তারুণ্যের একুশে ভাবনা ও প্রত্যাশা

শাহীন আলম, ইবি প্রতিনিধি:
রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৫:২৮ অপরাহ্ণ | 116 বার পঠিত
তারুণ্যের একুশে ভাবনা ও প্রত্যাশা

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সেই সকল ভাষা শহীদদের যাঁদের রক্তের প্রতিটি বিন্দুকণা থেকে জন্ম নিয়েছে অ আ ক খ বাংলা বর্ণমালা। স্মরণ করিয়ে দেয় ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে রফিক, জব্বার বরকত, সালাম, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহ’র পবিত্র রক্তে রঞ্জিত ৫২’র রাজপথ। যাঁদের প্রতিটি ক্ষুদ্র কণিকা-অণুচক্রিকা আমাদের ধমনী, শিরা-উপশিরা হয়ে সত্তায় ও অস্তিত্বে নিবদ্ধ। একুশ শেখায় নব প্রাণের উত্থান, ধরণীর বুকে সগৌরবে বাংলার বাঙালি পরিচয়ে একাগ্র চিত্তে আত্মমর্যাদায় মাথা উঁচু করে বাঁচতে।

একুশ আমাদের চেতনাকে নাড়িয়ে তুলে প্রগাঢ় ভাবে। মুক্ত প্রাণের শিহরণ জাগায় কিশোর, তরুণ কিংবা পৌঢ় প্রতিটি বাঙালির মর্মমূলে। রক্তঝরা ভাষা আন্দোলনের অনুপ্রেরণা থেকে শক্তি পায় তারুণ্য। মহান ভাষা আন্দোলনের এ মাসে কী ভাবছে তারুণ্য এবং তাদের প্রত্যাশা কী? এ নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন ক্যাম্পাস সাংবাদিক শাহীন আলম।

জয়নব খানম, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট: আমরাই বিশ্বের বুকে একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এই বিরল ইতিহাস শুধুই বাঙালি জাতির। আমরা কেড়ে নিতে দেইনি আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলা ভাষাকে তাই প্রাণ দিয়ে রক্ষা করেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের মাসে তাই একটি কথাই বলব আমরা যেন সবাই পুরোপুরি বাংলা ভাষায় কথা বলি। প্রাশ্চাত্যের আদলে গুলিয়ে না ফেলি নিজের মাতৃভাষা। প্রয়োজনের তাগিদে বিদেশি বুলি আওড়ালেও যেন মাতৃভাষা কে ভুলে না যাই। বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলা ভাষাকে যেন পরম ভালবাসা ও সম্মানে আজন্ম আকড়ে রাখি।

মোঃ সাজ্জাদ আলম, গণিত বিভাগ: প্রায় ৭০ বছর পূর্বে যারা বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে দ্বিধা করেনি আজ আমরা তাদের প্রতিদান স্বরুপ কী দিচ্ছি? ২১শে ফেব্রুয়ারি যাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই অথচ তাঁদের নামই জানি না! মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে চলে বিদেশি সংস্কৃতির নাচ গানের মহড়া। ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে দুটি লাইন বলতে গেলেও সম্পূর্ণ কথাটি বাংলায় বলতে পারি না। তাই তরুণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটাই চাওয়া যেন হৃদয়ের মর্মমূল থেকে মাতৃভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি এবং শুদ্ধভাবে বাংলা চর্চা করি।

ফারহানা নওশিন তিতলি, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ: বাঙালি জাতির জন্য একুশ মানেই আত্মত্যাগের অহংকার ও জেগে ওঠার প্রেরণা। একুশ আমাদের জন্য যেমন একবুক ভরা বিষাদ আবার অহংকার। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মূল ভিত্তি ছিলো ৫২’র ভাষা আন্দোলন। কিন্তু প্রাণের বিনিময়ে যে ভাষা অর্জন করতে হয়েছে সেই ভাষার যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছেনা। বর্তমানে আমরা আধুনিকতার নামে শিকড়কে অগ্রাহ্য করছি। এতে আমাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সাবলীল ব্যবহারের মধ্যদিয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সদিচ্ছা আর সচেতনতাই পারে বাঙালির এই গৌরবের বাংলা ভাষাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকিয়ে রাখতে।

মেহেদী হাসান আরিফ, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ: মাতৃভাষা বলতেই আমরা যেখানে বাংলা বুঝি সেখানে ইংরেজি, আরবি হিন্দিসহ বিভিন্ন ভাষার ব্যাপক প্রচলনের কারণে আজ আমার মায়ের মুখের ভাষাটা যেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। ভাষাসৈনিকেরা যে চেতনা বুকে ধারণ করে ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগ করেছিল তার কতটুকু বাস্তবায়ণ হয়েছে সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন জাতির কাছে থেকে যায়। তাই মায়ের মুখের ভাষার যথাযথ ব্যবহারের জন্য বাংলাকে আমাদের চেতনায় ধারণ করতে এবং ভালোবাসতে হবে। তার জন্য বাংলা ভাষার সর্বত্র ব্যবহারের আইনবিধি করার কোনো বিকল্প হতে পারে না।

শিহাব আহমেদ, চারুকলা বিভাগ: ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও ত্যাগের ইতিহাস অজানা নয়। ইদানীং বাংলার সাথে বিদেশি ভাষার ব্যবহার হচ্ছে খুব। রেডিও, টেলিভিশন, সামাজিক মাধ্যম ও আলোচনায় বাংলা ভাষার দূষণীয় ব্যবহার বেড়েই চলেছে। তরুণ প্রজন্ম আধুনিকতার নামে ব্যবহার করছে অনেক উদ্ভট শব্দ। নিজস্ব সংস্কৃতির বিকৃতিকে আধুনিকতা বলা যায় কি-না আমার জানা নেই। ভাষার অংশ হওয়া সত্ত্বেও যেখানে সাধু ও চলিত রূপ একসাথে ব্যবহৃত হয় না সেখানে ভিন্ন ভাষা যোগ করা কতটা যৌক্তিক? তাই আশা রাখি, যে উদ্দেশ্যে ৫২’র ভাষা আন্দোলন হয়েছিল তা যেন অক্ষুন্ন থাকে এবং সরকার ও বাংলা একাডেমি এবিষয়ে তাদের বিচক্ষণতার পরিচয় দিবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঙালি জাতিসত্তার অনন্যতা তুলে ধরে একুশে ফেব্রুয়ারি : ইডিইউ উপাচার্য
পরবর্তী নিবন্ধসুদানে বাংলাদেশ ফর্মড পুলিশের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ