এবং অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জহিরউদ্দিন আহমেদসহ প্রায় ৫-৭ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অধ্যাপক জহিরউদ্দিনকে মাউন্ট এডোরা হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষকদের পেছনে অবস্থান নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে পুলিশ তাদেরকেও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেন। এতে ছাত্রলীগের ১০-১২ জন কর্মী আহত হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক কর্মী বলেন, পুলিশ ছাত্রলীগের এক সদস্যকে পুকুরে ফেলে দেন। পরে তাকে বেধড়ক মারধর করেন পুলিশের সদস্যরা। এ ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পরে ৫টা ৫০ মিনিটের সময় তালা ভেঙে এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনের তৃতীয় তলার ৩৩৩ নম্বর কক্ষ থেকে উপাচার্যকে উদ্ধার করে পুলিশ।

উপাচার্যকে উদ্ধারের সময় গণমাধ্যমকর্মীদেরকে সিলেট মেট্রোপুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার আজ বাহার বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর উত্তেজিত হলে আমরা তাদেরকে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিই।

এ বিষয়ে এসএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার আবদুল ওয়াব বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।

প্রিয় পাঠক, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সর্বশেষ আপডেট পেতে মুক্ত ক্যাম্পাসের ফেসবুক পেজে লাইক দিন। লিঙ্ক : https://www.facebook.com/Muktocampus

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাত কলেজে অনার্স ভর্তির মেধাতালিকা প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধশাবিপ্রবিতে হামলার প্রতিবাদে কুবিতে মানববন্ধন