মেঘনার ভয়াবহ ছোবলের আঘাতে দিনের পর দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ‘স্বপ্নের মনপুরা’। নদী মাতৃক এই বাংলাদেশের দানবীয় নদী মেঘনার কোল ঘেসে বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা ভোলার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত পর্তুগিজদের আস্তানা ঘিরে গড়ে উঠে ‘মনপুরা’ নামের ছোট্ট একটি দ্বীপ। লক্ষাধিক মানুষের বসবাস এই দ্বীপে। প্রতিটি মানুষ চোখে জ্বলন্ত স্বপ্ন নিয়ে আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে মৌসুমী জলবায়ুকে মোকাবেলা করে দিনের পর দিন কাটায়।
কিন্তু ১৯৭০ সালে এসে সব দুমড়ে মুচড়ে যায়। বাংলাদেশের তখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় বন্যা আঘাত হানে এই উপকূলে। বন্যার আঘাতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ৭১’র এর স্বাধীনতার যুদ্ধে জয় লাভ করার পর বাঙ্গালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান মেঘনার কোলে বন্দী থাকা এই মনপুরায় আগমন করেন। তিনি তার সহকর্মীদের নিয়ে মনপুরা পরিদর্শন করেন এবং পরিদর্শনের শেষে মনপুরা ত্যাগ করার পূর্বে অবহেলিত দ্বীপের মানুষের জন্য মনপুরাকে ‘বঙ্গবন্ধু শান্তি নিবাস’ করার আশ্বাস দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর মনপুরার মানুষ শান্তি নিবাস হওয়ার স্বপ্নও হারান। দিনে দিনে দানবীয় নদী মেঘনার নিষ্ঠুর ছোবলে বিলীন হয় মনপুরা।
বঙ্গবন্ধুর ‘স্বপ্ন’ আজ বিলীন হওয়ার পথে!
এই মনপুরাকে ঘিরে রয়েছে উপজেলা পরিষদ, থানা, জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট কোর্ট, স্কুল, কলেজ আর মাদ্রাসাও। সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে এ দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা। রয়েছে উচ্চ শ্রেণী, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। এই দ্বীপে এক মহান মানুষ ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম জাফরউল্লাহ্ চৌধুরী। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক পরিদর্শনের জন্য ভিড় জমায় এই দ্বীপে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৭০’র বন্যার ৫০ বছরে, বাংলাদেশের ৪৯তম বিজয়দিবস এবং জাতির পিতার জন্মশত বৎসরেও মনপুরা বাসি রাষ্ট্রীয় ভাবে কোন আশ্বাস পায়নি ‘বঙ্গবন্ধুর শান্তি নিবাস’ গড়া নিয়ে।
বর্ষার মৌসুমে যখন বাংলার দক্ষিণ আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে যায় তখন আরো নিষ্ঠুর রুপ ধারণ করে মেঘনা। ভয়ঙ্কর ছোবলের কবলে পরে বিলীন হয়ে যায় মানুষের ঘর-বাড়ি আর ফসলি জমি। স্থানীয়রা জানান, বঙ্গবন্ধুর এই জন্মশত বার্ষিকীতেও যদি এই দ্বীপকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বাধ / ব্লক’ দেওয়ার ব্যাবস্থা না করা হয় তাহলে হয়তো বাঙালি জাতির পিতার এই স্বপ্ন একদিন মেঘনা গর্বে বিলীন হয়ে যাবে।
লেখক: মোঃ তানভীর
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।
আমাদের সাথে ফেসবুক পেজে কানেক্ট থাকুন: মুক্তক্যাম্পাস
মুক্ত ক্যাম্পাস/জেডআর