চবিতে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

চবি প্রতিনিধি:
শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১০:৫৮ অপরাহ্ণ | 137 বার পঠিত
চবিতে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

মহান ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উৎযাপিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)।আজ শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

এদিন, সকাল সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিরো পয়েন্ট থেকে কালো ব্যাজ ধারণ করে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের নেতৃত্বে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ এর সাথে শুরু হয় প্রভাত ফেরি। সকাল ৮.৪৫ টায় চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ করেন চবি উপাচার্য।পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এর সভাপতিত্বে সকাল ৯.৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় ‘ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা সভা।

সভায় উপাচার্য মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গকারী ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একইসাথে নত চিত্তে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দানকারী ত্রিশ লক্ষ বীর শহীদদের এবং নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যাদের।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি তার ভাষা-সংস্কৃতি আর পরিচয়ের উপলব্ধিতে যে নবজাগরণের সূচনা করেছিল এরই ধারাবাহিকতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৫২ সালে বীর বাঙালিরা প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমে শুধু মাতৃভাষা বাংলাকেই প্রতিষ্ঠা করেছিল তাই নয়; বিশ্ব জনগোষ্ঠীর নিজ নিজ মাতৃভাষাকে অধিষ্ঠিত করেছে মর্যাদার আসনে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে। তাই এই দিনটি বাঙালিদের জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহংকারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর। মাতৃভাষার সুরক্ষা, বিকাশ এবং অনুশীলন ছাড়া কোন জাতি অগ্রসর হতে পারে না। মাতৃভাষা বাংলাকে সঠিকভাবে হৃদয়ে ধারণ-লালন ও চর্চার মাধ্যমে সর্বস্তরে বাংলাভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করে বিশ্ব দরবারে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলেই ভাষা শহীদদের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন পূর্ণতা পাবে বলে উপাচার্য অভিমত ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) দিবাকর বড়ুয়া। অনুষ্ঠান শুরুতে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থসমূহপাঠ করা হয়। এ ছাড়াও আলোচনা সভার শুরুতে চবি সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সূচিত হয়। অনুষ্ঠানে ভাষা শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর এস এম সালামত উল্যা ভূইয়া, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী, সিনেট সদস্য অধ্যাপক এ বি এম আবু নোমান, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. মহীবুল আজিজ, শহীদ আবদুর রব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ কে এম মাঈনুল হক মিয়াজী, সংগীত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সুকান্ত ভট্টাচার্য, অফিসার সমিতির সভাপতি রশীদুল হায়দার জাবেদ, চবি ক্লাব (ক্যাম্পাস ও শহর)-এর পক্ষে ক্লাব (ক্যাম্পাস)-এর সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-আমীন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, চবি’র সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ-উন-নবী, চবি কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবদুল হাই।

সকালে চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পন করে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন চবি শিক্ষক সমিতি, অনুষদসমূহের ডিনবৃন্দ, হলসমূহের প্রভোস্টবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, প্রক্টর, চবি অফিসার সমিতি, চবি ক্লাব (ক্যাম্পাস ও শহর), চবি মহিলা সংসদ, সমন্বয় কর্মকর্তা বিএনসিসি, চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, চবি কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়ন, সাংবাদিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

কর্মসূচির শুরুর আগে ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। চবি প্রশাসনিক ভবন ও হলসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

মুক্ত ক্যাম্পাস/তামিম/এমজে

পূর্ববর্তী নিবন্ধইবি বই মেলায় ইস্তাম্বুল ফাউন্ডেশন
পরবর্তী নিবন্ধভাষা শহীদদের প্রতি ইউনিস্যাবের শ্রদ্ধাঞ্জলি