তিতাস এখন জেলেদের দু:খ, পেশা ছাড়ছেন অনেকেই

মোঃ রাসেল আহম্মেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১২:৩০ অপরাহ্ণ | 166 বার পঠিত
তিতাস নদী এখন জেলেদের দু:খ, পেশা ছাড়ছেন অনেকেই

তিতাস এখন জেলেদের দু:খ: এক সময় মেঘনায় মাছ ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দরভাবে দিনযাপন করতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জের চর সোনারামপুরের জেলেরা। মাছধরা এখানকার জেলেদের একটি লাভজনক পেশা হলেও বর্তমানে মাছ ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে এখানকার জেলে পরিবারদের। এখন সারারাত মেঘনায় জাল ফেলেও আগের মত মাছ ধরা পড়ে না। তাই জেলেরা বাধ্য হয়ে বাপ-দাদা’র পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীতে ভরা মৌসুমে পানি আছে ঠিকই কিন্তু জেলেরা মাছে পাচ্ছেনা। আর যতটুকুই পাচ্ছে তা না পাওয়ার মত। মেঘনা নদীতে জাল বাইস করে (নদীতে মাছ ধরে) পরিবারের ভরণ পোষণ করা অনেক দেনা হয়ে পড়েছে। আগে যে পরিমান মাছ জালে ধরা পড়ত এখন তার সামান্যতম পরিমানও ধরা পড়ে না। নদীতে যে তুলনায় জেলেরা মাছ ধরে, সেই তুলনায় নদীতে মাছও নেই। এখন ও ছোট বড় সবাই নদীতে দলবেধেঁ নৌকা ও জাল দিয়ে মাছ ধরে, কিন্তু সেই তুলনায় জালে মাছ ধরা পড়ে না। সন্ধ্যা রাত থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত নদীতে জাল ফেলতেই থাকে কিন্তু আশানুরূপ মাছ জালে ধরা আটকা পড়ে না। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তেও পারি না! এভাবেই বলছিলেন আশুগঞ্জ চর সোনারমপুরের জেলে যুগল বর্মন ও নেপাল বর্মন। যুগল বর্মন আশুগঞ্জ চর সোনারামপুরে দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত বসবাস করে আসছে আর মেঘনা নদীতে মাছ ধরেছে জন্মের পর থেকেই।

তিতাস নদী এখন জেলেদের দু:খ, পেশা ছাড়ছেন অনেকেইআশুগঞ্জের মেঘনা নদীতে জেগে উঠা শ্যামল চরে প্রায় ২ শত জেলে পরিবারের বসবাস। যাদের পেশা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা। আর তারা সবাই এই মেঘনা নদীতেই মাছ ধরে। কিন্তু বর্তমানে নদীতে মাছ ধরে পরিবারের ভরণ-পোষণ তো দূরের কথা নিজের পেট চালানোই দায় হয়ে পড়ছে তাদের। তাই কেউ বাধ্য হয়ে ওর্য়াকশপ, মুদি দোকান, স্বর্ণের দোকানের কারিগর কিংবা চায়ের দোকান পরিচালনা করছে।

মঙ্গল চন্দ্র দাস মুক্ত ক্যাম্পাসকে জানান, আগে বর্ষার সময় সন্ধ্যা রাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদীতে জাল বাইস করলে (নদীতে মাছ ধরলে) নৌকার ডেরা (তলা) বোয়াল, চিতল, কাল বাউস, বামট, ফাঙ্গাস, সাইপ্লা, বাছা, গাউড়া, পুটি, বাইল্লা, টুইট্টা, মিরহা, চিতল, বামট, আরও অনেক জাতের মাছে মাছে ভরে যেত। কিন্তু এখন সারারাত নদীতে জাল বাইস করে (নদীতে মাছ ধরে) শুধু সাইপ্লা, কাজলি, বাছা আর গুইড়া ইছা ছাড়া আর কিছুই জালে ধরা পড়ে না।

মেঘনা নদীতে মাছ ধরেন যতিষ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, আমাদের এখানে মেঘনা নদীতে বর্ষা মৌসুমে এখন আর তেমন মাছ ধরা পড়ে না। সারারাত জাল বাইস করে ২-৩শত টাকার মাছ পাওয়া যায়।

মেঘনা নদীতে মাছ ধরে ভৈরবের মাছের আড়ৎতে মাছ বিক্রি করেন লিটন দাস ও লবা চন্দ্র বর্মন। তারা জানান, আগে নদীতে থেকে মাছ ধরে ভৈরবের আড়ৎতে ১ মন-২মন মাছ বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন সারারাত মাছ ধরে ৩-৪ কেজিও বিক্রি করতে পারি না।

আশুগঞ্জ বাজারে কয়েকজন মাছ বিক্রেতা বলেন, মাছ পানিতে থাকব কিভাবে। নদীতে, বিলে, হাওরে পানিতে কোন মাছ ছাড়া হয়না। আর কারেন্ট জালের কারণে ছোট থাকলে মাছ গুলো ধরা পড়ার কারণে দিনে দিনে দেশিয় জাতের মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। আমরা জেলেদের কাছ থেকে ভাল মাছ কিনতে পারি না। তাই ক্রেতাদের কাছেও ভাল মাছ বিক্রি করতে পারি না।

আশুগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রওনক জাহান মুক্ত ক্যাম্পাসকে জানান, কিছু অসাধু জেলে আছে যারা কিনা নদীতে অবাধে মাছ নিধন করে। সময় না বুঝে ডিম ওয়ালা মাছ, ও ছোট মাছ নিধন করার কারণেই নদীতে মাছ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তাছাড়া দিন দিন নদী অবাধে ভরাট করা হচ্ছে। আমরা মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় প্রতি বছরই নদীতে ও উন্মুক্ত জলাশনে মাছ বৃদ্ধির জন্য পোনা অবমুক্ত করে থাকি। অসাধু জেলেদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা করা হয়। তাছাড়া জেলেদের বিকল্প আয়ের জন্য সেলাই মেশিন দিচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাভারে স্কুলছাত্রী নীলা হত্যার প্রধান আসামী মিজান গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধসিলেটে দেশের প্রথম ‘ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর’