জবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের নেপথ্যে যা জানা গেল

জবি প্রতিনিধি:
শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২ | ১০:২০ অপরাহ্ণ
জবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের নেপথ্যে যা জানা গেল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হয়েছে ছয় মাস। এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার কমিটি স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এর পেছনে কোন কারণ উল্লেখ না করলেও কমিটি স্থগিতের নেপথ্যে অনেক কিছু বেরিয়ে এসেছে। এর পেছনে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছাত্রলীগ নেত্রীকে কু প্রস্তাব, কমিটির পদধারী নেতাকর্মীদের কোনঠাসা করে রাখা সহ অনেক কারণ সামনে এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির পরে বিশ্ববদ্যালয়ের মসজিদের দ্বিতীয় তলা টিন সেড বিল্ডিং, ডরমেটরি ভবন মেরামত, মনোবিজ্ঞান ভবনের ছাদ মেরামতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের সংস্কার, ইলেকট্রনিক্স পণ্য ক্রয়, ল্যাবরেটরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা, ক্যালেন্ডার ডায়েরী তৈরির প্রায় দেড় কোটি টাকার টেন্ডার হয়। সব কয়টি টেন্ডার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও এস এম আকতার হোসেনের নির্দেশিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়। এসব টেন্ডারের বাজেট থেকে ১৫ শতাংশ এ দুই ছাত্র নেতার পকেটে ঢুকত।

জবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের নেপথ্যে যা জানা গেল

তবে শীর্ষ এ দুই নেতার পুরনো ঢাকার ক্যাম্পাসের টেন্ডারবাজি ছাপিয়ে আলোচনায় কেরাণীগঞ্জের নতুন ক্যাম্পাসের টেন্ডার। নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণে সীমানা প্রাচীরের ৩৩ কোটি ও মাস্টারপ্লানের ৫ কোটি টাকার টেন্ডার পায় সরকারের স্থানীয় এক প্রতিমন্ত্রী আর উপজেলা চেয়ারম্যানের পছন্দের কোম্পানী কিংডম বিল্ডার্স আর আরবানা লিমিটেড। কিন্তু শাখা ছাত্রলীগের ফরাজি-আকতার কমিটির পরে নতুন ক্যাম্পাসের ২৭ কোটি টাকায় লেক নির্মাণ ও ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্লানিং দপ্তরের ৬২ কোটি টাকার টেন্ডারে বাগড়া দেন এ শীর্ষ নেতারা। এ ঘটনায় স্থানীয় এ প্রতিমন্ত্রী শাখা ছাত্রলীগের প্রতি মনক্ষুন্ন হন।

এদিকে লেক নির্মাণে মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মীর কাশেম আলীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউআরএডিএল জেবি নামের কোম্পানী টেন্ডার পায়। আর ভবন নির্মাণে বিএনপির এক নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ন্যাশনাল ডিপ্লোপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারস নামের কোম্পানী টেন্ডার জমা দেয়। জানা যায়, ভবন নির্মাণে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানেই টেন্ডারে অংশ নেয়। এখন যাচাই বাচাই চলছে।

শাখা ছাত্রলীগ নেত্রীকে কুপ্রস্তাব

এদিকে কমিটি স্থগিতের পর পরই শাখা ছাত্রলীগের নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া আক্তার প্রিয়ন্তি সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে নানান সময়ে কুপ্রস্তাব ও আবদার মেটাতে চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

জবি ছাত্রলীগের এই নারী যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া আক্তার প্রিয়ন্তি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পর থেকে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতারের রাজনীতি করি। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে আকতারের চরিত্র বদলে যায়। নানান সময়ে সে আমাকে তার নানান চাহিদা ও আবদার পূরণ করতে কুপ্রস্তাব দেয়। তার জন্য কুপ্রস্তাবের কারণেই আমি রাজনীতির মাঠ থেকে সরে আসতে বাধ্য হই। আকতার বিভিন্ন সময় বলত তার কথা না শুনলে ছাত্রী হলের কমিটিতেও কেউ পদ পাবে না!

এ নেত্রী জানান, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমন কি অনুসারী মেয়েদেরকেও বলে দিয়েছেন আমাকে কেউ সালাম দিলে পদ পাবে না। জগন্নাথের একমাত্র ছাত্রী হলে ৩০০ এর অধিক ছাত্রলীগের মেয়েরা উঠলেও আমাকে উঠতে দেয় নি আকতার। পরবর্তীতে আমার ছোট বোনদের একদিন দেখতে গেলে আকতার হলের প্রভোস্টকে ফোন দিয়ে আমাকে হল থেকে বের হতে বাধ্য করে। এদিকে আজকে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে আকতার আমাকে ফোন দিয়ে হুমকি দিচ্ছে।

জবি ছাত্রলীগের একাধিক পদধারী নেতা জানান, বর্তমান কমিটির সভাপতি ইব্রাহীম ফিরাজী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন কমিটি হওয়ার পরই ক্যাম্পাসে টেন্ডারবাজী সহ আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি শুরু করেন। এছাড়াও বর্তমান কমিটির পদধারী নেতাদেরকে কোনঠাসা করে রাখতে জুনিয়রদের সামনে অপমান অপদস্ত করতে থাকেন। সভাপতি সম্পাদক ক্যাম্পাসে আসলে ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তর আর প্রশাসনিক দপ্তরে যাওয়া আসা ছাড়া আর কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনা।

এদিকে গত রবিবার ওয়ারীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়িচালককে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠে। সোমবার সন্ধ্যায় ওয়ারী থানায় কয়েকজনকে অজ্ঞাত করে মামলা করেন ভুক্তভোগী চালক নজরুল ইসলাম।

এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে কয়েকটি গুরুতর অভিযোগে কমিটি স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

তারা বলেন, ‘ইব্রাহীম ও আকতারকে সভাপতি-সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পুরান ঢাকায় লুকিয়ে তারা বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করেছে। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সিসিটিভির ফুটেজ তো সবার কাছেই আছে।

ফুটেজে দেখা যায়, জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতির কর্মী সাইদুল ইসলাম সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের কর্মী মো. মাসুদ রানা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঢুকেছেন।

জবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাত সাঈদ বলেন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চাঁদাবাজির পর তাকে এ প্রতিষ্ঠান থেকে তার চাঁদাবাজির অভিযোগে মালিক ফোন দেয়। কিন্তু পরে সিসিটিভি ফুটেজে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী সাঈদুল ইসলাম সাঈদ মাসুদ রানার চাঁদাবাজির করতে দেখা যায়। এ নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে বিচার দিলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

গত ১১ মার্চ নবীন শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ দলে ভিড়ানোকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। মালিটোলা পার্ক, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও টিএসসি এলাকার এ ঘটনায় প্রায় ১০ জন আহত হয়।

প্রিয় পাঠক, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সর্বশেষ আপডেট পেতে মুক্ত ক্যাম্পাসের ফেসবুক পেজে লাইক দিন। লিঙ্ক : https://www.facebook.com/Muktocampus

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন সময়সীমা বাড়তে পারে
পরবর্তী নিবন্ধঢাবি গ ইউনিটের ফলাফল ২০২২, পাস ১৪.৩০ শতাংশ