থিয়েটারে প্রমাদ তত্ত্ব

রবিবার, ০৯ জুন ২০১৯ | ১০:১০ অপরাহ্ণ | 403 বার পঠিত

আমরা জানি থিয়েটার হল এক বা একাধিক অভিনেতা বা পারফর্মার নিয়ে এক বা একাধিক দর্শকের সম্মুখে একটি নির্দিষ্ট স্থানে যে কোন ক্রিয়া করা। এই ক্রিয়া করতে গিয়ে আমাদের নানাবিধ প্রাথমিক সমস্যায় পড়তে হয়। এই যেমন নাটকের পান্ডুলিপিতে লেখা আছে এক অথচ অভিনেতা পড়ছে আরেক, এমন নয় যে সেখানে ভুল লেখা আছে কিন্তু অভিনেতা ঠিক অন্যমনস্ক হয়ে সে ভুলভাল পড়ছে। আবার মঞ্চে অভিনেতা তার সহ অভিনেতাকে যেটা বলার সেটা না বলে সে আরেকটি সংলাপ বলে দিল। এমন নয় যে সে ভুল সংলাপ বলেছে; বলেছে ঠিকই কিন্তু সেটা ভিন্ন সংলাপ। আবার সেটে হাঁটতে হাঁটতে বা মুভমেন্ট করতে করতে চেয়ারে রাখার কথা যে প্রপসটি সেটি সে ভুলে অন্য কোথাও রেখে দিয়েছে অথবা যেই প্রপসটি নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার কথা সেটি সে খুঁজেইই পাচ্ছে না। এই সকল কিছুই আসলে মানুষের মানসিক প্রতিভাস।
এমন নয় যে সে তার অসুস্থতার জন্য এই ধরনের আচরণ করেছে। এই মানসিক প্রতিভাসের সাথে অভিনেতা বা বাস্তব জীবনের মানুষের অসুস্থতার কোন সম্পর্ক নেই। কেননা সেগুলো প্রত্যেক সুস্থ মানুষের মধ্যে রয়েছে।

আমরা বাস্তবিক জীবনেও এমনটি করি এই যেমন, টেবিলে রাখা জিনিসটা অনেক সময় আমরা খুঁজে পাই না! জিনিসটা হারিয়ে গেছে এমনটি আসলে নয় কিন্তু তবুও খুঁজে পাই না! আবার ফোনের স্ক্রিনে বা বইয়ের পাতায় লেখা একটা আর পড়ছি আরেকটা! এমনটি নয় যে ভুল লেখা তা নয় লেখা সঠিক কিন্তু পড়ছি ভুল। আবার কেউ কিছু একটা বলেছে আর আমরা শুনি আরেকটা এমন নয় যে আমাদের শ্রবন শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। আসলে সেটা আমাদের শোনার ভুল থাকে। আবার দেখা যায় অনেক সময় আমরা আড্ডা দিতে দিতে হঠাৎ এমন একটি কথা বলে ফেলি যা আসলে বলতে চাইনি। বলতে চেয়েছি এক রকম অথচ বলে ফেলেছি ভিন্ন রকম। এই সকল মানসিক প্রতিভাস গুলোকে এক কথায় যদি বলি তবে এদেরকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় প্রমাদ তত্ত্ব।
এই প্রমাদ তত্ত্বকে যদি ভাগ করি তবে চার ভাগে ভাগ করব।
১) বাক্ প্রমাদ
২) লিপি প্রমাদ
৩)পঠন প্রমাদ
৩) শ্রবণ প্রমাদ
৪) স্থাপন প্রমাদ
এবার আসা যাক এদের স্বল্প বিস্তর আলোচনায়….
পারফর্মেন্সে বাক্ প্রমাদঃ পারফর্মেন্সের শুরু থেকে শেষ অবধি একজন অভিনেতার সাধারণ ধ্যান জ্ঞান থাকে একটি পান্ডুলিপি কেন্দ্রিক (যদি থাকে) অথবা পান্ডুলিপি না থাকলে একটা নির্দিষ্ট থিম বা বিষয় কেন্দ্রিক। সেখানে কি কি ধরনের সংলাপ রয়েছে অথবা তার সহভিনেতাকে কি কি বলতে হবে সেটা নিয়ে চলে দিন মাস এমনকি বছর পর্যন্ত রিহার্সেল। কিন্তু যখন মঞ্চে অভিনেতাগণ পার্ফরমেন্সের জন্য উঠে তখন একজন অভিনেতা যেটা বলার সেটা না বলে অন্য একটি সংলাপ অকষ্মাৎ দিয়ে ফেলেন। একে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় বাক্ প্রমাদ।
পারফর্মেন্সে লিপি প্রমাদ তত্ত্বঃ অনেক ক্ষেত্রে এই ভুলটি লেখার ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। নাট্যকার বা লেখক মনে মনে বলছে একটা আর লিখতে গিয়ে তা লিখছে আরেকটা। এ ভুল গুলো নাট্যকার বা অভিনেতা বা পাঠকের নজরে আসতেও পারে আবার নাও আসতে পারে। এই ধরনের ভুল গুলোকে বলা হয়ে থাকে লিপি প্রমাদ।
পারফর্মেন্সে পঠন প্রমাদ তত্ত্বঃ পারফর্মার বা অভিনেতা স্ক্রিপ্টে যা লেখা থাকে তা না পড়ে অন্য কিছু পড়ে ফেলে। অথচ সেখানে কিন্তু ভুল কিছু লেখা নেই কিন্তু সে পড়তে গিয়ে ভুল পড়েছে। এটি আমাদের বাস্তব জীবনেও হয়ে থাকে। দু এক বার ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যায় যে সঠিকটাই ভুল পড়ছে। একে বলা হয় মনোবিজ্ঞানের ভাষায় পঠন প্রমাদ তত্ত্ব।
পারফর্মেন্সে শ্রবণ প্রমাদ তত্ত্বঃ নাটকের মহড়ার ক্ষেত্রে এক অভিনেতা সংলাপ বলেছে একটা অথচ তার সহ অভিনেতা সেই সংলাপ না শুনে, শুনেছে অন্য আরেকটা। এমনটি নয় যে তার শ্রবণ রোগ রয়েছে। সে সম্পূর্ণ সুস্থ। কিংবা বাস্তব জীবনেও যখন তাকে কেউ কিছু বলছে তার জায়গায় অন্য কিছু সে শুনে থাকেন। এই ধরনের প্রতিভাসকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় শ্রবণ প্রমাদ তত্ত্ব।
পারফর্মেন্সে স্থাপন প্রমাদ তত্ত্বঃ বাস্তব জীবনে আমাদের এমন হয় যে একটা জায়গায় কিছু রেখে তা অন্য জায়গায় খুঁজি কিন্তু সেখানে তা রাখাই হয় নি। যেমন, টেবিলে একটা চাবি রেখে তা ভিন্ন জায়গায় খুঁজি। পারফর্মেন্সে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে অভিনেতা মঞ্চের সেটে মুভমেন্ট বা বসার কথা বা প্রপস রাখার কথা এক সাথে অথচ সে রেখেছে অন্য সাথে বা মুভমেন্ট করেছে অন্য পাশ দিয়ে বা যেখানে বসার কথা সেখানে না বসে অন্য কোথাও বসেছে। একে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় স্থাপন প্রমাদ তত্ত্ব বলা হয়।
অনেক সময় আমাদের পরিচিত এমন কিছু তাৎক্ষণিক মনে করতে পারি না কিন্তু তা দেখলে বা তার সম্পর্কে শুনলেই হয়ত তার নামটা মুখে চলে আসবে। কিন্তু সে মুহূর্তে সেই নামটা মনে করার শত চেষ্টা করেও পারি না এ ধরনের প্রতিভাস গুলো স্বল্প কালের ভুল। এগুলো সাধারণত একজন মানুষের নজরে আসে কম। সাধারণ ভুল থেকে এ ধরনের প্রমাদকে আমরা ভিন্ন চোখে দেখে থাকি। এই ধরনের ভুল হলে বাস্তবিক জীবনে আমরা বিরক্ত হই বা বিস্মিত হই।

লেখক : রোমানা রুমা,
সাবেক শিক্ষার্থী, নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

মুক্ত ক্যাম্পাস/জেডআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংসদ অধিবেশন উপলক্ষে ডিএমপি’র নিষেধাজ্ঞা
পরবর্তী নিবন্ধভারতের বিশাল রানের কাছে পারলো না অস্ট্রেলিয়া