টাইমের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ গ্রেটা থানবার্গ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১:৩৪ অপরাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘টাইম’ ম্যাগাজিন সুইডেনের স্কুলছাত্রী ও পরিবেশকর্মী গ্রেটা থানবার্গকে ২০১৯ সালের ‘পারসন অফ দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত করেছে।

‘টাইম’ ম্যাগাজিন সম্পাদক এডওয়ার্ড ফেলসেন্থাল জানান, নতুন প্রজন্ম নেতৃত্ব দিলে পৃথিবীটা কেমন দেখায় সেটা সকলকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য এবছর গ্রেটাকে নির্বাচন করা হয়েছে।

টাইম ম্যাগাজিনের এবারের মলাট লেখা রয়েছে ‘তারুণ্যের শক্তি’। সেখান‌ে গ্রেটা থানবার্গকে দেখা যাচ্ছে পর্তুগালের লিসবনে সৈকতে।

‘টাইম’-কে কিশোরী গ্রেটা বলেন, ‘আমরা এভাবে বেঁচে থাকতে পারি না যে, আগামীকাল বলে কিছু নেই। কেননা আগামীকাল রয়েছে। এটাই আমরা বলছি।’

ধরিত্রীকে রক্ষায় স্কুল বাদ দিয়ে জলবায়ু আন্দোলনে শামিল হওয়া সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ বর্তমান বিশ্বে এক আলোচিত নাম।
১৬ বছর বয়সী থানবার্গ ইতোমধ্যে তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর সাবলিল বাচনভঙ্গির জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে। ‘বিশ্ব জলবায়ু সঙ্কট’ থেকে এই পৃথিবীকে বাঁচাতে বিশ্বনেতাদের দ্রুত উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়ে আসছে এই কিশোরী।

টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে, জলবায়ু সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আরো ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ২০১৮ সালের অগাস্টে স্কুল বাদ দিয়ে সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে একাকী অবস্থান নিয়ে যে আন্দোলনের সূচনা শুরু করেছিল এই কিশোরী, এক বছরের মধ্যে তা একটি বৈশ্বিক আন্দোলনের রূপ পেয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী ও প্রভাবশালী পরিবেশকর্মীদের একজন গ্রেটা। ১৫ বছর বয়সে ক্লাস বাতিল করে সুইডিশ পার্লামেন্টের বাইরে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে সে। সুইডিশ ভাষায় একটি ব্যানারে ‘জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট’ লিখে বিক্ষোভে নামে কিশোরী। এরপর থেকে অল্প সময়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তার বিক্ষোভের খবর। দেশে দেশে তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। ক্লাস বাতিল করে নিজ সরকারের প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন থামাতে পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নামে তারা। তাদের ওই বিক্ষোভ ‘ভবিষ্যতের জন্য শুক্রবার’ আন্দোলন হিসেবে পরিচিত পায়।

গ্রেটার সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হচ্ছে তার খোলাখুলি ও সাবলীল বক্তব্য। বিশ্ব নেতাদের নজর কাড়তে বাধ্য হয়েছিল তার বক্তব্যের ভাষা। এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ, মার্কিন কংগ্রেসসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার নানা আয়োজনে উচ্চ-পর্যায়ের নেতাদের সামনে দেয়া তার বক্তব্য বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

অল্প বয়সে গ্রেটার ‘এসপারজার সিনড্রোম’ ধরা পড়ে। এই সিনড্রোমের কিছু সুবিধা আছে। যেমন, এ সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের ভাষার বিকাশ সময়মতো হয়, বুদ্ধিমত্তা গড়পড়তা শিশুদের তুলনায় বেশি হয়, শৃঙ্খলা বজার রাখতে সবসময় তৎপর থাকে। গ্রেটা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রথম জানে ৮ বছর বয়সে। এরপর থেকেই বৈশ্বিক এই সমস্যাটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে শিশু গ্রেটা। এমনকি বিষণ্ণতাও দেখা দেয় তার মধ্যে। গত বছর মার্কিন গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে সে জানায়, ‘আমার জন্য ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত ঠেকতো। মানুষ, একটি প্রাণী প্রজাতী। এই প্রজাতি পৃথিবীর জলবায়ু পাল্টে দিতে সক্ষম।’
গত ১৬ মাসে সে জাতিসংঘে গিয়ে বিশ্বনেতাদের সামনে দাঁড়িয়ে নতুন প্রজন্মের দাবির কথা জানিয়ে এসেছে; দেখা করেছে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে।

জলবায়ু সঙ্কট নিয়ে রাষ্ট্রনায়কদের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে থানবার্গ বাহাসে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। এই কিশোরীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বরে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে যোগ দিয়েছে সারা বিশ্বের ৪০ লাখ তরুণ, যাকে জলবায়ু আন্দোলনে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি বলা হচ্ছে।

কানাডার লেখক মার্গারেট অ্যাটউড এই কিশোরীকে তুলনা করেছেন ফরাসি বীরকন্যা জোয়ান অব আর্কের সঙ্গে। কলিনস ডিকশনারি চলতি বছরের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হিসেবে বেছে নিয়েছে থানবার্গের ভাবনাপ্রসূত ‘ক্লাইমেট স্ট্রাইক’ শব্দটিকে।

আসছে জানুয়ারিতে ১৭ বছরে পা দিতে যাওয়া গ্রেটা থানবার্গ তার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে পরিপূর্ণ উদ্যমে। বুধবার মাদ্রিদে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে সে বলেছে, জলবায়ু আন্দোলনের আহ্বান বিশ্ব শুনেছে, অথচ রাজনীতিবিদরা এখনও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী টাইম প্রতি বছরের শেষে আলোচিত ব্যক্তিত্ব নির্বাচন করে, যাকে তারা বলে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’। পেশাগত কাজ করতে গিয়ে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন, এমন একদল সাংবাদিককে ২০১৮ সালের আলোচিত ব্যক্তিত্ব ঘোষণা করেছিল টাইম।

এবারের ‘পারসন অব দ্য ইয়ারের’ মনোনয়নের তালিকায় আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির নামও ছিল।

গ্রেটা থানবার্গকে ওই খেতাবে ভূষিত করায় টাইম ম্যাগাজিনের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট পরিবেশবাদী আন্দোলনের নেতা আল গোর বলেছেন, ‘এটা দারুণ একটি সিদ্ধান্ত’।

“জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় এখনই উদ্যোগী হওয়ার দাবি তুলে তরুণ পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে গ্রেটা। আমার মত সারা বিশ্বের মানুষের জন্য সে এক অনুপ্রেরণার নাম।”

এ বছর মার্কিন কংগ্রেসে আইনপ্রণেতদের উদ্দেশেও বক্তব্য রেখেছিল গ্রেটা। বক্তব্য দেয়ার জন্য একটি লিখিত প্রতিলিপি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু গ্রেটা ওই প্রতিলিপি পড়ে বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। এর বদলে সে জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিল। মার্কিন আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেছিল, ‘ আমি চাই না, আপনারা আমার কথা শুনুন। আমি চাই, আপনারা বিজ্ঞানীদের কথা শুনুন। বিজ্ঞানের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হন।’

চলতি বছর গ্রেটা ও আরো ১৫ তরুণ জলবায়ুকর্মী জাতিসংঘের শিশু অধিকার কনভেনশনের আওতায় পাঁচ দেশের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ দায়ের করে। দেশগুলো হচ্ছে- ব্রাজিল, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ও তুরস্ক। এ দেশগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনের উৎস। গ্রেটা ও অন্যান্যরা অভিযোগ করে, এই পাঁচ দেশ জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
তার কাজের জন্য চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিল গ্রেটা। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী মনোনয়নপ্রাপ্তদের একজন সে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে প্রায় ৬০ জন বিশ্ব নেতার উপস্থিতিতে আবেগঘন ও উত্তেজিত কণ্ঠে বক্তব্য রাখেন ১৬ বছর বয়সী কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য বিশ্ব নেতাদের তীব্র ভাষায় নিন্দা করেন তিনি।

মুক্ত ক্যাম্পাস/এমআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গাদের এনআইডি দেয়ার অভিযোগে ইসির ২ কর্মচারি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধব্রাক্ষণবাড়িয়ায় টিকেটসহ কালোবাজারি আটক, ৬ মাসের কারাদণ্ড