আসুন প্লাস্টিক দূষণ রোধ করি

সাদিকা পাটোয়ারী:
সোমবার, ০৬ জুলাই ২০২০ | ১:২০ পূর্বাহ্ণ | 227 বার পঠিত
আসুন প্লাস্টিক দূষণ রোধ করি

প্লাস্টিক, আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি শব্দ। শুধু পরিচিত হয়েই থেমে নেই। আমরা প্রতিদিন নানা কাজে প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার করছি। কিন্তু আমরা কি একবারও প্লাস্টিক থেকে সৃষ্ট দূষণ এর কথা ভেবে দেখেছি?

প্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি হয় প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে। যখন প্লাস্টিক বর্জ্য কোনো স্থান দখল করে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে তখন প্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি হয়।

আমরা অনেকেই প্লাস্টিক দূষণ এর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা জেনেও প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার করছি। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্য নানাভাবে মিশে যাচ্ছে পরিবেশের সাথে। যার ফলস্বরুপ উর্বর মাটি হচ্ছে অনুর্বর, জলাশয় জলজ প্রাণীর জন্য হয়ে উঠছে বিপদজনক। প্লাস্টিক দূষণ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান একটি সমস্যা। বাংলাদেশ একবছরে ৮ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি করে। প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি করে যা বছরে মোট সৃষ্ট বর্জ্য এর ৮%। প্রায় ৭৩,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিদিন সমুদ্রে মিশে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীর মাধ্যমে ( দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড,০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯)। ফলে এটা ধারণা করাই যায়, প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা কতখানি জরুরি।

আসুন প্লাস্টিক দূষণ রোধ করি

জরুরি না হয় বুঝলাম কিন্তু আমাদের এটাও ভাবতে হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জের। সুবিধার অভাব, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অপর্যাপ্ত বাজেট ইত্যাদি নানা সমস্যার কথা আমাদের ভুললে চলবে কিভাবে। ২০১৮ সালের একটি সেমিনারে ইউএনডিপি এর প্রোগ্রামার বিশেষজ্ঞ, আরিফ এম ফয়সাল বলেন, প্লাস্টিকের উৎপাদন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে এবং মাটি এবং জলকে দূষিত করার সময় এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নে প্রভাব ফেলছে। এটি বাংলাদেশ সরকারের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনকে প্রভাবিত করছে (দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯)। তো আমাদের প্লাস্টিক দূষণ রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১. প্রথমত আমাদের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কারণ যদি মানুষ নিজে সচেতন না হয় তাহলে হাজার পদক্ষেপ নিয়েও লাভ হবে না।

২. প্রতিবছর প্রায় ২০ বিলিয়ন প্লাস্টিক এর পানির বোতল ফেলা হয় (এন আর ডি সি)। তাই আমাদের উচিৎ বাইরে থেকে পানি না কিনে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল বহন করা।

৩. একক ব্যবহার্য প্লাস্টিক বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ বহন করে। তাই এর ব্যবহার অবশ্যই কমাতে হবে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উপকূলীয় অঞ্চল এবং হোটেলে একক ব্যবহারের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত (দ্যা ডেইলি স্টার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২০)।

৪.রিসাইক্লিং দূষণ হ্রাস করার একটি কার্যকর প্রক্রিয়া। ২০১৮ সালের একটি বক্তব্যে বুয়েট প্রফেসর ইজাজ আহমেদ বলেছেন, প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পগুলি বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণে মুনাফা অর্জন করতে পারে কারণ এখানে খুব সহজে মানব শক্তি এবং কাঁচামাল পাওয়া যায় (দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯)।

৫.প্লাস্টিক দূষণ যেমন আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকর তেমন আমাদের এটা ভুলে গেলেও চলবে না যে প্লাস্টিক দ্রব্য আমাদের নানা কাজে লাগে। তাই কোনো প্লাস্টিক দ্রব্য তাড়াতাড়ি না ফেলে এটা একবার ভেবে দেখা উচিৎ যে এটা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে কিনা।

৬.পরিবেশ এবং সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (ইএসডিও) এর মতে পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক বর্জ্য দেশের সামগ্রিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের পাশাপাশি বিকল্প প্যাকেজিং উপকরণগুলির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

৭.আমাদের বাইরের খাবার বাসায় আনানোর ক্ষেএে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ অনেক হোটেল প্লাস্টিক এর মোড়ক ব্যবহার করে এবং আমরা অনেকেই সেগুলো যেখানে সেখানে ফেলে দিই যা দূষণ এর সৃষ্টি করে।

প্লাস্টিক দূষণ আমাদের পরিবেশের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। তাহলে ভেবে দেখি আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কেমন পরিবেশ রেখে যাচ্ছি। কষ্টকর হলেও এর বিরুদ্ধে আমাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেএে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ জনগণ সকলকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক: সাদিকা পাটোয়ারী
পরিবেশ বিজ্ঞান (২য় বর্ষ)
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

মুক্ত ক্যাম্পাস/রুবায়েত/এমআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাবলম্বী করছে ‘চলো স্বপ্ন ছুঁই’
পরবর্তী নিবন্ধমুজিববর্ষের আহ্বান, তিনটি করে গাছ লাগান