পানি প্রবাহের দিক দিয়ে পৃথিবীতে আমাজন নদীর পরই অবস্থান পদ্মার। প্রমত্তা এই নদীতে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের সাফল্য। এই সেতু রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশকে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার সঙ্গে যুক্ত করবে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা পদ্মা সেতুর যত বিশ্বরেকর্ড জানবো আজ।
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতু কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্বে রেকর্ড করেছে। নদীশাসন, পাইল ও বিয়ারিংয়ের ব্যবহারে পদ্মা সেতুর এ রেকর্ডের কথা জানা গেছে সেতু বিভাগ সূত্রে।
পাইলের গভীরতা: খরস্রোতা পদ্মার মাটির ১২০-১২৭ মিটার গভীরে গিয়ে বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুর পাইল। এর আগে পৃথিবীর অন্য কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে গিয়ে পাইল বসাতে হয়নি। যা একটি রেকর্ড।
১০ হাজার টনের বিয়ারিং: পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত ‘‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’’ এর সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। ফলে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো সক্ষমতা রয়েছে এ সেতুর।
Padma Bridge world’s 122nd longest bridge
এছাড়া, এই সেতুতে ব্যবহৃত একেকটি বিয়ারিংয়ের ওজন ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। পৃথিবীতে এর আগে কোনো সেতুতে এমন বড় বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি।
সর্ববৃহৎ ক্রেন: পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেন ব্যবহার করা হয়েছে। পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি এসেছিল চীন থেকে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। ক্রেনটি বাংলাদেশে ছিল প্রায় সাড়ে তিন বছর। এজন্য মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে প্রথম কোনো সেতু তৈরিতে এত দীর্ঘদিন ক্রেনটি ভাড়ায় থেকেছে। এই ক্রেনটির দাম দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুর যত বিশ্বরেকর্ড
ব্যবহৃত হয়েছে কংক্রিট ও স্টিল: পৃথিবীতে এই প্রথম কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিল উভয়ই ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ্বে আর কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিলের ব্যবহার একসঙ্গে দেখা যায়নি। অর্থাৎ সেতুগুলো হয় কংক্রিটে নির্মিত, নাহয় স্টিলের।
সেতু রক্ষায় নদীশাসন: পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদীতীরের ১৪ কিলোমিটার (১.৬ কিলোমিটার মাওয়া প্রান্তে ও ১২.৪ কিলোমিটার জাজিরা প্রান্তে) এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এ কাজে ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। পদ্মা সেতু প্রকল্প তিন জেলায় বিস্তৃত। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া, শরীয়তপুরের জাজিরা এবং মাদারীরপুরের শিবচর।
এসব বিষয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু বিশ্বে কয়েকটি বিষয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সেটা হলো গভীরতম পাইল হয়েছে পদ্মায়। কারণ পদ্মার মতো এত খরস্রোতা নদী পৃথিবীর বুকে নেই বললেই চলে। আমরা ভূমিকম্প মোকাবিলায় যে বিয়ারিং ব্যবহার করেছি এটা পৃতিবীতে একটা রেকর্ড। এত বড় বিয়ারিং আগে কোথাও ব্যবহার করা হয়নি। এটা প্রায় ১০ হাজার টনের কাছাকাছি। আরও একটা আছে নদীশাসন। সেতুর জন্য ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন আর কোথাও নেই। এত গভীরে আর নদীশাসনও কোথাও হয়নি।
আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করেছে সরকার। গত ১৭ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টোলের হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে পদ্মা সেতু ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে। গোটা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে এই সেতু রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
জানা-অজানা পদ্মা সেতু :
১. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম কী?
উত্তরঃ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।
২. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য কত?
উত্তরঃ ৬.১৫ কিলোমিটার।
৩. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর প্রস্থ কত?
উত্তরঃ ৭২ ফুটের চার লেনের সড়ক।
৪. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে কোথায়?
উত্তরঃ নিচ তলায়।
৫. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট কত কিলোমিটার?
উত্তরঃ ৩.১৮ কিলোমিটর।
৬. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক কত কিলোমিটার?
উত্তরঃ দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার।
৭. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন হয়েছে কত কিলোমিটার?
উত্তরঃ দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটার।
৮. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় কত?
উত্তরঃ ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
৯. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন ব্যয় কত?
উত্তরঃ ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
১০. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু প্রকল্পে জনবল কতজন?
উত্তরঃ প্রায় ৪ হাজার।
১১. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার কয়টি?
উত্তরঃ ৮১টি।
১২. প্রশ্নঃ পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা কত?
উত্তরঃ ৬০ ফুট।
১৩. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা কত?
উত্তরঃ ৩৮৩ ফুট।
১৪. প্রশ্নঃ প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং কয়টি?
উত্তরঃ ৬টি।
১৫. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা কত?
উত্তরঃ ২৬৪টি।
১৬. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুতে কী কী থাকবে?
উত্তরঃ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা।
১৭. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর ধরন কেমন?
উত্তরঃ দ্বিতলবিশিষ্ট এই সেতু কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হবে।
১৮. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা কত?
উত্তরঃ ৪২টি।
১৯. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম কী?
উত্তরঃ চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড।
২০. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু দক্ষিনের কয়টি জেলাকে যুক্ত করবে?
উত্তরঃ সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলা।
২১. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু হলে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি কত শতাংশ বাড়বে?
উত্তরঃ এই সেতু হলে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ১.২ শতাংশ বাড়বে, প্রতিবছর ০.৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হবে।
২২. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম দীর্ঘতম সেতু?
উত্তরঃ পদ্মা সেতু বিশ্বে ১২২তম সেতু।
২৩. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ কত?
উত্তরঃ চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ : জুন ১৭, ২০১৪।
২৪. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু কার্যাদেশ প্রদানের তারিখ কত?
উত্তরঃ কার্যাদেশ প্রদানের তারিখ : নভেম্বর ২৬, ২০১৪।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন :
১। পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি বসানো হয় কবে ?
উত্তরঃ ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর
২। মোট স্প্যান কতটি ?
উত্তরঃ ৪১ টি
৩। মোট পিলার কতটি ?
উত্তরঃ ৪২ টি
৪। প্রথম স্প্যানটি বসানো হয় কোথায়?
উত্তরঃ ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুটির/পিলারের উপর
৫। শেষ/৪১ তম স্প্যানটি বসানো হয় কোথায় ?
উত্তরঃ ১২ ও ১৩ নম্বর খুটির উপরে
৬। সংযোগ স্থাপন করে কতটি জেলার সাথে?
উত্তরঃ মোট ২৯ টি জেলার সাথে ,দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমের ২১ টি জেলার সাথে।
৭। ৪১ টি স্প্যান বসাতে সময় লাগে কতদিন?
উত্তরঃ ৩ বছর ২ মাস ১০ দিন।
৮। সেতুর মোট দৈর্ঘ্য কত ?
উত্তরঃ ৯.৩৩ কি.মি .(৩. ১৮ কি.মি . সংযোগ সড়কসহ)
9। শুধু সেতুটির দৈর্ঘ্য কত?
উত্তরঃ ৬ .১৫ কি.মি .
১০। ৪১ তম স্প্যান বসে কবে ?
উত্তরঃ ১০ ডিসেম্বর ২০২০
১১। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য কত ?
উত্তরঃ ১৫০ মিটার।
১২। সংযোগকারি স্থানসমূহ কি কি ?
উত্তরঃ মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এবং শরিয়তপুরের জাজিরা।
১৩। যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় কবে?
উত্তরঃ ২০২২ সালের ২৫ জুন।
পদ্মা সেতু যেসব দিক দিয়ে সেরা :
১৪। বাংলাদেশের দীর্ঘতম সড়ক সেতু-পদ্মা সেতু
১৫। এর আগে দীর্ঘতম সড়ক সেতু ছিলো-যমুনা সেতু
১৬। বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেল সেতু -হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
১৭। নদীর উপর নির্মিত বিশ্বের প্রথম দীর্ঘতম সেতু-পদ্মা সেতু
১৮। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছিলো – ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে
১৯।প্রতিটি স্প্যানের ওজন -৩২০০ টন
২০। পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হয় যে দিবসে-বিশ্ব মানবাধিকার দিবস
২১। পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প’।
২২। পদ্মা সেতুর ধরন দ্বিতলবিশিষ্ট। এই সেতু কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে (যা বিশ্বে প্রথম)।
২৩। পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় (মূল সেতুতে) ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
২৪। পদ্মা সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এর আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড।
২৫। পদ্মা সেতুতে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধা।
২৬। পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে স্প্যানের মধ্য দিয়ে।
২৭। পদ্মা সেতুর প্রস্থ হবে ৭২ ফুট, এতে থাকবে চার লেনের সড়ক। মাঝখানে রোড ডিভাইডার।
২৮। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
২৯। পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার।
৩০। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার।
৩১। পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন হয়েছে দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটার।
৩২। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় চার হাজার মানুষ।
৩৩। পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি।
৩৪। পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা রয়েছে ৬০ ফুট।
৩৫। পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট।
৩৬। পদ্মা সেতুর মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি, স্প্যান ৪১টি।
৩৭। প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং হয়েছে ৬টি। তবে মাটি জটিলতার কারণে ২২টি পিলারের পাইলিং হয়েছে ৭টি করে।
৩৮। পদ্মা সেতুর মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৮৬টি।
এছাড়া ও
মূল সেতুর নির্মাণ কাজের সমাপ্তি ঘোষণা কবে?
২২ জুন মূল সেতুর নির্মাণ কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
রেল সংযোগ
পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে স্প্যানের মধ্য দিয়ে।
দাপ্তরিক নাম
পদ্মা সেতু।
সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য
পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার।
সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ
রক্ষণাবেক্ষণ করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
প্রিয় পাঠক, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সর্বশেষ আপডেট পেতে মুক্ত ক্যাম্পাসের ফেসবুক পেজে লাইক দিন। লিঙ্ক : https://www.facebook.com/Muktocampus