নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে কলকাতা ও মুর্শিদাবাদে বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২০ | ৩:২৯ অপরাহ্ণ
নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে কলকাতা ও মুর্শিদাবাদে বিক্ষোভ

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (ক্যা) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে দেশজুড়ে উত্তাপের মধ্যে বিশেষ বিমানে ১১ জানুয়ারি বিকালে দুই দিনের সফরে কলকাতায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বিমানবন্দরে মোদিকে স্বাগত জানান পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার, রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, মুকুল রায়, অর্জুন সিং। এ সময় উপস্থিত সবাই মোদির হাতে একটি করে গোলাপি রঙের গোলাপ তুলে দেন। পরে রাজভবনে মোদিকে স্বাগত জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এরপর রাজভবনে মোদি-মমতার একান্ত বৈঠক শুরু হয়, যা চলে ২০ মিনিটের মতো। মোদি-মমতা বৈঠকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে কলকাতায় বিক্ষোভ হয়েছে । এ ছাড়া জমিয়েত উলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকেও মুর্শিদাবাদে কালাদিবস ও অবস্থান বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্যের গণশিক্ষা ও মাদ্রাসা মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। বিক্ষোভ থেকে ‘গো ব্যাক মোদি’ স্লোগান দেওয়া হয়।

এদিন বিকালে মোদিকে বহনকারী বিমান যখন কলকাতা বিমানবন্দরে নামে তখন বিমানবন্দরের এক নম্বর, আড়াই নম্বর গেটে বাম-কংগ্রেস সমর্থিত কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। ভিআইপি রোডসংলগ্ন এলাকায় মোদিবিরোধী বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বিক্ষোভকারীদের। এ সময় সেখানে যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়ায়, পরে সাময়িকভাবে ভিআইপি রোডে যান চলা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আবার মোদির হেলিকপ্টার যখন রেসকোর্সে নামে তখন দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ওপর থেকে বিক্ষোভকারীরা কালো পতাকা নাড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে রাজভবনের গোটা এলাকা কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। রাজভবনের ভিতরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল এসপিজি, বাইরে ছিল কলকাতা পুলিশ। মোদির সঙ্গে বৈঠকের পরই কলকাতার রানী রাসমণি এভিনিউতে অনুষ্ঠিত তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের একটি বিক্ষোভ রালিতে অংশ নেন মমতা। সেখান থেকে ফের একবার ক্যা ও এনআরসি ইস্যুতে সরব হন তিনি। মমতা বলেন, এর আগে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জেদ করে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেশজুড়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছে। মোদির সঙ্গে বৈঠক শেষে রাজভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মমতা জানান, প্রধানমন্ত্রী আমাদের রাজ্যে এসেছেন, তাঁকে স্বাগত জানানো সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী এলে আমি তাঁদের সঙ্গে আগেও দেখা করেছি। বিমানবন্দরে মিনিস্টার ইন ওয়েটিং হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ফিরহাদ হাকিম। আর রাজভবনে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করলাম। বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রের কাছে আমাদের রাজ্যের ২৮ হাজার কোটি রুপি পাওনা আছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে আমার প্রায় ৭ হাজার কোটি রুপি পাওনা আছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৮ হাজার রুপি। আমাদের রাজ্যের দাবি, আমাদের প্রাপ্য রুপি যেন মিটিয়ে দেওয়া হয়। তা-ই আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। মমতা আরও বলেন, দ্বিতীয় আরেকটি বিষয়ে আমি জানিয়েছি তা হলো ক্যা ও এনআরসি ইস্যু। আপনি আমার অতিথি এখানে বলা উচিত কিনা জানি না তবু বলছি আমরা ক্যা, এনআরসি ও এনপিআর এ তিনটি ইস্যুর বিরুদ্ধে। আমরা নিশ্চয়ই চাই যে মানুষে মানুষে বৈষম্য হওয়া উচিত নয়। কোনো মানুষই যাতে দেশ থেকে বাদ না যায়। কোন মানুষের ওপর যাতে কোনোরকম অত্যাচার না হয় এটা দেখার জন্য।

উ. প্রদেশেই প্রথম নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়ন শুরু : নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) বাস্তবায়নের কাজ প্রথম শুরু করেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার। ১৩ জানুয়ারি রাজ্য সরকার বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একটি তালিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ১৯ জেলায় বসবাসকারী এসব অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের, মুসলিম নেই। টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই রিপোর্টে অভিবাসীদের ব্যক্তিগত বিষয়েও বিস্তারিত বলা হয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের যেসব অভিবাসী সংশ্লিষ্ট এলাকায় বসবাস করছেন, তাদেরকে শনাক্ত করে একটি তালিকা সরকারের কাছে জমা দিতে সব জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে স¤প্রতি নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নির্দেশনার পর ডাটা সম্পন্ন করে দেখা যায়, উত্তরপ্রদেশের ১৯টি জেলা আগ্রা, রায় বেরেলি, শাহারানপুর, গোরকপুর, আলীগড়, রামপুর, মুজাফফরনগর, হাপুর, মথুরা, কানপুর, প্রতাপগড়, বারানসি, আমেথি, ঝাঁসি, বাহরাইচ, লক্ষাীপুর খেরি, লক্ষ্ণৌ, মিরাট ও পিলিভিটে অমুসলিম প্রায় ৪০ হাজার অবৈধ অভিবাসী বসবাস করছেন। এর মধ্যে শুধু পিলিভিটেই বসবাস করছেন ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার অভিবাসী। এসব ব্যক্তির অনেকের বিস্তারিত তথ্য সংবলিত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে। দিলি­র পর কলকাতা। তারপর প্রয়াগরাজ। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিলি­র শাহিনবাগে এক মাসের বেশি সময় ধরে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন মহিলারা। কলকাতার পার্ক সার্কাসেও ধর্না শুরু হয়েছে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে। এবার প্রয়াগরাজ শহরের এক পার্কেও একইভাবে ধর্নায় বসেছেন মহিলারা।

মুক্ত ক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত থাকতে এখানে ক্লিক করুন

মুক্ত ক্যাম্পাস/এমআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধগোপালগঞ্জে ইঁদুর মারা বিদ্যুতের ফাঁদে কৃষকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন রিট খারিজ