বিশেষায়িত ডিগ্রীধারীদের জেনারেল ক্যাডারে আগ্রহ ও কিছু কথা

মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক
বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট ২০২০ | ১:১০ পূর্বাহ্ণ | 102 বার পঠিত
বিশেষায়িত ডিগ্রীধারীদের জেনারেল ক্যাডারে আগ্রহ ও কিছু কথা

সম্প্রতি ৩৮ তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে সাধারণ ভাবেই দেখা যাচ্ছে মেডিক্যাল, প্রকৌশল বা কৃষি এ ধরণের বিশেষায়িত ডিগ্রীধারীরা জেনারেল ক্যাডারের পররাষ্ট্র, প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডারের পদগুলোতে বড় অংশ জায়গা করে নিয়েছে। এ প্রবণতা ৩৫ তম বিসিএস থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে।

এটা নিয়ে শিক্ষিত সমাজে রয়েছে নানাধরণের প্রতিক্রিয়া। কারো মতে অপেক্ষাকৃত বেশি মেধাবীরা জেনারেল ক্যাডারে আসলে প্রশাসনে মেধাবী কর্মকর্তা বাড়বে সেই সাথে দুর্নীতি কমে যাবে ও আমলাতন্ত্রে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। আবার বিপরীতে কেউ কেউ বলছেন বিশেষায়িত ডিগ্রীধারীদের জন্য সরকারের খরচ বেশি৷ এরা যদি তাদের স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে না থাকে তাহলে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা আসবে। তাতে রাষ্ট্রের এ গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অদূর ভবিষ্যতে সেটা কিন্তু বড় ভাবার বিষয়। কিন্তু আসল কথা হল এ বিশেষায়িত ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীরা কেন জেনারেল ক্যাডারে আসতে চাচ্ছেন?

এ প্রশ্নের বড় উত্তর হল আন্তঃক্যাডার বৈষম্য। একই সাথে, একই গ্রেডে প্রত্যেকটা বিসিএস ক্যাডার যোগদান করলেও একেকটা ক্যাডারের সম্মান, কতৃত্ব, ক্ষমতা প্রদর্শনে ভূমিকা ও সুযোগ সুবিধা ভিন্ন রয়েছে। প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা চাকরির কয়েক বছরের মধ্যেই গাড়ি সুবিধা পেয়ে থাকে অথচ অন্যান্য ক্যাডারে তারচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গাড়ি পান না বা তার সমান গ্রেডে পান না পদোন্নতি। কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে শিকার হন লাঞ্চনার। সামাজিক মর্যাদায় পিছিয়েও পড়ে এ বৈষম্যের কারণে। দীর্ঘদিন চলা এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারে কাজের আগ্রহ হারাচ্ছে বিশেষায়িত ডিগ্রীধারীরা। আর এ প্রবণতা কমানোর বড় উপায় হল ক্যাডার বৈষম্য দূর করা। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সাথে পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা সমান করা।

বিশেষায়িত ডিগ্রীধারীদের জেনারেল ক্যাডারে আগ্রহ ও কিছু কথা

কিন্তু শাসকগোষ্ঠীরা প্রশাসন, পুলিশ ক্যাডারের মতো গুটিকয়েক ক্যাডারের পছন্দমতো কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রেখে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করলে হয়তো সরকারের এতো বড় সংখ্যক কর্মকর্তাদের তাদের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে৷ এজন্যই ক্যাডার বৈষম্য নিরসনে নেই কোন পদক্ষেপ। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে স্বাস্থ্য, প্রকৌশল বা কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর ভঙ্গুর অবস্থা দেখতে হবে৷

আর একটা বিষয় হল বর্তমান সাম্প্রতিক বিসিএসগুলোতে কলা ও বাণিজ্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা অপেক্ষাকৃত বেশি সফল। এর একটা বড় কারণ হল লিখিত সিলেবাসে গাণিতিক যুক্তির ৫০ এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তির ১০০ নম্বর। গাণিতিক যুক্তির ৫০ নম্বরে বেশিরভাগ অধ্যায় সংযোজিত হয়েছে উচ্চতর গণিত ও উচ্চ মাধ্যমিক গণিত থেকে। যেটা নন বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য অপেক্ষাকৃত কঠিন। অনুরূপ বিজ্ঞান প্রযুক্তির কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স অংশের ৩০ নম্বরের বেশির ভাগ অধ্যায় উচ্চতর লেভেলের৷ তাই গাণিতিক যুক্তির ৫০ নম্বর ও বিজ্ঞান প্রযুক্তির ১০০ নম্বরের সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরণ মডারেশনের দাবি রাখে। না হলে বিজ্ঞান অনুষদের বাইরের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়া দিন দিন বাড়তেই থাকবে।

মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক
কলাম লেখক ও সাবেক শিক্ষার্থী,
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইলঃ[email protected]

মুক্ত ক্যাম্পাস/এসপি

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাত মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধশুরু হচ্ছে পাসপোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম