ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তুরস্কের বুরসা শহর

আশিক ভূঁইয়া, বুরসা, (তুরস্ক)
বুধবার, ২১ আগস্ট ২০১৯ | ২:২৭ পূর্বাহ্ণ | 1167 বার পঠিত
ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তুরস্কের বুরসা শহর

মারমারা সাগরের দক্ষিণ-পূর্বে বুরসা শহরটি উলুদা পর্বতের নীচে অবস্থিত। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তুরস্কের বুরসা শহর একটি বিখ্যাত স্থান। শহরটি এক সময় রোমানদের অধীনে, এরপরে বাইজেন্টাইন শাসনের অধীনে আসে এবং এটি ওরহান গাজীর নেতৃত্বে ১৩২৬ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রথম রাজধানী হয়। অটোমান সাম্রাজ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভবন শহরটির ঐতিহ্য বহন করে।

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তুরস্কের বুরসা শহর“সবুজ বুরসা” নামে খ্যাত, শহরটি উদ্যান এবং পার্কে ভরা। শহরটি তীন, জয়তুন এর মত নানান রকম গুরুত্বপূর্ণ ফলের জন্য বিখ্যাত । এখানকার পীচ, সিল্ক, তোয়ালে এবং যায়নামাজের জন্য দেশ বিদেশে শহরটির বহুল পরিচিতি রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত ইসকেন্দার কাবাব, স্থানীয় রুটি, ইজগারা মাংস, গলানো মাখন এবং দইয়ের জন্যও বিখ্যাত শহরটি। তুরস্কের প্রায় সবার প্রিয় কেচতানে শেখেরি এই অঞ্চলে পাওয়া যায়।

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তুরস্কের বুরসা শহর

মনোরম দৃশ্য:

বুরসা শহরটি উলুদা পাহাড়ের জন্য দেশে বিদেশে সবার কাছে পরিচিত। এটি তুরস্কের শীতকালীন খেলাগুলির অন্যতম বৃহত্তম কেন্দ্র। এখানে বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ, থাকার ব্যবস্থা এবং বিনোদন সুবিধা রয়েছে। স্কেটিংয়ের জন্য সব ধরণের সুযোগ সুবিধাই এখানে বিদ্যমান রয়েছে। যদিও ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি স্কেটিংয়ের জন্য সেরা সময়, এবং মনোমুগ্ধকর সতেজ বাতাসের জন্য বছরের যে কোন সময় জায়গাটি ভ্রমণের উপযোগী।

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তুরস্কের বুরসা শহরবুরসা থেকে ২৫ কি.মি. দূরে একটি মনোমুগ্ধকর সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর মুদানীয়া। এখানে ঐতিহ্যবাহী ফিশ রেস্তোঁরা রয়েছে যা নগরবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয়। এখানকার যুদ্ধবিরতি যাদুঘরটিও দেখার মতো।

বুরসার অন্যান্য কিছু ছোট ছোট ইজনিখ, গেমলিকের মত শহর গুলোও ভ্রমণ পিপাসু মানুষের নজর কাড়ে।

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তুরস্কের বুরসা শহর

ঐতিহ্যবাহী স্থান ভ্রমণ:

ঐতিহ্যবাহী এই নগর শহরের সবুজ মাজার (ইয়েসিল তুর্বে) এবং তার আশেপাশের ঐতিহাসিক স্থান থেকে সফর শুরু করা যেতে পারে। যেখানে রয়েছে সুলতান মাহমুদের মাজার, রাস্তার অন্যপাশে ১৪২৪ এর ইয়েশিল মসজিদ, আমির সুলতান মসজিদ এবং ইলদিরিম বেয়াজিত মসজিদ (১৩৯১) এর মত ঐতিহাসিক নিদর্শন। পুরো জায়গাটি ঘুরার আগে, এখানকার একটি ঐতিহ্যবাহী চায়ের দোকানে চায়ের স্বাদ নিতে পারেন।

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তুরস্কের বুরসা শহর

ইয়েসিল তুর্বে তথা সবুজ মাজার এবং তার আশে পাশের এলাকার মত জুমহুরিয়াত স্কয়ার (স্থানীয়ভাবে হেইকেল নামে পরিচিত) এবং তার আশেপাশের এলাকা গুলোও ঐতিহাসিক স্থাপনায় ভরা। যেখানে আতাতুর্ক এভিনিউ এবং কোজা পার্কের মত ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়। পার্কের পিছনটাতে, কোজা হান (১৪৯০) নামে ঐতিহাসিক স্থানটি, যেটি রেশমের বস্ত্র সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত, জায়গাটি ভ্রমণ পিপাসুদের সবচেয়ে প্রিয়। এখান থেকে সরু রাস্তা দিয়ে সামনে গেলে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী গ্রেন্ড বাজার (কাপালি চারশি) দেখতে পাবেন, যেখানে সবসময় দেশী বিদেশী ক্রেতারা ভীড় জমায়।

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তুরস্কের বুরসা শহরকোজা পার্কের অপর পাশে প্রাচীনতম ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি রয়েছে ওরহান গাজী মসজিদ (১৩৩৯)।নিকটেই সেলচুক স্টাইলে নির্মিত বৃহতম মসজিদটি (উলু জামে) রয়েছে। সূক্ষ্মভাবে খোদাই করা আখরোট কাটা এবং চিত্তাকর্ষক ক্যালিগ্রাফিক প্যানেলগুলি মসজিদটিকে ভ্রমণ পিপাসুদের কেন্দ্রে পরিণর করেছে। ২০ গম্বুজের মসজিদটির অভ্যন্তরে মনোরম ঝর্ণা (অযু করার ঝর্ণা) এবং চোখ জুড়ানো কারুকার্যে ভরা।

উলু মসজিদ থেকে পশ্চিমে হেঁটে তোফহানে পৌঁছে যাবেন, যেটি বুরসার একটি পুরানো এবং মনোরম কোয়ার্টার। যেখানে রয়েছে উসমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ওসমানের মাজার এবং তাঁর পুত্র ওরহান গাজীর মাজার যিনি সেনাবাহিনীকে আদেশ করে বুরসা জয় করেছিলেন। তোফানের ক্যাফেগুলি রিফ্রেশমেন্টের জন্য অন্যতম ভাল জায়গা।

বুরসার অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানগুলি হল প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর, পুরোনো গাড়িগুলির তোফা জাদুঘর যা সম্প্রতি খোলা হয়েছে, আতাতুর্ক যাদুঘর এবং সিটি জাদুঘর। এখানকার পুরানো হাম্মাম (গোসল করার) গুলোও পরিদর্শন করতে পারেন। এছাড়া কারাগোজ ও জুমালিখিজিক এখানকার দর্শনীয় স্থান।

পরিশেষে বলা যায় বুরসার সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণ পিপাসুদের ভ্রমণের অন্যতম সেরা জায়গা হিসেবে বিবেচিত।

দেশি বিদেশি পর্যটকদের জন্যে এখানকার উন্নতমানের হোটেল গুলোর মধ্যে অন্যতম:
১. গ্রেন্ড বুরসা হোটেল
২. দোয়ালীয়া হোটেল এন্ড রেস্তরা
৩. হলিডে ইন
৪. লায়ন সিটি হোটেল
৫. এলপ্ট বুরসা হোটেল

এখানকার হোটেল গুলো প্রকৃতি এবং ইতিহাস ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে করা। অকৃত্রিম সৌন্দর্যকে অক্ষুন্ন রেখে সাজানো হয়েছে এগুলো। বাঙালি পর্যটকদের যেকোন সাহায্য সহযোগিতায় বুরসার বাংলাদেশ কমিউনিটি তথা বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সদস্যদের সাহায্য নিতে এখানে ক্লিক করুন পারেন।

লিখেছেন: ওমর ফারুক (আশিক ভূঁইয়া)
শিক্ষার্থী, উলুদা ইউনিভার্সিটি,
বুরসা, তুরস্ক।

মুক্ত ক্যাম্পাস/আশিক ভূঁইয়া/জেডআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতে পাচার হওয়া ৮ নারীকে বেনাপোলে হস্তান্তর
পরবর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনার জবানবন্দিতে ২১ আগস্টের বর্ণনা